somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরু না কেটেও যে কসাই হওয়া যায় তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে ঢাকার বাড়িওয়ালারা

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য টয়লেটে গেলাম। টয়লেটে এক ফোটাও পানি নাই। এক দৌড়ে নিচে বাড়িওয়ালার বাসায় গেলাম। উনাদের রান্নাঘর থেকে পানি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কলিং বেল চাপ দিলাম কিন্তু কেউ বের হচ্ছে না এদিকে আমার পেটের অবস্থা শুধু কেরোসিন বললে ভুল হবে; ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন সব এক হয়ে বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ডায়রিয়ার জন্য রাতে একটা ফ্লাজিল ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম; মনে হয়, সেটা রক্তে মিশে যাওয়ার আগেই ডায়রিয়ার জীবাণু সেই ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেছে। যাই হোক, বাড়িওয়ালা আংকেল ঘর থেকে বের হয়েছেন; আমি বললাম, ‘আংকেল পানি ছাড়েন।’ উনি বললেন, ‘নিচের ট্যাংকিতে পানি নাই, পানি ছাড়া যাবে না। এরপর লজ্জা শরমের মাথা-বুক-পেট-ঠ্যাং সব খেয়ে আংকেলকে খুব আস্তে করে বললাম, ‘আংকেল, আপনাদের হাই কমোডটা কি একটু ব্যবহার করা যাবে? এরপর আংকেল যা বলল, তা আর এখানে নাইবা বললাম.....!

পুরো দু’মাসের অ্যাডভান্‌স্‌ দিয়ে একটা নতুন ফ্ল্যাটে উঠলাম। বাড়ির ভিতর-বাহিরটা খুব সুন্দর করে রঙ করা। মনে হয়, পুরো বাড়িতে Berger Robbialac Easy Clean ব্যবহার করেছে। মনে মনে ভাবলাম, ইস! বাড়িওয়ালার মনটাও যদি তাঁর বাড়ির মতই সুন্দর হয় তাহলে এই বাড়িতেই আজীবন কাটিয়ে দিবো। কিছু দিন যেতে না যেতেই শুরু হল নানান বিপত্তি। আমার বড় ভাই ডায়াবেটিসের রোগী। ভোরে বাহিরে হাঁটতে যায় কিন্তু বাড়িওয়ালা ভোরে গেটও খোলে না, চাবিও দেয় না। তার উপর আবার রাত ১১টা বাজতে না বাজতে মেইন গেটে ডাবল তালা লাগিয়ে দেয়। বিকেলে বাচ্চারা ছাদের একটু উঠার জন্য কান্নাকাটি করে কিন্তু ছাদের চাবি চাইলেও বাড়িওয়ালা কখনো চাবি দেয় না। বুঝতে পারলাম এই বাসায় বেশি দিন থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। এরই মধ্যে একদিন বাড়িওয়ালার কাজের মহিলা এসে বলল, ‘আফনেরে খালুজান ডাহে।’ আমি বললাম, ‘এখন তো যেতে পারব না; বাসায় মেহমান আসছে।’ তখন কাজের মহিলা বলল, ‘খালুজান কইছে, এতো মেহমান আসলে এই বাসায় আপনারা থাকতে পারবেন না।’ লজ্জার সাগরে আমাদের মান সম্মান সব ডুবল।

