একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল পাকিস্তানী অফিসার বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তাদের অনেকেই দেশে ফিরে গিয়ে স্মৃতিকথা লিখেছেন। যাদের একজন মেজর সিদ্দিক সালিক। তিনি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডারদের জনসংযোগ অফিসার ছিলেন। তার লেখা ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এক অসাধারণ স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ। যেখানে তিনি সত্যকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। বইটির ১০৮নং পৃষ্ঠায় তিনি রাজশাহীর রোহনপুর এলাকার একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। যা আমি হুবুহু তুলে ধরছি। (আমি এখানে বইটির বাংলা অনুবাদ ব্যবহার করেছি যা ‘নিয়াজির আত্মসমর্পনের দলিল’ নামে ছাপা হয়)
‘....তাদের(মুক্তিবাহিনী) তেজস্বিতার একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। নাশকতামূলক প্রচেষ্টা নেয়ার অভিযোগে ১৯৭১ সালের জুন মাসে রোহনপুর এলাকায় (রাজশাহী জেলা) একটি বালককে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তাকে কোম্পানি সদর দফতরে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু কোন তথ্যই সে প্রকাশ করতে স্বীকৃত হল না। মুখ খোলানোর জন্য যখন সব পদ্ধতিই ব্যর্থ হল তখন ‘মেজর আর’ তার স্টেনগান বালকটির বুকের ওপর চেপে ধরে বললো, ‘এই-ই তোমার জন্য শেষ সুযোগ। যদি মুখ না খোল, তাহলে বুলেট তোমার বুক চিরে বেরিয়ে যাবে’। সে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে মাথা নুইয়ে মাটি চুম্বন করলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আমি এখন মরতে প্রস্তুত। আমার রক্ত নিশ্চয়ই আমার পবিত্র ভূমির মুক্তিকে ত্বরান্বিত করবে’।......’
উইটনেস্ টু সারেন্ডার -পৃষ্ঠা-১০৮
আমরা জানিনা, কী ঘটেছিল সেই বীর বালকের ভাগ্যে? সে স্বাধীনতার সূর্য দেখতে পেয়েছিল কিনা? কখনো জানাও হবেনা। নিজেদের প্রবোধ দিতে পারি এই বলে যে হয়তো সে বেঁচে গিয়েছিল। লাল-সবুজ পতাকা হাতে মায়ের কাছে ফিরে গিয়েছিল। মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল এই নাও তোমার স্বাধীনতা। কিন্তু তা কখনো হবার নয়। এই বীর বালকেরা কখনোই ফিরে আসে না। কেউ জানে না তাদের নাম। কোনো ফলকে লেখা থাকে না। থাকেনা কোন খেতাব। তাদের সমাধি হয়েছে এই লাল সবুজের দেশ, বাংলাদেশ।