১৬অক্টোবর'২০১৬ইং। ঘড়িতে সময় তখন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। ফেনি বায়েরা সাবের আহমেদ এর বাসা থেকে খাবার খেয়ে রওনা হলাম মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পট মুহুরী প্রকল্পের উদ্দেশ্যে। রবি বার থাকায় রাস্তা-ঘাট ছিল ব্যাস্ত। গাড়ি ছুটে চলেছে প্রাকৃতি নৈসর্গে ভরা মহামায়ার দিকে, সামনের দিকে চলছেই আর চলছে। যাওয়ার পথে লালপুল বাজারে কিছু হালকা নাস্তা নেয়ার জন্য থামলাম। [img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/rafiqulslam836/rafiqulslam836-147
8349570-7f7697d_xlarge.jpg
গাড়ীতে ছিলাম আমি ১)রবি ২)রাবু,আমাদের দুই ছেলে সৌরভ ও শওকত,৩)রাবুর বড় বোন মারজাহান.৪)বয়েরা সাবের আহমেদ ও তাদের দুই ছেলে মেয়ে শোয়াইব ও তানজিয়া ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে মুহুরী সেচ প্রকল্প। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দাংশ এবং ফেনী জেলার ফেনী, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার কিয়দাংশের সর্বমোট ৪০,০৮০ হেক্টর (গ্রস) জায়গা জুড়ে এই প্রকল্পের অবস্থান। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর থেকে শুরু হয়ে ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫৬ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বার্ষিক ৭৫,০০০ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন হয়। আমরা প্রথমে বয়ু বিদ্যুত কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলাম।তার পর এলাম ব্রীজ দেকতে। ছেলে মেয়ের ব্রীজ এর উপর লাপালাপি শুরু করল।
বাঁধের অপর পাশে ভরা নদী
খুবই সুন্দর একটা জায়গা এই মুহুরী প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতাধীন যে বাঁধটি রয়েছে তা ফেনী নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। বাঁধের একপাশে দেখতে পাবেন ভরা নদী আর অন্য পাশে দেখতে পাবেন প্রায় পানি শুন্য নদী। নদী যাদের কাছে টানে তাদের জন্য অন্যতম একটা প্রিয় জায়গা হতে পারে এটি। নৌকা ভ্রমন না করে মহামায়ার দিকে রওনা দিলাম।
মহামায়া লেক
মহামায়ার উদ্দেশ্য আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে।ঠাকুরদিঘী বাজারেএসে দুপুরের খাবার খেলাম । মহামায়া সম্পর্কে ব্লগার ও পাঠকদের কিছু বর্ণনা দিই। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশের পর্বত্য এলাকা । যেখানে গিরি-নদীর মিলনস্থলে ছায়া হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে নীলাকাশ। এ যেন কোনও শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রঙে আঁকা ছবি। মিরসরাইয়ের এই সৌন্দর্যকে দেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর মানুষের কাছে আরও সহজে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে এখানে নির্মিত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক 'মহামায়া প্রকল্প'। যেখানে অসংখ্য পাহাড়ের বুক চিরে আসা ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ি ছড়ার মিলন মোহনায় রয়েছে স্বচ্ছ সবুজ জলাধার। পাহাড়ি ঝরনা প্রবাহ হতে সৃষ্ট জলধারা এর সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে
এটি মূলত একটা সেচ প্রকল্প এবং কাপ্তাই লেকের পরে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম লেক। প্রকল্পটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধাণে পরিচালনাধীন। এটি চট্টগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার মিরসরাই উপজেলার ৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজারের প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রকল্পের পুরো নাম- মহামায়া ছড়া সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২৬ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা।
এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝর্ণা ও রাবার ড্যাম। লেকের আয়তন ১১ বর্গ কিলোমিটার। লেকে চাইলে আপনি সাতার কাটতে পারেন এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়তে পারেন। সাতার কাটার সময় তীরের আসে-পাশে থাকা ভালো। কারণ লেকের পানি সাধারণত ভারী হয়ে থাকে, যার ফলে যে কেউ সামান্য সাতার কাটার পর দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এই প্রকল্পের এলাকায় যে পাহাড়ি ঝর্ণা রয়েছে সেটিতে ইঞ্জিন চালিত নৌকার সাহায্যেই গুরতে য়াই। রিজার্ভ ভাড়া গুনতে হয় ৫০০ টাকা (যাওয়া-আসা)।
ঝর্নার দিকে এগিয়ে চলছে আমাদের ভাড়া করা ইঞ্জিন চালিত নৌকা সময় বেশি লাগেনা, যাওয়া-আসায় ২৫-৩০ মিনিটের মত লাগে। ঝর্ণার ঠান্ডা পানি গড়িয়ে পড়ছে তার গন্তব্যের দিকে
এককথায় বলতে গেলে যারা লেক, পাহাড়, ঝর্ণা এই তিনটি একসাথে ভালবাসেন তাদের জন্য একটা আদর্শ জায়গা এই মহামায়া প্রকল্প। অর্থাৎ মহামায়া একটি সেচ প্রকল্প হলেও এতদ অঞ্চলের আকর্ষণীয় পর্টযন স্পট হিসেবে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে এটি। আমরা সেখানে ছবি তুলি।আমারা সকলে অনেক আনন্দ করি।
আশার সময় আমার ছেলের ট্রেন দেখার বায়না পুরন হয়।
কিভাবে যাবেন
সড়ক পথে ঢাকা থেকে -
বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে। আর অন্যান্য এসি, নন এসি বাসগুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভরযোগ্য সার্ভিসগুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক ইত্যাদি । সবগুলো বাসই মিরসরাইতে থামে। মিরসরাই বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা অন্য কোন বাহনে ঠাকুরদিঘী বাজারেএসে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে মহামায়ায় প্রবেশ করতে হয়।
চট্টগ্রাম থেকে -
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার বাসগুলো অলঙ্কার, এ কে খান, কর্ণেলহাট বাস ষ্টেশন থেকে ছাড়ে । আর জেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই আসতে হলে জেলার অভ্যন্তরীন রুটের বাসগুলোতে ভ্রমণ করতে হবে।
ফেনী থেকে -
ফেনী শহর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে নোয়াখালী, কুমিল্লা পরশুরাম, চাঁদপুর ও ফেনীর বাস চলাচল করে। যে কোন বাসে করে আপনি মিরসরাই বা ঠাকুরদিঘী চলে আসতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২