somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই স্টক এক্সচেঞ্জে দরপতন অব্যাহতঃ ৪ লাখ কোটি টাকা গ্যাম্বলাররা নিয়ে গেছে, পতন হবেই !

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের খবরঃ দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে আজ রোববার দরপতন অব্যাহত রয়েছে। ফলে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের পতন হয়েছে। ডিএসইতে আজ এক হাজার ১৬৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আজ ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।

এবার আসা যাক শেয়ার মার্কেটে কি হয়েছে, কেন এই পতন, কোথায় গিয়ে ঠেকবে ?

ঢাকা চিটাগাং কার্ব মার্কেট, সারাদেশ তথা বিদেশ থেকে প্রবাসী বিনিয়োগকারী সহ কেউ দাবী করছে ৪০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কেউ বলছে ৩৩ লাখ। ধরলাম এরা প্রত্যেকে ৮ লাখ টাকা করে গড়ে বিনিয়োগ করেছে এবং ১০ তারিখের দড় পতনের তাদের প্রত্যেকের কাছে অর্ধেক মূলধন অর্থাৎ ৪ লাখ টাকা বাকি আছে। এই ৪০ লাখ বিনিয়োগকারীর বাকি ৪ লাখ টাকা "৪০ লাখ লোকে নিয়ে থাকলে প্রত্যেকে নিয়েছে ৪ লাখ টাকা করে নিয়েছে, ৪ লাখ লোকে নিলে প্রত্যেকে নিয়েছে ৪০ লাখ টাকা, ৪০ হাজারে নিলে প্রত্যেকে ৪ কোটি, ৪ হাজারে নিলে প্রত্যেকে ৪০ কোটি, ৪০০ জেনে নিলে জনপ্রতি ৪০০ কোটি। এবং ৪ জনে নিলে এক একজনে ৪ লাখ কোটি। আর ১ জনে নিলে ১৬ লাখ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ১৬ লাখ কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে।

ঠিক আছে, ধরলাম গড় বিনিয়োগ ৮ লাখ টাকা না, ৪ লাখা টাকা। এখন মুলধন আছে ২ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে ৮ লাখ কোটি। আবার, ধরলাম বিনিয়োগকারী ৪০ লাখ না, মাত্র ২০ লাখ, সেক্ষেত্রে ৪ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে অল্প কিছু লোকে এবং তাদের সহযোগী চক্রে। হিসেবটার চেয়ে বড় কথা কি আকারে টাকা দেশের উন্নয়ন অর্থনীতিতে কাজে লাগিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন না করে আমরা লুটেরার হাতে তুলে দেই।

কিভাবে করি ? শেয়ার মার্কেটে যারা কারসাজি করে তাদের বাটপার বলা হয়। কিছু বড় বড় বাটপার প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা এসিসি, অর্থ মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তর এবং মাফিয়া ইনভেস্টরদের সাথে মিলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কারীদের টাকা নিয়ে যাওয়ার একটি সফল ও অনৈতিক মার্কেট বাংলাদেশ শেয়ার মার্কেট ঐতিহাসিক ভাবেই কুখ্যাত।

একটি/এক প্রকার কারসাজির উদাহরন দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি। এরকম অসংখ্য ফন্দি করে পাবলিকের টাকা নিয়ে তাদের পথে বসানোই শেয়ার মার্কেট, এসিসি ও অর্থমন্ত্রনালয় ও সরকারের মিশন এবং ভিশন।

যেমন গত বছর মার্চ ওশেন কন্টেইনারস্‌ লিমিটেড নামক একটি কোম্পানী শেয়ার মার্কেটে এসেছিল এবং প্রথম দিনই তার ১০ (দশ) টাকার শেয়ার ২৫০ (একশত পঞ্চাশ) টাকায় বিক্রি হয়ে সর্বচ্চ ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে যার মূল্য গত ১৫ মার্চ ২০১০ তারিখে ২৭৮ টাকা ছিল।

