মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
--------------------------------------------------
রেমিটেন্স এই দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের সংকটে প্রবাসীরা বারবার হাত বাড়িয়েছেন, পরিবারের জন্য, দেশের জন্য, অর্থনীতির জন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই প্রবাসীদের আবেগকে বারবার রাজনীতির খেলা বানানো হয়েছে, বিভ্রান্তির ফাঁদ পাতা হয়েছে।
বিগত সরকারের সময়ে প্রবাসীদের জন্য ২.৫% ভর্তুকি ছিল, যা তাদের আয়কে সরাসরি সুরক্ষা দিত। অথচ সেই সুবিধাকে উপেক্ষা করে যাদের উস্কানিতে ‘রেমিটেন্স শাটডাউন’ নামের দেশবিরোধী ডাক দেওয়া হয়েছিল, তার মূল ক্ষতি হয়েছে প্রবাসীদেরই। তাদের বলা হয়েছিল, নতুন সরকার ক্ষমতার আসলে নাকি ৫% ভর্তুকি দেওয়া হবে! বাস্তবতা? আজ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতির ছায়াও দেখা যায়নি।
এখানেই প্রশ্ন: প্রবাসীদের আশা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কার আছে?
নতুন সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কিছু ব্যক্তির কথাবার্তা, বিশেষ করে আসিফ নজরুলের মতো প্রচারণা, বহু প্রবাসীকেই ভুল পথে ঠেলে দিয়েছে। তার বক্তব্য ও লাইভে যে ‘স্বপ্নের অর্থনীতি’ দেখানো হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ছিল। ফলে এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাংকিং চ্যানেল সর্বত্র প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত হতাশা, হয়রানি ও বাস্তবতার কঠিন চপেটাঘাত অনুভব করছেন।
অনেকেই আজ আক্ষেপ করছেন “আমরা ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছিলাম।” সত্যিই, বিভ্রান্তির মূল্য একবার সাধারণ মানুষকে দিতে হয়; যারা বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা কখনো দায় নেয় না।
প্রবাসীরা রাষ্ট্রের সম্পদ, রাজনৈতিক পরীক্ষার গিনিপিক নয়। তাদের ঘামঝরা অর্থ দিয়ে দেশ টিকে থাকে, অথচ তাদের আবেগকে ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি খেলা করা হয়। যারা মিথ্যা আশ্বাসে প্রবাসীদের ভুল পথে ঠেলে দিয়েছে, তারা দেশের প্রতি নয় নিজের স্বার্থের প্রতিই দায়বদ্ধ।
এখনই সময়,
প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ হোক। স্বচ্ছ নীতি হোক, স্থিতিশীল ভর্তুকি হোক, এবং রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
প্রবাসী সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আরও দৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করা জরুরি। প্রবাসীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন দুর্ঘটনা, পঙ্গুত্ব, এমনকি মৃত্যুও তাদের বাস্তবতা। কিন্তু আজ প্রবাসীরা বাংলাদেশি এম্বাসি বা দূতাবাসে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট রিনিউ হচ্ছেনা, নতুন পাসপোর্ট ইস্যু হচ্ছেনা। বিদেশে কর্মীরা প্রতিনিয়ত প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন ঠিক মতো বেতন পাচ্ছেন না, কাজ, খাবার, চিকিৎসা বা বাসস্থান পাচ্ছেন না; কোম্পানি গুলো তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অথচ কেউ এগিয়ে আসছে না।
তবুও প্রবাসীর রেমিটেন্সে দিয়েই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল আছে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রবাসীরা এককভাবে দেশের অর্থনৈতিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিৎ করা হয়নি।
আমরা স্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি।
১. বিদেশে কোনো প্রবাসী মারা গেলে ন্যূনতম ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ।
২. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব হলে আঘাত অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা সহায়তা।
৩. বিদেশে মারা গেলে মরদেহ সম্পূর্ণ সরকারি খরচে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক।
৪. প্রবাসীদের প্রতি বিদেশে অব্যবস্থাপনা, প্রতারণা ও হয়রানি রোধের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারণ প্রবাসীরা শুধু অর্থ পাঠান না; তারা পাঠান দেশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস। তাদের জীবন ও মৃত্যুর মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অনুগ্রহ নয়, বরং জাতীয় কর্তব্য। এটাই দেশের নৈতিক, মানবিক এবং আর্থিক দায়িত্ব।
-- সালাউদ্দিন রাব্বী
সংখ্যালঘু বাচাও আন্দোলন।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



