somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্দোলনের ফিরিস্তি

২০ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এতো মুভমেন্ট, এতো লেখালিখি, এতো কথার কী দরকার আছে জিজ্ঞাসা করেন না? অবশ্যই দরকার আছে। কেনো দরকার আছে তার কয়েকটা নজির দেখাই বরং।
১. ফুলিরে এসিড মারায় জলিলের বাড়ি ঘেরাও করার কথা মনে আছে?
২. বাবা, আমি স্কুলে যামু। আমি স্কুলে যাইতে চাই। বাল্যবিবাহ বিবাহ বন্ধ করা নিয়ে ১৫ মিনিট পর পর রাষ্ট্রীয় সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে?
৩. আর্সেনিকযুক্ত পানির কলে লাল রঙের কথা মনে পড়ে?
৪. "পা পা পাতলা খাবার!" মিঠুর কণ্ঠ্যে এই স্ক্রিপ্ট আপনার ভোলার কথা না। ডিসেন্ট্রি, হিহাইড্রেশন, ডায়রিয়া নিয়ে আগের মত মানুষকে কুপোকাত হতে দেখেন? বিশুদ্ধ পানি কতোটা দরকার এবং কেনোই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া দরকার? এখন কাউকে ডাইকা ডাইকা আপনার বুঝানো লাগে?
৫. পোলিও টিকা না নেওয়ার কারণে পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের ইন্টারভিউগুলা মনে আছে?

২০০০ সালের মধ্যে আমাদের যাদের জন্ম, তাদের শৈশব-কৈশর আসলে এই রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞাপনগুলো দেখেই বড়ো হওয়া। আচ্ছা বলেনতো আগে এই ইস্যুগুলোর রেইট এন্ড ফ্রিকুয়েন্সি কেমন ছিলো আর এখন কেমন? এখন কি আপনি এসিড সন্ত্রাসের কথা পত্রিকার পাতায় দেখতে পান? আর্সেনিকের বিষয়ে? বাল্যবিবাহের রেইট আগের মতো আছে?

নাহ, নাই। এর কারণ হচ্ছে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি। আপনার সব কিছু, চিন্তাচেতনা রাষ্ট্র দিয়েই নিয়ন্ত্রিত। পুরা বিষয়টা এক্সপ্লেইন করের আগে একটু প্লট ব্যাখ্যা করি।

৯০'র দশকে পত্রিকা খুললেই প্রতিদিন চার-পাঁচটা এসিড নিক্ষেপের নিউজ পাওয়া যেতো। ডায়রিয়া-ডিসেন্ট্রি-ডিহাইড্রেশনে এই অঞ্চলের মানুষ বহুকাল হুদাই মারা খাইছে। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করার কারনে হাতে রেশ হইতো। একটা সময় বিকলাঙ্গ হয়ে যাইতো। পোলিও টিকার সচেতনতা না থাকার কারণে পঙ্গু হওয়া শিশুদের খবর ছাপতো পত্রিকায়। বাল্যবিবাহের রেইট এতোটাই বেশি ছিলো যে স্কুলে ৫ পর্যন্ত পড়ার আগেই বাচ্চা মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাইতো।
এইযে এতো এতো সমস্যা যা আমরা আগে দেখছি এখন সেইগুলা চোখে পড়ে না ক্যান? কারণ হইলো হিউম্যান সাইকোলজির নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় আছে। রাষ্ট্রের কিছু সুক্ষ্ম মেজার এর পিছনে কাজ করছে। আপনি প্রতিনিয়ত যা দেখেন, তাতেই আপনি হ্যাবিচুয়েটেড হয়ে যান। আসেন বিষয়টা একটু কর্পোরেট চশমা দিয়ে দেখি।

বিরিয়ানির দোকানে গিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার পরে কোন সফট ড্রিংক অর্ডার করেন? ডিউ, কোকাকোলা, সেভেন আপ নাহয় পেপসি? তাইতো? এর বাইরে আমি আসলে কিছু অর্ডার করতে দেখিনি। এর কারণ কী? বিরিয়ানিতো ইরানি খাবার। সেখান থেকে মোঘলদের দিয়ে আসছে দিল্লিতে। দিল্লি থেকে সুবেদার আমলে পুরান ঢাকায়। ভুলে যাই আমরা একটা বিষয়। শুধু বিরিয়ানি না, সাথে আসছে বোরহানিও। তো আপনি বোরহানি খাওয়ার ঐতিহ্য ভুইলা ক্যান এই পার্টিকুলার ড্রিংক্স অর্ডার করেন?

কারণটা হইলো কর্পোরেট হিপনোটিজম। বিরিয়ানির দোকানেই আপনি প্যানাফ্লেক্সে কোকাকোলা, সেভেন আপ, পেপসি, ডিউ এর এড দেখেন। প্রতিনিয়ত এই এডভার্টাইজমেন্ট দেখে দেখে আপনি অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তাই আপনি বোরহানি খান না। ঘটনাটাই এতোটাই সহজ। আপনি বাজারে গিয়ে কোন টুথপেস্ট কিনেন এবং এর এডভার্টাইজমেন্টের জন্য সেই কোম্পানি কতোটাকা ব্যয় করে একটু হিসাব মিলাইয়া দেইখেন। আপনার চোখের রঙিন চশমাটা খুলে যাবে।

এইবার মূল আলাপে যাই। উপরে পয়েন্ট করা ইস্যু গুলা নিয়ে বাংলাদেশে এক্সিস্ট করা বিভিন্ন সংগঠন, এনজিও, সিভিল সোসাইটি এবং সরকারের অনেক অনেক সুক্ষ্ম স্টেপই মূলত এই সমস্যাগুলা সমাধান করছে। ঐ স্টেপগুলা আপনার আপাত দৃষ্টিতে খুব একটা ইফেক্টিভ এবং এফিশিয়েন্ট কিছুই মনে হবে না। কিন্তু বিশ্বাস করেন, ঐগুলাই কাজ করে। ব্র‍্যাকের সচেতনতামূলক পথ নাটক, ওয়ার্কশপ, গ্রামীণ ব্যাংকের উঠোন সভা, ইউনিসেফের কার্টুন, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সব প্রতিনিয়ত আপনার বাড়ির সামনে আইসা, টিভি আর পত্রিকার ছদ্মবেশে ঘরে ঢুইকা বুঝাইছে। যার কারণে এখন এসিড সন্ত্রাস নির্মুল সম্ভব হইছে।

এইযে এইযুগে আমরা প্রযুক্তির কল্যাণে আরও হাজারটা সমস্যা দেখি। দূর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে প্রতিবার, সাম্প্রদায়িক আক্রমণ একটা কমন বিষয়, ঘুস এখন জাতীয় খাদ্য, ধর্ষণ একটা জাতীয় সমস্যা ইত্যাদি। কিন্তু এই নিয়া কথা বলার মতো মানুষ কয়টা দেখেন? রাষ্ট্রের কী মেজার দেখেন? আছে কিছু? এই সময় আসলে সবচেয়ে বেশি যেইটা দরকার, তা হইলো কথা বলা। সবাইরে বিষয়গুলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো। রাস্তায় নাইমা ঐ পথ নাটক করা। যেহেতু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে আপনি ঘরে বইসাই একটা কন্টেন্ট বানাইয়া ফেলতে পারেন, তাই বিষয়টা আরও সহজ। সুতরাং কথা বলার যে দরকার আছে তা নিয়ে আপনার আর প্রশ্ন থাকার কথা না। বাকিটা নিজেরে জিজ্ঞাসা করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১২:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×