একজন প্রতিবাদ করার লোক নেই?
ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মিডফোর্ড হাসপাতাল যেখানে প্রতিদিন হাজারো রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, স্বজনরা উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করে। এমন একটি জায়গায়, দিনের আলো ফোটার কিছু পরেই, শত শত মানুষের সামনেই ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য একজন মানুষকে ঠান্ডা মাথায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার মাথায় পাথর মারছে একের পর এক মানুষ, মুখ থেতলে দিচ্ছে, রক্তে রঞ্জিত মৃতদেহটিকে পায়ে ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপরও খুনিরা ক্ষান্ত হয়নি লাশের উপর দাঁড়িয়ে পাজর ভেঙে দিচ্ছে।
আর আশেপাশে?
মানুষ দেখছে। দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে কেউ কেউ হাঁটছে। কেউ কিছু বলছে না। কেউ বাধা দিচ্ছে না। ভিডিও করছে, ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে, কিন্তু একটা মানুষও এই নিষ্ঠুরতা থামাতে এগিয়ে আসছে না।
আমরা কি সত্যিই মানুষ?
এই খুনিকে চেনা যাচ্ছে ভিডিও ফুটেজে। এই খুনির নাম, রাজনৈতিক পরিচয় পর্যন্ত এখন গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, এদের অনেকেই স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে জড়িত।
রাজনীতি যখন পৃষ্ঠপোষক হয় অপরাধের
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক পরিচয় মানেই যেন অপরাধের লাইসেন্স। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, খুন, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, জমি দখল, মাদক সবকিছুর পেছনেই রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের নাম।
এই মিডফোর্ড হত্যাকাণ্ডও এর ব্যতিক্রম নয়।
পুলিশ ঘটনা দেখেছে, ভিডিও ফাঁস হয়েছে, সবাই জানে কারা করেছে। কিন্তু এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। হয়নি কোনো প্রেস কনফারেন্স। উল্টো চেষ্টা হচ্ছে নিহত ব্যক্তিকে 'অপরাধী' হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়ে ঘটনাটিকে 'জাস্টিফাই' করার। যেন তাকে মেরে ফেলাই উচিত ছিল।
সমাজের মনন ও মানবিকতার মৃত্যু
একজন মানুষ চোখের সামনে খুন হয়ে যাচ্ছে, আর আমরা হাঁটছি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছি, ভিডিও করছি এটাই কি আমাদের স্বাভাবিকতা হয়ে গেছে?
আমরা হাজার মাইল দূরের ফিলিস্তিন, সুদান, ইরাকের জন্য কাঁদি, পতাকা ওড়াই, মিছিল করি। অথচ আমাদের বাড়ির পাশেই কেউ খুন হলে আমরা নিরব থাকি। কেন?
কারণ আমরা ভয় পাই।
কারণ আমরা জানি এই খুনিরা ‘কেউ একজন’ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে বিপদ হবে। কারণ আমরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি সহিংসতায়, হত্যা আমাদের কাছে ডাল-ভাত হয়ে গেছে।
একটি প্রশ্ন রয়ে যায় এই সমাজ যাবে কোথায়?
যে দেশে বিচার হয় না, খুনিকে খুনি বলা যায় না, কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না সেই দেশ কি সভ্য সমাজ? এই ঘটনার বিচার না হলে, যদি খুনিরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায়, তবে শুধু মিডফোর্ড নয় আগামীতে খুন হবে রাস্তার মোড়ে, মার্কেটে, স্কুলে, মসজিদের সামনে।
এখনই যদি আমরা না জাগি, না প্রশ্ন করি, না প্রতিবাদ করি তবে আমাদের সন্তানরাই একদিন প্রশ্ন করবে, "বাবা, খুন যখন তোমার সামনে হয়েছিল, তুমি কি করেছিলে?"
--- সালাউদ্দিন রাব্বী
মানবাধিকার কর্মী

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



