somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্ট

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের মাথার খুলি ভাঙ্গতে প্রায় ৫০০ পাউন্ড শক্তির প্রয়োজন হয়। কিন্তু মানুষের মন ভাঙ্গা তার থেকেও জটিল জিনিস।

সুসির কথাই ধরা যাক। আমার প্রথম সত্যিকারের গার্লফ্রেন্ড। আমার প্রথম সত্যিকারের ব্রেক-আপ, সেদিন ঠিক আমার সামনে হচ্ছিল। আমি কখনোই ভাবিনি যে এটা অনেকটা কার এক্সিডেন্টের মত হবে। আবেগের স্রোতে পড়ে আমি ব্রেক চাপার চেষ্টা করলাম আর পিছলে গেলাম। আর আমার হৃদয়ের সব পার্টস ভেঙ্গেচুরে যেতে দেখলাম।

আচ্ছা সব কিছুই কি আমার দোষ ছিল?

আমার নাম সুমন। সুমন চৌধুরী।

সময়টা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। সব স্মৃতি গুলো যেন একসাথে মাথায় এসে ভর করা শুরু করল। যে ২ বছর আমরা একসাথে কাটিয়েছি। যে প্রতিজ্ঞাগুলি আমরা করেছি, যে স্বপ্ন সাজিয়েছি। ছুটির দিনগুলোয় কাটানো সময়গুলো কিংবা রিক্সায় করে ঘুরে বেড়ানো। সব কিছু আমাকে প্রচন্ড রকমের হতাশায় ফেলে দিল।

এটা আমার ফাইনাল ইয়ার ছিল আর্ট কলেজে। আর ব্রেক-আপ এর এক সপ্তাহ পরে আমি যখন আমার মনের অলিগলিতে খুজেফিরে আবিস্কার করলাম নিতান্তই তুচ্ছ কারনে আমাদের ব্রেক-আপ হয়েছে আমি অবাক হয়ে সুসিকে আরেক জনের সাথে ক্যাফেতে খুজে পেলাম।

একদিন সে ছিল আমার সাথে। আমাক 'ভালবাসি' বলত। আর পরের সপ্তাহে সে ছিল অন্য কারো সাথে। হয়তবা একি কথা বলছিল।

তাহলে সে কি সত্যি আমাকে ভালবাসত? ভালবাসাটাই বা কি?
এটা কি সত্যি এভাবে বয়ে যায়?

'শালাআ!! তুই আসলেই একটা বেহায়া। ভুইল্যা যা ওর কথা। কির লাগি ওর পিছে টাইম নষ্ট করস? যে কিনা তোরে আরেক পোলার লাগি ছাইড়া গেসে?'

আমার কলেজের বেস্টফ্রেন্ড রকির দিকে তাকালাম। হারামিটা আমার কেনা সামুচা মুখে পুরে দিয়ে কেলাচ্ছে।

-হেতি তো আমারে ছাইড়া দেয় নাই।

তাইলে সে তোর সাথে নাই ক্যান?

-আসলে আমগো মিলতেছিল না। হেতি যেমন বয়ফ্রেন্ড চায় আমি সিরাম হইতে পারি না। আমি আনস্মার্ট, ক্ষ্যাত। আসলে আমি ওরে হ্যাপি রাখতে পারি নাই। বাদ দে তো ভাল্লাগেনা।

শালা তুই আরেকডা প্রেম কর। সুন্দরী কোন মডেল মাইয়্যা দেইখা লাইন লাগা।

-ক্যান!?

কারন তুই যখন আরেকডা সুন্দরীরে পাশে লইয়া হাটবি তখন তোর দাম বাইড়া যাইবো। মাইয়্যারা বুঝলি সব সময় নিজেগো মধ্যে প্রতিযোগীতা করে। দেখ, সুসি যখন তোরে আরেকটা সুন্দরীর লগে দেখবো, জ্বইল্যা মরব। জ্বইল্যা পুইড়া তর কাছে ফাল দিয়া আইবো।

জনি কলেজে দুইটা কাজের জন্য খুব বিখ্যাত। কলেজের এমন কোন মেয়ে নাই যাকে সে প্রপোজ করেনি। আর এমন কোন মেয়ে নাই যার হাতে সে থাপ্পড় খায় নি। কখনো কখনো বোনাস হিসাবে দুই চারটা জুতা পেটাও সে অনায়াসে হজম করেছে। আমি প্রেমগুরু জনিকে আপাতত আরো কয়েকটা সামুচা হজম করার সুযোগ দিয়ে চলে এলাম।

আমার মনে হচ্ছিল আমি একটা ভুতুড়ে সময় পার করছি। যেন ভুতেরা আমার চারপাশে অট্টহাস্যে আমারি ব্যার্থতার গান গাইছিল। আমি চোঁখ বুজলেই তার হাসিমাখা মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম। সুসির গলার স্বরের রেশ যেন আমার কানে লেগে ছিল। ঠিক যেন এক মুহুর্ত আগেও সে ছিল আমার পাশে।

সেই রাতে আমি তাকে ফোন করলাম।

-হ্যালো?

