somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“না” বলতে শিখুন :-*

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“না” বলা ?? এটা তো পানির মত সহজ! প্রতিদিনই তো কতবার না বলছি!! এটা আবার শেখার কি হলো???

কথা সত্য; আমরা সারাক্ষণই প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে না কথাটি বলছি। আমার মনে হয় আমরা সারাজীবনে যত বার হ্যাঁ শব্দটা বলি তার চেয়ে কয়েক গুন বেশী বলি না শব্দটা। এই বহুল ব্যবহৃত শব্দটা নতুন করে শেখার আসলেই কিছু নেই। আমি আসলে এখানে “সুন্দর করে না বলা” বা “না বলার আর্ট” নিয়ে বলতে চাচ্ছি।

না হচ্ছে সবচেয়ে প্রথমে শেখা, সবচেয়ে সহজ এবং একদম সরাসরি একটি নেগেটিভ শব্দ। আপনি যখন সরাসরি কাওকে কোন ব্যাপারে না বলেন, নিশ্চিত ভাবে সে আপনার প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ বা বিরক্ত হয়। কারণ এতে আপনি তার মনের ইচ্ছাটার বিরুদ্ধে মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু একটু কৌশল করে বা একটু সুন্দর করে যদি না বলতে পারেন তাহলে দেখা যাচ্ছে আপনার কাউন্টারপার্টটি হয়ত আপনার সমর্থন পেল না কিন্তু সে আপনার উপর সে রাগও করতে পারবে না; বরং আপনার ব্যক্তিত্যের প্রতি তার সম্মান বেড়ে যাবে।

যেমন ধরুন আপনাকে কেও প্রেমের প্রস্তাব দিল ;); কিন্তু আপনি তার প্রস্তাবে সম্মত হতে পারছেন না। আপনি যদি তার মুখের উপর না বলে দেন তাহলে সে স্বভাবত-ই মনে অনেক কষ্ট পাবে। হয়ত এর ফলে আপনাদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কটিও সারাজীবনের জন্য শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া একজন মানুষ আপনার প্রতি তার হৃদয় নিংড়ান অনুভূতি প্রকাশ করল, আপনার কি উচিত হবে তার মনে এত বড় একটা আঘাত দেওয়া? ভেবে দেখেন তো, আপনি যদি কারো কাছ থেকে এমন ব্যবহার পেতেন তবে কেমন লাগত! সুতরাং এমন একটা উপায় বের করুন যাতে আপনি আপনার অপারগতার বিষয়টি তাকে বুঝাতে সমর্থ হন।

আবার ধরুন, আপনার বন্ধু আপনার কাছ থেকে টাকা ধার চাইল; কিন্তু তাকে টাকাটা দিলে আপনার টানাটানি পড়ে যাবে বা আপনি চাচ্ছেন না বন্ধুত্বের মাঝে টাকা পয়সার লেনদেন হয়ে বন্ধুত্ব নষ্ট হোক! আপনি তাকে সরাসরি না বললে বন্ধুত্ব এমনিতেই নষ্ট হইয়ে যাবে; তাই এমন একটা উপায় বের করুন যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে!

কর্মজীবনে ঊর্ধ্বতন আর অধস্তন মানুষের সাথে কাজ করতে গিয়ে সুন্দর করে না বলতে পারাটা খুবই জরুরী। আপনি যদি একদম-ই না বলতে না পারেন তাহলে আপনাকে সবাই ভাঙ্গিয়ে খাবে, গাধার খাটুনি খাটতে খাটতে আপনার জীবন শেষ! আর যদি কর্কশ ভাবে না বলেন তাহলে অফিসে আপনার রেপুটেশন নষ্ট হবে, যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর।

উন্নত দেশগুলোতে কর্পোরেট বিহেভিয়ার শেখানোর সময় কেমনে দু’কুল রক্ষা করে “No” বলতে হয় সেটা শেখানো হয়। এটা হচ্ছে ডিপ্লোম্যাসি; ডিপ্লোম্যাসি আর মিথ্যা কথা এক জিনিস নয়। জীবনে পজিটিভ ডিপ্লোম্যাসির প্রয়োজনীয়তা অনেক।

