বিকৃত-বন্দী যৌনাকাঙ্ক্ষারই অভিপ্রকাশ ঘটে ধর্ষণের নামে। হাজার হাজার বছর ধরে জারি থাকা পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ধর্ষণ যেন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। দিন দিন বেড়েই চলছে ধর্ষণের ঘটনা।
ধর্ষণে যেসব দেশের বাস্তবতা ভয়াবহ, ভারত তাদের অন্যতম। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান একে ভারতের জাতীয় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেদেশের ধর্ষণের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দেশটির বিখ্যাত লেখিকা রাধা কুমার। তিনি জানান, ভারতে ধর্ষণ নতুন কিছু নয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এক লাখেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলেও জানান তিনি।
১. ক্রোধের বহি:প্রকাশ
এই ধর্ষণের পেছণে রাগ এবং ক্রোধকে একটি বড় কারণ হিসেব উল্লেখ করেন রাধিকা। তার মতে, ধর্ষক সবসময়ই ধর্ষিতার উপরে নিজের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেন। তার উপর শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। ধর্ষকের কাছে ধর্ষণ হচ্ছে ক্ষোভ প্রকাশের এক হাতিয়ার।
২. ক্ষমতার অপচর্চা
ক্ষমতার বহি:প্রকাশ ধর্ষণের আরেকটি বড় কারণ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সবসময়ই হেয় করা হয়। আর ক্ষমতার অপচর্চা হিসেবেই একজন পুরুষ নারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তার উপর নির্যাতন চালায়। একের পর এক ধর্ষণ করতে থাকে।
৩. সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কারণ আসলে সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ বলে জানান রাধা কুমার। যৌনসন্ত্রাসের চরম বহিঃপ্রকাশ এই সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। অল্পবয়সী ছেলেদের মাঝে অনেক সময়ই এটা দেখা যায়। তারা কোনো রকম ছোটো সন্ত্রাসী দলে যুক্ত হয়। তখন বন্ধুদের নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ যেন এক খেলা।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই নারীর উপর দোষ চাপানো হয়। তার পোশাকের অজুহাত কিংবা অনেক রাতে বাইরে থাকাটাও কারণ হিসেবে তুলে ধরে কেউ কেউ। পাপুয়া নিউগিনিতে তো এখনও নারীদের শাস্তির ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিধান রয়েছে।
৪. মাদকাসক্তি
মদ্যপ থাকাটাও অনেক সময় ধর্ষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যৌনসন্ত্রাস এর ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায় যে ধর্ষক মাদকাসক্ত। কোকেইনসহ অন্যান্য ড্রাগস মানসিক বিকৃতি ঘটায় এবং এই বিকৃতির ফল হয় ধর্ষণ। অ্যালকোহল এবং সহিংসতার এই সম্পর্ক বেশ জটিল। সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এই সম্পর্ক তুলে ধরেন।
৫. দু:খের বহি:প্রকাশ
অনেক সময় ধর্ষক ব্যক্তিগত জীবনে ভারাক্রান্ত থাকেন। দুঃখ-দুর্দশা ভোলার জন্য তারা তখন ধর্ষণকে বেছে নেন। তারা নিজেদের দুঃখ লাঘবে ঝাঁপিয়ে পড়েন অসহায় কোনো নারীর উপর। যৌন উত্তেজনা যেন তাদের কষ্টের ওষুধ।
৬. পূর্ব পরিকল্পনা
ধর্ষণের শিকার নারীরা প্রায়ই তাদের পরিচিত কারো কাছেই নির্যাতনের শিকার হন। অর্থাৎ ধর্ষক হয়তো আগে থেকেই ধর্ষণের পরিকল্পনা ছিলো।
৭. মানসিক বিকৃতি
গবেষণায় দেখা যায় ধর্ষক মানসিক ভারসাম্যহীন। তারা প্রায়ই ধর্ষণের শিকার নারীকে দোষারোপ করে এবং সে বুঝতেই পারে না যে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির উপর কী প্রভাব ফেলছে। তারা নিজেরাই অনেক কল্পনা করে এবং সেটা চারপাশের কোনো নারীর উপর প্রয়োগ করতে চায়। তারা ধর্ষণের সময় সহিংসতা পছন্দ করে এবং নারীরা তাদের সমর্থন না দিলে আরো সহিংস হয়ে ওঠে।
৮. পরিবারের অসহযোগিতা
পারিবারিক সম্মানের খাতিরে অনেক সময়ই মেয়েদের নির্যাতন চুপ করে সহ্য করে নেয় বাবা-মা। ধর্ষককে না শাস্তি দিয়ে নিজেদের মেয়ের উপর দোষ চাপায়। তারা ভয় পায় সবার সামনে ব্যাপারটি চলে আসলে হয়তো সম্মান চলে যাবে, মেয়ের বিয়ে হবে না। আর পারিবারিক এই অসহযোগিতার কারণে ধর্ষণ বেশি হয়।
৯. শৈশবের স্মৃতি
গবেষণায় দেখা যায় যেসকল শিশু যৌনসন্ত্রাসের শিকার হয় তারাই পরবর্তীতে ধর্ষণ করে। শিশুর পরিপার্শ্বই তাকে আসলে এভাবে গড়ে তোলে। ধর্ষকদের অনেকেই শৈশবে যৌনসন্ত্রাসের শিকার।
১০. দারিদ্রতা
দারিদ্র্য ধর্ষণের বড় কারণ। দরিদ্র নারীদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার ভয় সবচেয়ে বেশি। অনেক লেখকেই বলেছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে যৌনসন্ত্রাসের একটি সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:০৯