এখনে বিষয়টা কি হয়েছিল ? ধরি ওসিএল মানে ওশেন কন্টেইনার লিমিটেড প্রতি শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা হিসেবে ৫০ কোটি টাকার শেয়ার মার্কেটে ছাড়লো, এবং গড়ে ৩০০ টাকা দরে শেয়ারগুলো বিক্রি করলো। তাহলে কি করলো ? ১০ টাকাকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করলে ৫০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকাকে বিক্রি করলো ১৫০০ (পনেরশত কোটি) কোটি টাকায়।

এখন দেখা যাক কি হওয়ার কথা ছিল ? নিয়ম মত যে কোন কম্পানী মার্কেটে আসতে চাইলে তাকে প্রাইমারী শেয়ার/ আইপিও যেমন সম্প্রতি গ্রামীন ফোনের শেয়ার আবেদনের ভিত্তিতে লটারীর মাধ্যমে মার্কেটে ছেড়েছে সেভাবে আসতে হবে। গ্রামীন এর ক্ষেত্রে দেখেছি ১০ টাকার শেয়ারের সাথে সম্ভবত ৬০ টাকা প্রিমিয়াম যোগ করেছে ৭০ টাকায় বিক্রি করেছে।

প্রশ্ন হলো ওসিএল যদি গ্রামীনের এই প্রক্রিয়ায় আসতো তাহলে কি হতো ? হ্যা সেই ক্ষেত্রে ওসিএল এর দশ টাকার শেয়ারের সাথে সর্বচ্চ ৪০ টাকা প্রিমিয়াম যোগ হয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হতো। তাহলে ৫০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হতো ২৫০ কোটি টাকায় । এখানে দেখা যাচ্ছে কোম্পানীটি আইপিও ডিক্লিয়ার না করে অর্থমন্ত্রনালয় থেকে একটা পারমিশন নিয়ে সরাসরি লিস্টিং করে সেকেন্ডারী মার্কেটে শেয়ার ছেড়ে এবং মার্কেটে কোম্পানীর প্রফাইল নিয়ে কিছু রিউমার ছড়িয়ে প্রান্তিক বিনিয়োগ কারীকে লোভ দেখিয়ে ১২৫০ কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে গেল। একাজে মন্ত্রনালয় ও এসিসি সহ সংশ্লষ্ট অফিসগুলোতে হয়তো ১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে । কত সহজে কয়েক দিনেই ১১০০ কোটি টাকার উপর উপার্জন (?) করে নিল।

কাজটা কি ভাবে করলো ? ওসিএল অর্থমন্ত্রনালয়ের একটা বিশেষ অর্ডার নিয়ে কোম্পানীটি আইপিও না দিয়ে এসিসির সহায়তায় সোজা সেকেন্ডারী মার্কেটে ৫০ কোটি টাকা ৫ দিনে ১৫০০শ কোটি টাকা নিয়ে গেল।

আপনাদের কি মনে হয় ? এই টাকা কার পকেট থেকে যাবে ? অবশ্যই এই পুরো টাকাটাই যাবে প্রান্তিক বা ম্যাঙ্গো বিনয়োগকারীর পকেট থেকে। যেমন গত কাল এই ওসিএল এর প্রতি শেয়ারের মূল্য ছিল ১২৩ টাকা। এটা আরও কমবে এবং কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় আসবে। তাহলে গত বছর যে এটা ৩৫০ টাকা ছিল ঐ ২৫০ টাকা কার পকেট থেকে যাবে ? কে দায়ী ? ওসিএল তো ৫০ কোটি টাকা ৫ দিনে ১৫০০শ কোটি টাকা নিয়ে তখনই চলে গেছে।
দ্রষ্টব্যঃ আলোচ্য ওসিএল কম্পানীটি শোনা গেছে বানিজ্য মন্ত্রী ফারুক খানের।

