somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসি ক্রিকেট

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মতি মিয়ার চরম মেজাজ খারাপ। মেজাজ খারাপ হলে তার মুখে থুতু জমা হয়। থুতু ফেলা যাচ্ছে না। নিজের দোকানের সামনে থুতু ফেললে কাস্টমারের কমতি হয়। মতি মিয়ার বাপ যখন এই চায়ের দোকান চালাতো তখন বলত, "বুঝলা বাপজান, কখনো দোকানের সামনে ছ্যাপ ফালাইবা না। দোকানের সামনে ছ্যাপ ফালাইনা অশুভ। কাস্টমার কমতি হয়।"

মতির বাপ যখন মারা যায় তখন মতিকে ডেকে বলেছিল, "বাপজান, তুমারে আমি কিছু দিয়া যাইতে পারলাম না, শুধু আমার চায়ের দোকানটা তুমারে দিলাম, একদিন তুমি এই চায়ের দোকান অনেক বড় করবা, দ্যাশ বিদেশের মানুষ তুমার দোকানে চা খাইতে আইবো।"

মতি মিয়া কোন উন্নতি করতে পারে নাই। তার চায়ের দোকান আগের চেয়েও নড়বড়ে হয়েছে। অথচ সেইদিনের সেই বাচ্চ আবুল এইতো সেদিন রাস্তার ওপাশে চায়ের দোকান তুলে দিল। দুইটা বেঞ্চি আর টিনের ঘুপচি ঘর। মাস ঘুরতে না ঘুরতেই কিভাবে যেন পাকা দালান তুলে ফেলল। তারপর এইতো সেদিন কালার টিভিও দোকানে বসিয়ে দিল। এখন সেখানে দিনরাত ভিসিডিতে হিন্দি সিনেমা চলে।

আগে যাও বা মতি মিয়ার চায়ের দোকানে বিকালে আড্ডাটা জমত। পাশের ভার্সিটির ছেলেরা রাজনীতির উত্তপ্ত ঝগড়া করত। আবুলের টিভিতে হিন্দি সিনেমা আসার পর থেকে মতি মিয়ার দোকান বলতে গেলে ফাকা।

মতি মিয়া আর সহ্য করতে পারে না। একদলা থুতু আবুলের দোকানের দিকে পিক করে ফেলে। ফেলে তৃপ্তি পায়। সদ্য ফেনা ওঠা দুধ দিয়ে এককাপ চা বানায়। চিনি দেয়। কষে নেড়ে মুখে দিয়ে তৃপ্তির শব্দ করে। মনে মনে বলে, "শালার চা আমি ই খামু, তোরা সব যাগা আবুল্ল্যার দোকানে। গিয়ে হিন্দি মাগির নাচ দ্যাখ। সব শালা নাফারমানের দল। "

সন্ধ্যা মিলিয়েছে অনেক্ষন হল। রাত ও বাড়ছে। অথচ আবুলের দোকানের কাস্টমার যেন বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে দোকান ভরে যায়। এই সব দেখে মতি মিয়ার থুতু ফেলাও বেড়ে যায়। মনে মনে হিন্দি সিনেমা, ইন্ডিয়াকে কষে গালি দেয়।

আবুলের দোকানে খুব হৈচৈ হচ্ছে। মতি মিয়া কান পাতে। বোধহয় কোন ঝামেলা বেধেছে। "বাধলে বাধুক তার কি?" মনে মনে বলে তার দোকানের একমাত্র কাস্টমার কুলসুমের বাপের দিকে তাকায়। তাকিয়ে খেকিয়ে ওঠে, "হারামজাদা জলদি চা খাইয়া বিদায় হ, পত্যেকদিন তরে ফ্রিতে চা খিলাইতে পারুম না। "

কুলসুমের বাপ মিনমিন করে বলে, "এমুন কর ক্যান মতি মিয়া, তুমার দুকানে তো কেউ আসে না। আর আমি কি কইছি টাকা দিমু না? সব লিখ্যা রাখ। এইবার ধান মাড়াই দিয়াই তুমার টাকা আগে শোধ দিমু।"

মতি মিয়া উসখুস করে। কুলসুমের বাপের সাথে আলাপ ভাল লাগে না। আবুলের দোকানের হৈচৈ এখন ঝগড়া পর্যায়ে গিয়েছে। মতি মিয়া চায়ের কাপ হাতে নিয়েই আলতো পায়ে ঘটনা দেখতে যায়।

ঘটনা যা ঘটেছে ভয়াবহ অবস্থা। একজন লোক নাকে হাত দিয়ে বসে আছে। তার আশেপাশে জনা পাঁচেক লোক। লোকটার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। অপরদিকে একটা ছেলেকে চার পাঁচ জন মিলে ধরে রেখেছে। তার পরও সে ছটপট করে লোকটাকে মারতে যাচ্ছে।

মতি মিয়ার মন মিজাজ তিক্ত হয়ে গেল। পাড়ার চায়ের দোকানে গ্যাঞ্জাম মানে দোকানের বিক্রি বেশি। আজ গ্যাঞ্জাম হবে কাল মানুষ এসে গ্যাঞ্জামের গল্প শুনবে। গল্পের লতা পাতা হবে। ডালপালা গজাবে। শুধু মুখে তো গজাবে না। সাথে চা টা বিস্কিট টা খাবে। মতি মিয়া আবারো পিক করে একদলা থুতু ফেলে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে, "মামা ঘটনা কি?"

ঘটনা জটিল কিছু না। আবুলের টিভিতে খেলা হচ্ছে। ক্রিকেট খেলা। বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া ভাল খেলছে। বাংলাদেশ হারছে হারছে অবস্থা। এমন সময় নাক ফাটা লোক এসে ইন্ডিয়ার সাপর্ট নিয়েছে। নিয়েছে ভাল কথা। নিয়ে বাংলাদেশের খেলার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা শুরু করেছে। সদ্য ভার্সিটি পড়া তরুণের তা সহ্য হয় নি। দুম করে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে।

খেলা আবার শুরু হতেই আশেপাশে ফাটা নাকওয়ালাটাকে কোথাও দেখা যায় না। ছেলেরা চার ছক্কা হতেই হৈ হৈ করছে। বাংলাদেশ ঘুরে দাড়িয়েছে। হারবে না জিতবে বোঝা যাচ্ছে না। চারিদিক শুনশান টেনশন, কি হয় কি হয়। কেউ বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে। ছেলেরা চাপা গলায় খেলার অবস্থা আলোচনা করে। মতি মিয়া যে কখন খেলা দেখা শুরু করে দিয়েছে নিজেই বুঝতে পারে না।

তার মনে হয় আবুল্ল্যা মানুষটা খারাপ না। টিভি এনেছে বলেই না দেশের এমন খেলাটা মানুষ দেখতে পাচ্ছে। মতি মিয়ার এখন মেজাজ খারাপ নাই। তার মনের মধ্যে কেমন কেমন গর্ব হয়। দেশের জন্য গর্ব। দেশের খেলোয়ার দের জন্য গর্ব। কত শত মানুষই না খেলা দেখছে।

হঠাৎ করেই মতি মিয়া বলে ওঠে, "ওরে আবুল্ল্যা একটা দুধ চা দে তো, চিনি বেশি কৈরা দিস।"

আবুল মতি মিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকায়। তার পর মুচকি হেসে চায়ে চিনি মেশায়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×