পারস্যের কালজয়ী কবি হাফিজ এক তরুণীর গালের তিলের আভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর কবিতায় বুখারা আর সমরখন্দ দুই প্রদেশ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। ভালোবাসার প্রকাশ হয়ে সে কবিতা এতকাল ধরে উচ্চারিত হয়ে আসছে। কবির আসল নাম শামসুদ্দিন মোহাম্মদ। কোরআনে হাফেজ ছিলেন বলে তাকে হাফিজ নামে ডাকা হত। ইরানের শীরাজ নগরের বাসিন্দা হিসেবে তিনি হাফিজ-ই-শীরাজী নামে পরিচিত হয়ে এসেছেন। তাঁর কবিতা গুলোকে দিওয়ান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দিওয়ান শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ কবিতা বা কবিতা সংকলন। হাফিজের মৃত্যুর পর কবিতা গুলোকে সংকলিত করে দিওয়ান-ই-হাফিজ নামে প্রকাশ করা হয়। হাফিজের দিওয়ান গুলোর কোনো নাম ছিল না, নাম্বার দিয়ে দিওয়ান গুলোকে চিহ্নিত করা হয়। এখানে আমি হাফিজের সেই বিশ্বজয়ী দিওয়ানটির ফার্সি প্রথম দুই লাইন সহ বাংলা তরজমা তুলে ধরছি-
২নং দিওয়ান
আগার আন তুর্কই শীরাজী বদস্ত আরদ দিলে মারা
বকালে হিন্দ ওয়াশ বখশম সমরখন্দ ওয়া বুখারারা
শিরাজের চিত্তকাড়া তুর্কি মেয়ে ফেরত যদি দেয় দিল বেচারা।
তবে তার গালের লাল তিলের জন্য দিই সমরখন্দ আর বুখারা।।
ঢালো সাকি বাকি সুরা পাওয়া তো যাবে না এমনি কেন না।
রুখনাবাদ তীর মুসল্লা বায়, অন্য কোনও বেহেশতেও বা।।
দুঃখ এই যে নগর উন্মাদ দামাল সুন্দরী এই প্রিয়তমা।
হৃদয় নিয়ে খেলে ছিনিমিনি তুর্কি ভোজের বরাত জমা।।
সামান্য প্রেমেও বাঁধতে না পারি তার এমনই লাবণি জাল।
তিল কি ফুল রঙ বাহার ছেঁকে গুনি বা কেন এ ফেরত চাল?
জানি ইউসুফের এমনি রূপ বেড়ে হবে দুরন্ত সঙ্গিন।
সতীত্ব ছিঁড়ে জোলাখাকে বের করে নেবেই যে কোনও দিন।।
গজলে মেতে তাই ঢালো এতে শরাব নতুন রহস্য নেশার।
বুদ্ধি মেপে করবে না খোঁজ তার গিঁট খোলা সে সুতো প্যাঁচার।।
প্রিয় বালিকা শোনো তো কথা এর চেয়েও প্রিয় আরও যে প্রাণ।
যৌবন জানে সে জ্ঞান তার তরুণ চিত্তের নিকেশে দান।।
কটূক্তি যদিও করে মারলে তূণ হৃদয় তুল দৃষ্টি তুলে।
অন্তর্যামী জমিয়েছে মধু পাপড়ি তোমার অধর মূলে।।
কেন যে হাফিজ বাঁধলে গজল এমন মণিমুক্ত কসে?
ছত্রে ছত্রে তারার আলো আঁধারে ভালো জ্বলে মণিসে।।
বই-হাফিজ ও বিস্ময়কর দিওয়ান(শামসুল আলম সাঈদ)