আমি নিজেও সুন্দর করে না বলতে পারিনা, প্রকৃতপক্ষে, আমি একদমই না বলতে না পারাদের দলে; ;) এই তো সেদিন, আমার কাছে একজন বেশ কিছু টাকা ধার চাইল; আমি জানি যে আমি যদি তাকে আমি এই টাকাটা দিই তাহলে মাসের শেষে হয়ত আমাকেই অন্যের কাছ থেকে ধার চাইতে হবে। কিন্তু আমি কিছুতেই তাকে না বলতে পারলাম না। X(

আমি কিছু লোক কে দেখেছি যারা অনেক সুন্দর করে না বলতে পারেন। দেশে আমি প্রথম একটা কলেজে চাকুরী দিয়ে আমার কর্মজীবন শুরু করি। সেই কলেজের যিনি কর্ণধার, নাম বললে হয়ত অনেকেই চিনবেন; এই ভদ্রলোকের অধীনে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি-ওষুধ কোম্পানি মিলে প্রায় হাজার খানিক মানুষ কাজ করে। ভদ্রলোকের স্ট্রাটিজি-ই হচ্ছে কম বেতন দিয়ে অধিক পরিশ্রম করান। বলতে গেলে ১০০% এমপ্লয়ী বেতন সংক্রান্ত ব্যাপারে তার উপর ক্ষেপা। কিন্তু ভদ্রলোক তার ব্যবহার এমন একটা পর্যায়ে উন্নিত করেছেন যে তার সামনে গিয়ে কেও কোন কিছু বলতে পারে না। বরং তার সাথে কিছুক্ষন কথা বললে মন ভাল হয়ে যায়। এই ভদ্রলোক কাওকে কখনো না বলেন না। কিন্তু এতগুলো মানুষকে সামলাতে গিয়ে নিশ্চয় তাকে অনেক না বলার মত কাজ প্রতিনিত করতে হয়। কেও তার কাছে বেতন বাড়ানোর আর্জি নিয়ে গেলে তিনি এত সুন্দর করে তাকে বুঝিয়ে দিতেন যেন সে নিজেই লজ্জা পেয়ে যেত এমন অন্যায্য আবদার করার জন্য। উনি কাওকে চাকুরি থেকে স্যাক করেন না, কিন্তু কাওকে অপছন্দ হলে তাকে এমন একটা কাজ দেন যেন সে নিজেই চাকুরী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

এই ব্যবস্থা দেখেছি জাপানেও; সেখানে সাধারণত কাওকে কাজ থেকে বের করে দেওয়া হয় না। কিন্তু কাওকে আর না রাখতে চাইলে এমন ভাবে প্রেশার সৃষ্টি করা হয় যেন সে নিজে থেকেই চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হয়। জাপানীজ ভদ্রলোকেরা সাধারণত কাওকে সরাসরি না বলেনা। আপনাকে তারা এত সুন্দর করে না বলবে যে আপনি তাদের কালচারে অভ্যস্ত না হলে বুঝতেই পারবেন না যে সে আপনাকে না বল্ল, নাকি হ্যাঁ বল্ল! আমার ওয়াইফ জাপানে স্কুলের চাকুরী খুজতে প্রায় ২০-২৫ টি স্কুলে ভাইভা দিয়েছিল। প্রতিটা ভাইভা দেওয়ার সময় এমন ভাবে তার প্রশংসা করত যে আমরা নিশ্চিত ভাবে ধরে নিতাম তার এইখানে চাকুরী মাষ্ট! কিন্তু দিন যায় কোন রিপ্লায় আসেনা, অবশেষে অধর্য্য হয়ে আমরা যোগাযোগ করলে এমন বিনীত ভাবে রিপ্লায় আসত যে ইমেইল পড়ে আমাদের সন্দেহ হতো যে আসলে কি না বলা হয়েছে নাকি হ্যাঁ বলা হয়েছে।

সুন্দর করে না বলতে পারাটা আপনার ভদ্রতা এবং একই সাথে স্মারটনেসের মাপ কাঠি - আসুন সুন্দর করে “না” বলতে শিখি!
২০টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×