somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকার এপার ওপারঃ সমতল থেকে পর্বতে

২৮ শে মে, ২০০৭ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইওয়া স্টেট বিখ্যাত হলো গম চাষের জন্য। এছাড়াও ভুট্টা চাষেও এরা এগিয়ে। ফলে আইওয়া পার হওয়ার সময় ভুট্টা বা গম ক্ষেত দেখা, আর দু একটা গরুর ঘাস খাওয়া ছাড়া আর কিছুই দেখা হয় নি।

নেব্রাস্কাতেও অবস্থা তথৈবচ। প্রচন্ড সমতল ভূমি, এক জায়গায় তো প্রায় ৪০ মাইলের মতো সরলরৈখিক যাত্রা।

যাত্রার প্রথম দিন সকাল দশটার বদলে বেলা সাড়ে তিনটায় রওনা হয়েছিলাম, পেরিয়েছি মাত্র ৩৫০ মাইল। তাই ক্ষতিপূরণ করার জন্য দ্বিতীয় দিন লম্বা টান দিলাম। আইওয়ার দ্য মইন শহর থেকে বেলা ১১টায় রওনা হয়ে বিকালের দিকে নেব্রাস্কার শহর লিংকনে কিছুক্ষণ থামলাম। কিন্তু লক্ষ্য রাতের মধ্যে পরের স্টেট ওয়াইওমিং এ পৌছানো। তাই চালাতে থাকলাম।

গরম কালে এখানে সূর্য অস্ত যায় অনেক দেরিতে। রাত ৮টার সময় সূর্য ডুবে, আর আলো থাকে আরো ঘন্টা খানেক। এভাবে রাত ১০টা পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে ওয়াইওমিং এর সীমান্তে এসে পৌছালাম।

কিশোর বয়সে প্রচুর পড়েছি, সেবা প্রকাশনীর ওয়েস্টার্ন বই, আর ঐ বই গুলোতে ওয়াইওমিং এর কথা রয়েছে অনেক। এটা আমেরিকার সবচেয়ে জনবিরল রাজ্য। পুরা স্টেটের লোকসংখ্যা মাত্র ৫লাখ। অথচ এলাকায় এটা বাংলাদেশের দ্বিগুন।

ওয়াইওমিং এ পৌছানো মাত্র টের পেলাম, সমতল ভূমি পেরিয়ে এসেছি, পাহাড় পর্বত শুরু হলো। ওয়াইওমিং স্টেটের প্রস্থ হলো ৩৭৫ মাইলের মতো, এখানে আস্তে আস্তে রাস্তা উপরে উঠতে উঠতে স্টেটের মাঝখান নাগাদ প্রায় ৬০০০ ফুট উচুতে উঠে যায়। রাস্তার দুপাশে পাহাড়, আর অনেক জায়গায় এই মে মাসেও বরফ জমে আছে। বাংলাদেশের পাহাড়ি শহর চট্টগ্রামের বাসিন্দা হলেও দেখেছি কেবল মাটির পাহাড়, এখানে এসে পাথরের পর্বত দেখা আর তা ডিঙানো হলো।

যাহোক, এত কিছু দেখেছি পরের দিনে, আগের রাতের অন্ধকারে আর কিছুই দেখিনি। রাত ১১টার দিকে যখন আমাদের রাতের গন্তব্য শাইয়ান শহরে পৌছানোর চেষ্টা করছি, তখন পথে ঘোর অন্ধকারের মধ্য দিয়ে আঁকা বাঁকা পাহাড়ি রাস্তা পেরুতে হয়েছি বিস্তর। গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো আবার বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার কাজ চলছে, ফলে দুই লেনের হাইওয়ে এক লেন হয়ে গেছে, ব্যারিকেডের মধ্য দিয়ে খুব সাবধানে অন্ধকারে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

এর মধ্যে আবার অন্য সমস্যা উদয় হলো। পাহাড়ি জায়গায় পোকা থাকে জানতাম, কিন্তু পঙ্গপালের মতো পোকার মেঘ রাস্থা ঢেকে রেখেছিলো। ফলে গাড়ির কাঁচ আর হেডলাইটের আলো ঝাপসা হয়ে শেষ (পরের দিন আধা ঘন্টা ধরে কাঁচ আর হেডলাইট সাফ করেছি)।

