somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকার এপার ওপারঃ মরমনদের রাজ্যে

২৯ শে মে, ২০০৭ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়াইওমিং থেকেই পাহাড় ডিঙানো শুরু হলো। আগের রাতে দেখে রেখেছিলাম, ওয়াইওমিং এর মাঝামাঝি একটা জায়গা সমূদ্র সমতল থেকে প্রায় ৬০০০ ফুট উঁচুতে রয়েছে। হাইওয়ে আই-৮০ ঠিক ঐ জায়গা দিয়েই গেছে।

রাস্তা আস্তে আস্তে উপরে উঠছে, অনেক জায়গায় েষ্টা করেও গাড়ির গতি ৪৫ মাইলের বেশি তুলতে পারিনি, এতোই খাড়া রাস্তা। যাহোক, বিদ্ঘুটে সব পাহাড় পর্বত পেরিয়ে পেরিয়ে দিন শেষে এসে পৌছালাম ইউটাহ'র সল্ট লেক সিটিতে।

ইউটাহ বেশ ইন্টারেস্টিং একটা স্টেইট। এই স্টেইটটাই হলো মরমনদের ঘাঁটি।

মরমন কি সেটা বলা যাক। উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে জোসেফ স্মিথ নামের এক লোক স্বপ্ন দেখলেন, এক ফেরেশতা তাঁকে এসে বলছে, তাঁর বাড়ির কাছে এক পাহাড়ে মাটির নীচে সোনার পাতায় লেখা একটা বই রয়েছে। বইতে লেখা আছে যীশু খ্রিস্টের কথা। মূল থীমটা হলো, বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ আদি রূপে নাই, এই বইটার মাধ্যমে ফিরে আসবে খ্রিস্ট ধর্মের মূল কথা ইত্যাদি ইত্যাদি। বইটা মিশরী হায়েরোগ্লিফিকে লেখা, যা পড়ার কৌশল জোসেফ স্মিথকে ঐ ফেরেশতা বাতলে দিয়েছিলো। তবে বইটা টুকে নেয়ার পরে ঐ সোনার পাতাগুলো ফেরেশতা নিয়ে চলে গেছিলো। স্মিথ নিজেকে নবী হিসাবে ঘোষণা করেন এবং বুক অফ মরমনের মাধ্যমে ধর্ম প্রচার শুরু করেন।

নিউইয়র্কের লোকেরা জোসেফ স্মিথের এসব কথা বিশ্বাস করেনি, বরং মারধর করে ভাগিয়ে দিয়েছিলো। অবশ্য জোসেফ স্মিথের অনুসারীও জুটে গেছিলো অনেক। তাদের নিয়ে স্মিথ চলে আসেন মিসৌরীর ইন্ডিপেন্ডেন্স এলাকায়। কিন্তু সেখান থেকেও তাড়িয়ে দেয়া হয় এদের। চলে আসে তারা ইলিনয়ে। কিন্তু গোড়া খ্রিস্টানেরা মরমনদের জীবনাচরণ সহ্য করেনি, ১৮৪৪ সালে এক দল খ্রিস্টান এসে জোসেফ স্মিথকে ফাঁসিতে লটকে মেরে ফেলে।

ব্রিগহাম ইয়ং এর নেতৃত্বে মরমনেরা পশ্চিমে গিয়ে জনবিরল ইউটাহ এলাকায় বসতি গাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য পাহাড় পেরিয়ে, বিশাল তৃণভূমি পেরিয়ে তারা যাত্রা শুরু করে। ঐ সময় তাদের অনেকের ঘোড়ার গাড়িও ছিলো না, তাই হাতে টানা ঠেলাগাড়িতে করে জিনিষ নিয়ে রওনা হয় কয়েক হাজার মরমন।

ইউটাহে মরমনদের স্বপ্নের ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। গোড়া রক্ষনশীলতা ছাড়াও মরমনদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য ছিলো বহুবিবাহ, যা খ্রিস্টান ধর্মের অন্য অধিকাংশ গোষ্ঠী প্রচন্ড ঘৃণার চোখে দেখতো। মরমনেরা একেক জন ৪-১০টি করে বিয়ে করতো। পরে অবশ্য ১৮৯২ সালের দিকে ইউটাহ যখন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হতে চায়, তখন তাদের শর্ত দেয়া হয়, বহুবিবাহ বাদ দিতে হবে। ঐ সময় হঠাত করে মরমনদের তখনকার নবী "স্বপ্ন দেখলেন", বহুবিবাহ বাদ দেয়ার কথা কোনো ফেরেশতা এসে তাঁকে বলছে।

সল্ট লেক সিটিতে তাদের প্রধান মন্দির অবস্থিত (ওরা ওদের চার্চকে মন্দির বলে)। পুরা স্টেইটেই মরমনদের প্রভাব বেশ। অবশ্য আজও মরমনদের অন্য খ্রিস্টানেরা একটু খারাপ চোখে দেখে, মরমনদের অনেকেও আবার গোপনে ৩/৪ বৌ নিয়ে চলে। কিছু দিন পর পরই দুয়েকজন মরমনের শাস্তি হয় বহুগামিতার দায়ে।

যাহোক, আমরা সল্ট লেক সিটিতে ছিলাম একেবারে শহরের কেন্দ্রে, টেম্পল স্কয়ারের পাশে। সকালে উঠে যাত্রা শুরু না করে আমি আর জারিয়া চলে গেলাম টেম্পল স্কয়ারে। ওখানে রয়েছে মরমনদের সোনা মোড়ানো গোল্ডেন টেম্পল, ব্রিগহাম ইয়ং এর বাড়ি, ওদের অ্যাসেম্বলি হল, মরমন চার্চের প্রধান কেন্দ্র, ইত্যাদি ইত্যাদি। মরমনরা সারা দুনিয়ার বহু ভাষা জানা সিস্টারদের প্রস্তুত রেখেছে, দুনিয়ার যে দেশ থেকে লোক আসে, তাদের নিজের ভাষায় মরমনদের গুণগান গেয়ে বেড়ায়।

সল্টলেক থেকে বেরুতে বেরুতে লাগলো বিকাল ৩টা। শহর থেকে বেরুতেই পড়লো গ্রেট সল্ট লেক। অসাধারণ দৃশ্য, তবে আজ আর না, কালকে লিখবো সেটার কথা।

(ছবিগুলো ওয়াইওমিং এর পাহাড়, এবং মরমন টেম্পল স্কয়ার এলাকার)

[চলবে]

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৩:০৭
২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×