ধর্মের নামে রাজনীতি: এক জাতির সম্ভাব্য ধ্বংসযাত্রা
ধর্ম মানবজাতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। কিন্তু ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যখন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো হয়, তখন তা জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এবং রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেনের মত দেশের করুণ পরিণতি আমাদের সামনে স্পষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশ আজ সেই একই আত্মঘাতী পথে পা ফেলেছে। ধর্মব্যবসায়ী ও উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপ ও প্রভাবের কাছে নতজানু হয়ে একটি প্রজন্মকে পরিকল্পিতভাবে বিপথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বারবার সতর্ক করেছিল অনুমোদনহীন মাদ্রাসা, ধর্মীয় শিক্ষার নামে উগ্রবাদী চিন্তা ঢোকানো এবং রাষ্ট্রবিরোধী আদর্শে শিক্ষার্থীদের তৈরি করাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবু রাজনৈতিক আপস ও ধর্মভিত্তিক ভোটব্যাংকের লোভে কেউ এই সতর্কতা মানেনি।
ফলে দেশের আনাচে কানাচে, পাড়া-মহল্লায়, এমনকি শহরের কেন্দ্রস্থলেও গড়ে উঠেছে অসংখ্য মাদ্রাসা, যেগুলোর বেশিরভাগই কোন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই চলছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে এক নতুন প্রজন্ম, যাদের মধ্যে জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত, সংবিধান এমনকি বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়েও সন্দেহ-সংশয় তৈরি করা হয়েছে। তারা আজ শেখ হাসিনার সরকারকে সরিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে, এবং দেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক ভয়াবহ অন্ধকারে।
বুদ্ধিজীবী, নাট্যকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক কেউ আর নিরাপদ নয়। সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরাও আজ প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জননিরাপত্তা, আইনের শাসন এবং সাংবিধানিক কাঠামো আজ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মুখে। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া, মিথ্যা রটানো, গুজব ছড়ানো, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হত্যা সবকিছু এখন "ধর্মের নামে" বৈধ হয়ে গেছে।
এখন কী করণীয়?
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কিছু তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ প্রয়োজন:
১. ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা: সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ধারাগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
২.শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার: জাতীয় কারিকুলামকে একমাত্র বৈধ শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সব অননুমোদিত মাদ্রাসা বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা থাকতে পারে, কিন্তু তা হতে হবে মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৩.আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর উপর রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করে, বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর করতে হবে।
৪. সুশীল সমাজের সক্রিয়তা: লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীদের রক্ষা করে তাদের আওয়াজকে রাষ্ট্রের দিকনির্দেশনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. আন্তর্জাতিক সহায়তা ও চাপ: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের এই সংকট নিয়ে জোরালো অবস্থান নেওয়া উচিত।
ধর্ম মানুষের আত্মিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র চালানোর জন্য নয়। একটি আধুনিক রাষ্ট্রকে পরিচালিত হতে হবে যুক্তিবাদ, মানবিকতা এবং বিজ্ঞানের ভিত্তিতে। বাংলাদেশ যদি এই সত্য বুঝতে না পারে, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে আফগানিস্তান কিংবা ইয়েমেনের মতো ধ্বংস, গৃহযুদ্ধ আর হতাশায় নিমজ্জিত।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



