একটা স্মৃতি কিছুতেই খুজে পাচ্ছি না। স্মৃতির ফোল্ডার আছে। ফোল্ডারের ভিতরে ফাইল নাই। এমটি ফোল্ডার।
মাথার ভিতর এমটি ফোল্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগছে না। মন খারাপ হচ্ছে। মন খারাপ কাটানি দিতে আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশেরও মন খারাপ। আকাশের মন খারাপ হলে পেটও খারাপ হয়। চারিদিকে বাতাস দেয়। গুড়গুড় করে মেঘ ডাকে।
আমি বাতাস খেতে খেতে মাঠে হাটাহাটি শুরু করলাম। হাটতে হাটতে আকাশ দেখছি। উত্তর, দক্ষিন, পশ্চিম দেখা শেষ করে পুব দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। পুব আকাশে জুড়ে বিশাল এক রংধনু।
আমি জানতাম রংধনুর সাত রং থাকে। লাল নীল সবুজ তিন রং স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাকি রং মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। ছোট বেলায় রংধনুর সাত রং মনে রাখতে পারতাম না। একদিন মা এসে বললেন পড়, বেনী-আসহ-কলা। আমার সব রং মুখস্ত হয়ে গেল।
আমি আকাশে বেনী-আসহ-কলার বাকি চার রং খুজছি এমন সময় মাঠের কিছু দূরে বসা তিন তরুনীর খিলখিল হাসি শুনলাম। হাসি শুনে মনে হল বিধাতা আজ রংধনুতে শুধু তিন রং দিয়েছেন। বাকি সব রং হাস্যময়ী তরুনীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
হঠাৎ করেই চারিদিক আলো করে বিদ্যুৎ চমকে উঠল। বিদ্যুতের আলো দেখে দুই তরুনী ভয়ে কানে হাত চাপা দিয়েছে। তৃতীয় জন বোধহয় অতি সাহসী। সে কান চাপা দেয় নাই। মিটিমিটি হাসি নিয়ে বাকিদের দেখছে। সে বোধহয় জানে, যত গর্জে তত বর্ষে না।
আমিও জানি। শব্দ তেমন হল না। চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে কানে হাত চাপা দিয়ে বসে থাকা তরুনীদ্বয় কান খুলে ফেলেছে। কানের সাথে সাথে বোধহয় মন ও খুলে ফেলেছে। আবার খিলখিল হাসি শুরু হয়েছে।
তাদের হাসি দেখে আমিও ফিক করে হেসে ফেললাম। ফিক হাসির সাথে সাথে স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল।
সেদিনো খুব মেঘ করেছিল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হতেই রিয়া ছটপট করে বলল, চল বৃষ্টিতে ভিজি। আমি সাফ মানা করে দিলাম। মানা করতেই রিয়া ছুট দিল বৃষ্টির মাঝে। আমি দৌড়ে গেলাম রিয়াকে ফিরিয়ে আনতে। ফেরাতে পারলাম না। রিয়ার সামনে যেতেই সে দুই হাত দিয়ে আমার মাথা বৃষ্টির ছাঁট থেকে আড়াল করার চেষ্টা করতে লাগল। আমার শুধু মনে হল, এই মেয়েটা আমাকে অসম্ভব ভালবাসে। এই অসম্ভব ভালবাসার যোগ্য আমি নই।
আমি অর্ক। আমার মন খারাপ করা মানা। আজ খুব চাইছি বৃষ্টি হোক। পৃথিবী ভিজুক। মনটাকে ভেজাব। অনেকটা দিন মন ভিজিয়ে কাঁদা হয়নি।