নতুন বাসায় উঠলাম। এখানে সারা দিন গ্যাস থাকে না। রাতে গ্যাস আসে আবার সকাল ৯টা বাজে গ্যাস চলে যায়। দুপুরের রান্নার জন্য একটা স্টোভ কিনে আনলাম। যাই হোক, অনেক কষ্টের মধ্যেও দিনগুলো কোনো রকমে কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন বাড়িওয়ালি এসে হাজির হল আমাদের বাসায়। বুঝতে দেরি হল না, something is wrong! একটু পরেই বুঝতে পারলাম, Everything is wrong! উনি অনেকগুলো ওয়ার্নিং দিয়ে গেলো, যেমনঃ বাসায় বাচ্চাকাচ্চারা লাফালাফি করতে পারবে না; দেয়ালে ড্রিল করা যাবে না; দেয়ালে পেন্সিল বা কলম দিয়ে কোনো দাগ দেওয়া যাবে না; সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামতে হবে; সিঁড়িতে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না.... ইত্যাদি ইত্যাদি। বাড়িওয়ালি চলে গেলো কিন্তু উনার ওয়ার্নিংগুলো থেকে গেলো। এরপর বাড়িওয়ালা নিজে এসে একদিন বলে গেলো, ‘আপনারা আর এই বাসায় থাকতে পারবেন না। কারণ, আপনারা শিলপাটা দিয়ে পেঁয়াজ-রসুন বাটাবাটি করেন, অনেক শব্দ হয়। শব্দের জ্বালায় ঘরে টিকতে পারি না।’ অগত্যা বাড়িটা ছাড়তেই হল।

এই বার আর কোনো ভুল করলাম না।। নিচতলায় একটা বাসা পেয়ে গেলাম। বাড়িওয়ালাকে সব কিছু আগেই বলে নিলাম। খুব শান্তিতেই দিন কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ এক মনোরম সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালা হাসিহাসি মুখ নিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটে উপস্থিত। বাড়িওয়ালা খুব রসিক মানুষ; খুব সুন্দর করে গল্প করতে পারেন। খালি মুখে তো আর গল্প জমে না; তাই বড় আপাকে চায়ের ব্যবস্থা করতে বললাম। আপা বলল, ‘ঘরে দুধ-চিনি কিছুই নাই’; বললাম, ‘পাশের ফ্ল্যাট থেকে চিনি নিয়ে আসেন, তাড়াতাড়ি লাল চায়ের ব্যবস্থা করেন।’ যাই হোক, অবশেষে বুঝলাম, বাড়িওয়ালা কেন একজন দিন আনা সকাল-দুপুর-রাত খাওয়া মানুষের বাসায় আসলো(!) আগামী এপ্রিল মাস থেকে বাড়ি ভাড়া বাড়বে। কারণ, গ্যাসের ডাবল বার্নার চুলার বিল নাকি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়েছে। বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা কোনো প্রতিবাদ করল না। আর আমরা তো এই বাড়িতে নতুন, তাই কোনো কিছু বলার সাহসই পেলাম না। কয়েক মাস যেতে না যেতেই বাড়িওয়ালা একটা পেপার কার্টিং এনে দেখালো ওয়াসা পানির বিল ৫ টাকা থেকে ৫ টাকা ৯৬ পয়সা হয়েছে প্রতি ইউনিট। সুতরাং, আগস্ট মাস থেকে বাড়ি ভাড়া আবার বাড়বে। বুঝতে পারলাম বিকালে নাস্তা খাওয়ার পয়সাটাও বাড়িওয়ালার পকেটেই যাবে। এভাবে সুখে-দুঃখে দিন চলে যাচ্ছিল। কখন যে নভেম্বর মাস শেষ হয়ে ডিসেম্বর চলে এলো, বুঝতেই পারিনি। আজ সকালে বাড়িওয়ালা কোনো পেপার কাটিং ছাড়াই যখন বলল, ‘জানুয়ারী মাস থেকে ২,০০০ টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে, তখনই কুয়াশা ঢাকা আকাশটা মাথায় ভেঙ্গে পড়ল।

আল্লাহকে সব সময় বলি, ‘হে আল্লাহ! মাস যাতে শেষ না হয়। মাস শেষ হলেই তো কত কষ্টের টাকাগুলো বাড়িওয়ালার হাতে তুলে দিতে হবে। অথবা, বাড়িওয়ালা এসে দরজা নক্‌ করে বলবে, “আগামীকাল ব্যাংকে কারেন্ট বিল দিতে যাবো; আপনাদের ভাড়াটা আজই দিয়ে দিন।”
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:২১
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×