গতকালকেই তুষারঝড়ের পূর্বাভাস ছিলো, বেশি পাত্তা দেইনি। এই ফেব্রুয়ারিতে আর কী বা হবে, তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু কাল সন্ধ্যা থেকে প্রবল ভাবে বরফ পড়া শুরু করলো। আমি প্রথমে বাইরে দেখিনি, ঘুমোতে যাবার আগে বাইরে তাকিয়ে তো অবাক!! অন্তত করে হলেও ৪-৫ ইঞ্চি বরফ পড়েছে। গত সপ্তাহের বরফ এখনো গলেনি, আর এই টুকু যোগ হওয়াতে তো একে বারে যাচ্ছেতাই অবস্থা।
সকালে অন্ধকার অন্ধকার লাগাতে ঘুম ভাংছিলোনা সহজে। পরে উঠে দেখি, বাইরে এক হাঁটু বরফ জমে আছে। পার্কিং লটে গাড়িগুলার চাকা প্রায় ডুবে গেছে বরফে পুরাপুরি। আর মেইল চেক করে দেখি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আজকে ছুটি ঘোষণা করেছে। এটা এক বিশাল ব্যাপার, কারণ গত তিন বছরে হাজার প্রাকৃতিক দূর্যোগ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি দেয়নি কোনোদিন। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ হতো মাঝে মধ্যে হালকা ঠান্ডা পড়লেই, আর আমি বসে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মুন্ডুপাৎ করতাম, ছুটি দেয়না বলে।
পরে আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকা পড়ে দেখি, ২৮ বছর পর এই প্রথম আমার বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন বন্ধ হলো। শেষ হয়েছিলো ১৯৭৯ সালে।
বিকালে ভাবলাম, অন্ততঃ একবার বাইরে গিয়ে দেখি কী অবস্থা। অ্যাস্ট্রোনটদের মতো মোটা গ্লাভস পরলাম, আর আমার গোড়ালি ঢাকা জুতাটা। দরজার বাইরে বেরুতে পারছিলামনা, বরফ আটকে রেখেছে বিল্ডিং এর দরজা। আমার প্রতিবেশী তাইওয়ানী ছেলেটা কোদাল নিয়ে বেরুলো, বরফ সরাবে বলে। আমিও আমারটা নিয়ে আসলাম (কোদাল পেলাম কোথায়? ইউনিভার্সিটির সব অ্যাপার্টমেন্টেই একটা করে দিয়েছে, আগে বুঝিনি কেনো দিয়েছে)। দুজনে মিলে ১৫ মিনিট ধরে বরফ সরিয়ে অন্তত হাঁটার পথটা পরিষ্কারের চেষ্টা করলাম। কিছুই লাভ হলোনা। বরং সাইবেরিয়ার মতো হুহু করে বয়ে যাওয়া বাতাস, আর তাতে ভেসে আসা বরফ আমার সারা শরীরে লেগে গেলো। হাতের আঙ্গুলে প্রচন্ড ব্যথা, ফ্রস্টবাইটের মতো, তাই কেটে পড়লাম।
পরে ভাবলাম, একটু ছবি তোলা যাক। শুরুতে ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে কিছু ছবি আর ভিডিও করলাম। তার পর আবার অভিযাত্রীর বেশে বেরুলাম। পা ফেলি আর পার্কিং লটের মধ্যে হাঁটু পর্যন্ত ডুবে যায়।আমার গাড়ির কাছে গেলাম, এক জনের সাথে দেখা করার প্ল্যান ছিলো, ভাবলাম দেখি যাওয়া যায় নাকি। গাড়ির আশে পাশে কোদাল চালিয়ে কিছু বরফ সরানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু অনেক কসরৎ করেও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ৫ ফুটের বেশি নড়ানো গেলোনা।
তাই খ্যামা দিয়ে চলে এলাম ঘরের ছেলে ঘরে। এস্কিমো বা ইনুইট গোত্রের কারো সাথে যোগাযোগ করতে হবে, ইগলু কিভাবে বানাতে হয়, তা শেখার জন্য। যা বরফ দেখলাম, তাতে মনে হয় ওটাই কাজে লাগবে।
ভিডিওঃ
এই বরফের ভিডিও ও আমার চাপাবাজি-মার্কা ধারাবর্ণনা শুনতে চাইলে দেখুন
* !@@!490558 !@@!490559 !@@!490560 !@@!490561
*!@@!490562 !@@!490563 !@@!490564 !@@!490565 !@@!490566
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০