somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানিজদের ধর্ম পালন (৬)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীতে ধর্মহীন জাতি হিসেবে জাপান অন্যতম; শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ লোক এখানে কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না বা পালন করে না। ধর্মহীন মানে ঠিক নাস্তিক নয়; জাষ্ট এরা ধর্ম কে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে ধরে না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আসলে এদের অবস্থাটা বুঝানো কষ্টকর, কারণ আমাদের দেশের অধিকংশ মানুষ পালন করুক না করুক কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাস করে। আর যারা নাস্তিক তারা তো ধর্ম বিষয়ে আরো বেশী কনসার্ন! নিজেদের সমস্ত মেধা, বুদ্ধি এমনকি নিরবুদ্দিতা ;) দিয়ে ধর্মকে মিথ্যা প্রমানে ব্যস্ত থাকে। অনেকে ধর্ম নিয়ে বিশাল পড়াশুনা করে ধর্মের ফুটা বের করার জন্য এবং তা নিয়ে উপহাস করে নিজেকে তথাকথিত স্মার্ট প্রমান করার জন্য। জাপানিজদের ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো, ওরা ধর্ম কে নিয়ে তেমন একটা ভাবে না। এখানে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরকারী ছুটি নেই। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন বলতে ক্রিষ্টমাস নিয়ে এদের খুব লাফালাফি করতে দেখা যায়; কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে জাপানে মাত্র ২% লোক ক্রিষ্টান ধর্ম বিশ্বাস করে যার অধিকংশ বিদেশী। আসলে এরা ক্রিষ্টমাস পালন করে জাস্ট এঞ্জয় করার জন্য। এরা স্পেসিপিক কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না তাই এদের কোন ধর্মের সাথে বিরোধও নেই; এদের গডের পরিমান কয়েক মিলিয়ন; বাতাস, পানি, সূর্য থেকে নিত্য ব্যবহার্য সকল জিনিসপত্র কে এরা গড মানে। একদিন আমার সুপারভাইজার বলছিলেন আসলে আমরা ধর্ম পালন করি জাষ্ট একটু একজয় করার জন্য, একটূ ড্রিংক করার ওসিলা হিসাবে, তোমাদের মসজিদে যেয়ে যদি পান করা যেত তাহলে আমরা মসজিদেও যেতাম!!

তবে ইদানিং খ্রিষ্টানরা জাপানিজদের মধ্যে ধর্ম প্রচারের ব্যাপক আয়োজন করছে, কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। এরা ধর্মের কথা বলতে গেলে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে; সুগোই, সুগোই (খুবই সুন্দর!) ... বলে বিশ্বয়ও প্রকাশ করে। মনে হবে এই বুঝি পটে গেল :), কিন্তু না, ওই পর্যন্তই ... পালন করতে বল্লে বলবে “সোত্তো মুজুকাশি নে” ... (আমতা আমতা করে জাপানীজ স্টাইলে না বলা আর কি!)।/:) জাপানে মুসলিমের সংখ্যা ৪/৫ লাখের বেশি হবে না যার অধিকংশই বিদেশী। ইদানিং বিদেশীদের নির্মিত মসজদের সংখ্যাও বাড়ছে।

এখানে দুটি ধর্মের কিছুটা প্রচলন আছে, শিন্টো আর বৌদ্ধ। শিন্টো হচ্ছে জাপানিজদের আদিম ধর্ম আর ৬ শতকের দিকে চীন থেকে ইম্পোরটেড হওয়া ধর্ম বৌদ্ধ। ধার্মিক লোকজন এই দুই ধর্ম বা অনেক ক্ষেত্রে দুইটা একসাথে (একটা আরেকটার পরিপূরক হিসাবে)পালন করে। সিণ্টো ধর্ম আসলে জাপানের বাইরে অন্য কোথাও নেই তাই এদের সম্পর্কে খুব বেশী জানা যায় না। এদের নির্দিষ্ট কোন ধর্ম প্রচারক বা ধর্ম গ্রন্থ নেই। এরা বিশ্বাস করে মানুষ মরে গেলে কামী (দেবতা) হয়ে যায় এবং তারা স্রাইনে (ধর্ম পালনের ঘর, উপরের ছবিটা একটা স্রাইনের) বসবাস করে। বছরে নিয়ম করে স্রাইনগূলোতে মাতসুরী (অনুষ্ঠান) হয়, কামী গুলোকে বাইরের দুনিয়া দেখানোর জন্য। আমি শুনেছি স্রাইন গুলোতে নাকি বড় একটা আয়না থাকে যেখানে মানুষ যেয়ে তার আত্মশুদ্ধি লাভ করে বা মনের বাসনা জানায়। আসলে নিজেই নিজের সামনে দাড়ানোর মত একটা ব্যাপার। প্রকৃতপক্ষে ধমীয় আচার আচরণ পালন করার দায়িক্ত এরা দিয়ে রেখেছে প্রিষ্টদের উপর, সাধারন মানুষের ধর্ম পালন জন্ম, বিয়ে, মৃত্যু আর নববর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