শেষে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে পৌছালাম শাইয়ান শহরে। Cheyenne এর উচ্চারণ শাই-আন। এটা ওয়াইওমিং এর রাজধানী, ও বৃহত্তম শহর। জনসংখ্যা কত তা শুনলে অবশ্য হাসি পায়, মাত্র ৫৫ হাজার!! (আমার মনে হয় ঢাকার একটা মহল্লাতেও এর বেশি লোক থাকে)। তবে শহরের এলাকাটা খুব সুন্দর, পাহাড়ের মাঝে মালভূমির মতো। শহরের পত্তন হয়েছিলো উনবিংশ শতকে কাউবয় আর র‌্যাঞ্চারদের ওয়েস্টার্ন যুগে, গরু পালন আর অন্যত্র প্রেরণের কেন্দ্র হিসাবে। শহরের নাম এসেছে এখানে বাস করা শাই-আনাহ নামের নেটিভ আমেরিকানদের নাম হতে। আজ অবশ্য তারা নেই, তাদের বদলে সাদারাই এখানকার প্রধান বাসিন্দা।

প্লান ছিলো, শাইয়ান শহরে ঢুকে ডেইজ ইন বা অন্য কোনো মোটেলে থাকবো। আগে বুকিং দেয়া হয়নি, ভেবেছিলাম হাজির হলেই হবে। কিন্তু বিধি বাম, রাত ১২টার সময় হলিডে ইন, ডেইজ ইন সহ গোটা দশেক মোটেল চষে ফেললাম, কোনো কারণে ঐ রাতে কোনো হোটেলে একটা রুমও নেই। কঠিন চিন্তার কথা, আর সামনে কয়েকশো মাইলের মধ্যে অন্য কোনো শহরও নেই যে সেখানে যাবো। জারিয়ার তো প্রায় কেঁদে ফেলার দশা।

রক্ষাকর্তা হয়ে এলো গুগলের ফোন ভিত্তিক সার্ভিস। গুগল ৪১১ এর নম্বরে ফোন করে বললাম শহর আর স্টেটের নাম, আর মোটেল খুঁজছি, এটা। ভয়েস রিকগনিশন সফটওয়ার আমার কথা থেকে শব্দ নিয়ে সার্চ করে রেজাল্ট হিসাবে মোটেলের তালিকা বললো। তা থেকে খুঁজতে খুঁজতে পেলাম "লিটল আমেরিকা" রিসর্ট। জলদি সেখানে গিয়ে তো অবাক, অন্য হোটেলে যা ভাড়া চেয়েছে, তার অনেক কমে চমৎকার একটা রিসর্ট। হিলটনের চাইতেও অনেক চমৎকার রুমগুলো, আলাদা বারান্দা সহ। পরে জেনেছি এটা এখানকার স্থানীয় রিসর্ট চেইন, বাইরে অতো নাম ডাক নেই, কিন্তু স্টেটের ভিতরে বেশ বিখ্যাত।

দিন শেষে কত পথ চলেছি হিসাব করতে বসে বিস্মিত হলাম, সারা দিনে চলেছি ৬৫০ মাইল! এক দিনে মোট ১৩ ঘন্টার মতো গাড়ি চালিয়েছি (মাঝে খাওয়া ও তেল নেয়ার বিরতি সহ)। আমার আগের ব্যক্তিগত রেকর্ড ছিল আগের দিন ৩৫০ মাইল চালানো। যাহোক, অন্তত প্রথম দিনের দেরির ক্ষতি পূরণ করতে পারলাম।

(ছবিগুলো গাড়ির ভেতর থেকে আমার বৌ এর তোলা ওয়াইওমিং এর পাহাড় পর্বতের দৃশ্য। সাদা রঙের পাহাড়টা আসলে বরফের কারণে সাদা হয়ে আছে।)

[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০০৭ দুপুর ২:২৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×