হ্যালো কে?

-আমি। সুমন।

সুমন! কি হয়েছে!? এত রাতে? আমি ঘুমুচ্ছিলাম।

-আমি সরি।

আমিও সরি সুমন।

-আচ্ছা সুসি আমাদের সম্পর্কটা কি ঠিক হওয়ার কোন চান্স আছে?

আমার তা মনে হয় না সুমন। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

-আচ্ছা ছেলেটা কি তোমার হাত ধরে?

হ্যা।

-আর..সে কি...?

প্লিজ সুমন! আমি এইসব নিয়ে তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না। রাখছি সুমন। আমি সরি। ভালো থেকো।

-সুসি?
-হ্যালো?
-হ্যালো!

সুসিকে অন্য কারো সাথে এটা ভাবতেই আমার মনে হতে লাগল কে যেন আমার ঘর থেকে সব অক্সিজেন শুশে নিয়েছে। আমি ডাঙ্গায় তোলা মাছের মত ছটপট করতে লাগলাম। গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে গেলে কষ্ট হয় কিন্তু তাকে আরেক ছেলের সাথে দেখলে বুক ভেঙ্গে যায়।

আমি সুসির সব স্মৃতি মুছে ফেলতে চাইলাম। ওর দেয়া গিফট ওর সাথে তোলা ছবি সব কিছু আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে চাইলাম। আমি পারলাম না। আমি ঘুমাতে চেষ্টা করলাম। এবং হঠাৎ করেই আবিস্কার করলাম আমি ঘুমাতে পারছি না। কিছুতেই না। আমি সব রকম চেষ্টা করলাম। ঘুমের অসূধ খেলাম, যোগ ব্যায়াম করলাম, প্রচুর পরিশ্রম ও করলাম। যতই আমি ঘুমাতে চেষ্টা করলাম আমি ব্যার্থ হলাম। আমি কোনভাবেই ঘুম আনতে পারলাম না।
আমি হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম আমার হাতে অতিরিক্ত আট ঘন্টা আছে। আমার জীবনের একতৃতীয়াংশ সময় বেড়ে গেল।

আমি চাইলাম সময় দ্রুত পার করতে। কিন্তু সময় কিছুতেই পার হতে চাইল না। আমি সময়ের প্রতিটা মহুর্ত দেখতে বাধ্য হলাম।
আমি চাইলাম আমার কষ্ট দূর হয়ে যাক। কিন্তু প্রকৃতির নির্মম খেয়ালে আমি আমি অতিরিক্ত সময় পেয়ে গেলাম সুসিকে নিয়ে ভাববার জন্য।

আমি বাসে উঠে পড়তাম কোন গন্তব্য ছাড়াই। আমি সন্ধ্যার ডুবে যাওয়া সূর্য দেখতাম আমাকে আরেকটা নির্ঘুম রাত উপহার দেওয়ার আগে।

আমি সেই সব বইগুলো পড়া শুরু করলাম যেগুলো আমি সময় পেলে পড়ব বলে ভেবে রেখেছিলাম। এমনকি অতিরিক্ত সময় পেয়ে প্রিয়গুলো দুই তিনবার করে পড়ে ফেললাম। আমি মুভি দেখলাম। গান শুনলাম। ঘুরে বেড়ালাম। কিন্তু কখনো এক মুহুর্তের জন্য আমি সুসিকে ভুলে থাকতে পারলাম না।

তারপর একদিন কাওকে কাঁদতে দেখলাম। একটা মেয়ে। কলেজের মেয়েরা মাঝে মাঝেই কাঁদে। আগে তাদের নিয়ে আমরা মজা করতাম। গসিপ করতাম। কে কয়টা ছ্যাকা খেল সেটা চায়ের আড্ডায় খুব জমে যেত। আমি এগিয়ে গেলাম। না সান্তনা দেওয়ার জন্য নয়। আমি জানি কতটা কষ্টে চোঁখে পানি আসে।

অনেক অনেক দিন আগে আমি জানতে চেয়েছিলাম ভালবাসা আসলে কি? আমি খুজে পেলাম ভালবাসা আছে যদি তুমি ভালবাসতে চাও। ভালবাসা মোড়ানো থাকে খুব সুন্দর একটা মুহুর্তের মধ্যে। লুকানো থাকে জীবনের একটা সেকেন্ডের কাঁটায়। তুমি যদি সেই মুহুর্তের জন্য না থাম, তুমি এটা হারিয়ে ফেলবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×