আলোচনাঃ সরকার ও অর্থমন্ত্রনালয় জানবে না তার দেশে শেয়ার মার্কেটে কতগুলো কোম্পানীর ও কত শেয়ার মার্কেটে আছে তা যেমন অবাস্তব ঠিক তেমনি অবাস্তব টোটাল মার্কেটের মোট মূল্য কত এবং আজ কত টাকা মুলধন মার্কেটে আছে। একটা দেশের শেয়ার মার্কেট সব সময়ই সরকারের নিয়ন্ত্রনে থাকে কারন এর নিয়ন্ত্রনকারী সবগুলো চাবিই সরকারের হাতে থাকে আর বাংলাদেশের মত দেশে সেতো ১১০ ভাগ ! ২০০৯ সালের মাঝামাঝি থেকেই অর্থমন্ত্রনালয় জানতো শেয়ার মার্কেটে মার্কেটের মোট মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা চলে এসেছে। তখন অর্থমন্ত্রনালয় সহ সরকারের উচিত ছিল ব্যপক প্রচারনা করে জনগণকে শেয়ার মার্কেটে আসা থেকে বিরত রাখা। অথচ গত দুই বছর ধরে সরকার প্রতিদিন মানুষকে উৎসাহীত করছে শেয়ার মার্কেটে আসতে! যেমন অর্থমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই ঘোষনা দিয়েছিলেন বিটিসিএল টেলিটক সহ সরকারের ২৬ কোম্পানী ৩০% শেয়ার মার্কেটে ছাড়বে (অথচ ২ বছরে সরকারী কোম্পানীগুলোর একটিও মার্কেটে আসেনি ) এরকম অসংখ্য প্রতারনা শেয়ার মার্কেট আজকের আকারে বেড়ের ওঠার অন্যতম কারণ।

উপসংহারঃ সম্প্রতী ১০০ ভাগ সরকারী মালিকানার মোবাইল ফোন কম্পানী টেলিকট চীন থেকে ১৫০০ কোটি টাকা ঋন নিয়েছে ২.৫% সুদে অথচ অর্থমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই ঘোষনা দিয়েছিলেন বিটিসিএল, টেলিটক সহ সরকারের ২৬ কোম্পানীর ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার মার্কেটে আসছে। সেক্ষেত্রে মার্কেট থেকেই এ টাকা নিতে পারতো, মার্কেটের আকারও একটু বড় হতো। আসল বিষয় দেশের উপর জনগণের মালিকানা থাকবে কি থাকবে না ?
আচ্ছা এখন যদি যমুনা ব্রীজের শেয়ার ছাড়া হয় তাহলে আপনি কিছু আইপিও কিনবেন কিনা ? আপনার কি মনে হয় এটা লস খাবে ?।

মাত্র বিশ লাখ বিনিয়োগকারীর পকেট থেকে কি সহজে কি আকারের ফান্ড কত সহজে নেয়া যায় আর ভাবেন ৭০ লাখ প্রবাসী আছে এর মধ্যে বিশ পচিশ লাখকে যদি গড়ে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করানো যায় তাহলে আগামী দুই বছরের মধ্যে কি পরিমান টাকা গ্যাম্বলিং করা যাবে। ওলরেডি প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য প্রচার প্রচারনা ও স্যাটালাইট টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু হয়ে গেছে। ব্রকার হাউজগুলো বিদেশে শাখা অফিস খুলে ফেলেছে।

যাহউক, শেয়ার মার্কেটের এই অনৈতিক কাজের পেছনে সরকারই দায়ী ? যদি তা না হয় তাহলে বুঝতে হবে দেশে কোন সরকার নেই। আসলে দেশটা ৪০ বছর আগে স্বাধীন হলেও দেশের মানুষের মুক্তি মেলেনি বরং দেশিয় ধান্ধাবাজেরা আজও জনগণকে পাকিস্তান বা বৃটিশদের চেয়ে বেশি পরাধীন করে রেখেছে, শৃংখলিত করে রেখেছে প্রতি পদে পদে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:১৫
৩২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×