জাপানীজরা ধর্ম পালন করে না তাই বলে কি এরা বর্বর, অসভ্য? মোটেও সেরকম নয়, বরং জাপানীজরা কোন ধর্ম পালন না করেও যে কোন ধার্মিক জাতির তুলনায় তাদের প্রাত্যহিক জীবনে ধর্মের অনুশাসন মেনে চলে। আগেও বিভিন্ন সময় উল্লেখ করেছি, এখানে আবার কিছু গুনের কথা উল্লেখ করি যে গুলো সাধারণত আমরা ধর্ম পালনের মধ্যদিয়ে অর্জন করতে চাইঃ

সততাঃ জাপানিজদের সততা প্রশ্নাতীত; এমনকি এরা ব্যাবসার ক্ষেত্রেও ছলনার আশ্রয় নেয় না। আপনার কাছে কোন জিনিস বিক্রি করতে গেলে ওরা যদি বুঝে আপনি এর খারাপ দিক গুলি না জেনেই কিনছেন তাহলে তারা আপনাকে তা বুঝিয়ে দিবে আপনি না জিজ্ঞাসা করলেও।

নিওমানুবরতিতাঃ এদের নিয়মানুবর্তিতা মনে হয় একটু বেশী, যে কারনে এদেরকে রোবট জাতী বলা হয়। সকাল সকাল ঘুমাতে যাওয়া আর খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা মনে হয় সব ধর্মের নিয়ম পালন করতেই করা লাগে যেটা এরা এদের অভ্যাসের অন্তরগত করেছে। রাত ৮ টার পর জাপানে কোন বাচ্চা সম্ভাবত জেগে থাকে না (অবশ্য আমার ছেলে ঘুমাতে যায় ১২ টার সময় তাও মায়ের ধমক খেয়ে/:))

চুরি-ডাকাতিঃ জাপানে চুরি ডাকাতি নেই বললেই চলে, ইদানিং কিছু ঘটনার কথা শোনা যায় যার অধিকংশ চাইনীজ বা ফ্রাস্টেডেড জাপানিজদের কাজ। সাধারণত রাস্তা ঘাটে কোন মুল্যবান জিনিস পড়ে থাকলেও এরা ছুঁয়ে দেখে না, যদি কেও নেই সেটা পুলিশের কাছে দেওয়ার জন্য।

বিনয়ঃ বিনয়ী জাতী হিসাবে জাপানিজদের সুনা্ম সারা বিশ্বে, এদের ল্যাংগুয়েজে সবচেয়ে বড় পার্ট হচ্ছে কত রকমে বিনয় প্রকাশ করা যায়।

কর্তব্যপরায়নাতাঃ নিজের কর্তব্য বা ডিউটি কে এরা ইবাদত মনে করে এবং তা যথাযথ পালন করে। এই জন্য পাবলিক সার্ভিসে জাপান বিশ্বে সেরা। কোন অফিসে কোন কাজে গেলে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।

অন্যকে হার্ড না করাঃ আপনি হার্ড হবেন এই ভেবে ওরা “ না “ কথাটাও এমন সুন্দর কওরে বলবে যে আপনি প্রথম প্রথম বুঝতেই পারবেন না যে আপনাকে না বল্ল নাকি হ্যাঁ বল্ল। ৪ বছরের বেশী জাপান থেকে এখনও আমি কনফিউসড হয়ে যায়!

পরিচ্ছন্নতাঃ জাপানিজদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আলাদা পোষ্ট ছিল তাই এ ব্যাপারে কিছু বল্লাম না।

এমন অসংখ্য উদাহরন দেওয়া যাবে যা মূলত ধার্মিক হয়েও আমরা পালন করতে পারি না, অথচ জাপানিজরা তা তাদের চরিত্রের অংশ হিসাবে বানিয়ে ফেলেছে। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে তা বিরাট এক বিশ্বয়!!

আমরা যে যে ধর্মে বিশ্বাস করি মনে করি আমারটা বাদে অন্য সব ভুল, অন্য সবাই দোজখে/নরকে যাবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেটা মনে করি না; আমার যুক্তি আল্লাহ্‌ দোজখের চেয়ে বেহেস্ত বানিয়েছেন বেশী (ইসলাম ধর্ম মতে), উনি নিশ্চয় বেহেস্ত ফাকা রাখার জন্য সেটা করেন নাই। মুসলমানরা বিশ্বাস করে ইমান না আনলে যে যত ভাল মানুষই হোক না কেন বেহেস্তে যেতে পারবে না। কিন্তু জাস্ট একটা যুদ্ধে একটা কুকুর মুসল্মানদের সাহায্য করার জন্য আল্লাহ্‌ সেই কুকুর কে বেহেস্তে নেওয়ার কথা বলেছেন। আসলে কে পরকালে শান্তিতে থাকবে আর কে কষ্টে থাকবে এ সিদ্ধান্ত একমাত্র তার যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি বেহেস্ত-দোজখের মালিক; আমাদের এবিষয়ে কোন সার্টিফি্রিষ্টি না দেওয়ায় ভাল।


----------------------------------------------------------
বিজ্ঞাপনঃ ;)
সাধারণ জাপানিজদের আচার ব্যবহার নিয়ে লেখা পূর্বের ব্লগ গূলোঃ
জাপানিজঃ আজব এক জাতি !!!

গাড়ীর হর্ন ঃ জাপানীজ স্টাইল !!! :) (২)

নিরবাচনী প্রচারণা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৩)

ময়লা ফেলা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৪) :-* :-/

জাপানীজ ওন্সেন বা গন গোছল (৫)
-------------------------------------------------------------

৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×