somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকার এপার ওপার - সল্ট লেক থেকে উইনেমুকা

৩১ শে মে, ২০০৭ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সল্টলেক সিটির মরমন মন্দির দেখে বেরুতে বেরুতে বিকাল তিনটা। আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, ঐ দিন আর বেশি চালাবোনা, সাড়ে তিনশ মাইলের পরে থামবো। যাত্রা বাকি আর ৭০০ মাইলের মতো, তার মানে ২২০০ মাইল পথের ১৫০০ মাইল পেরিয়ে এসেছি।

সল্ট লেক সিটি থেকে বেরিয়ে একটু আসতেই অসাধারণ এক দৃশ্য চোখে পড়লো। হাইওয়েটা চলে গেছে সল্ট লেকের পাশ দিয়ে, আর তার ওপারে রয়েছে পাহাড়। জারিয়া জানালার মধ্য দিয়ে মনের সুখে ছবি তুলে চললো। আমিও চলার ফাঁকে ফাঁকে দেখতে লাগলাম।

প্রাগৈতিহাসিক যুগে এখানে বিশাল বড়ো একটা হ্রদ ছিলো। আস্তে আস্তে শুকিয়ে গিয়ে আকারে অনেক ছোট হয়ে এসেছে, তার পরেও এই হ্রদটার ক্ষেত্রফল হলো ১৭০০ থেকে ৩৪০০ বর্গমাইল। এর ক্ষেত্রফল প্রতিনিয়ত পালটায়, খুব অগভীর বলে শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে ছোট হয়ে আসে। এটা দুনিয়ার ৪র্থ বৃহত্তম সমাপনী হ্রদ (যেখানে নদী এসে শেষ হয়েছে), আর সব ধরণের হ্রদের মধ্যে এটা আকারে ৩৪তম।

এই সল্ট লেকের পানি কিন্তু প্রচন্ড লবনাক্ত। আসলে তিনটা নদী এখানে খনিজ লবনে পূর্ণ পানি নিয়ে আসে, কিন্তু বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়ার সময় লবন রয়ে যায়। লাখ লাখ বছর ধরে এভাবে চলতে থাকায় হ্রদের পানি লবনে সম্পৃক্ত। আর এতো বেশি লবন থাকার জন্য এখানে মানুষ ডুবে না, ভেসেই থাকে এমনি এমনি। হ্রদে মাছ নেই বেশি, তবে লবন পানির চিংড়ি, আর বিভিন্ন সারস জাতীয় পাখি রয়েছি অনেক।

ঐ যে বলেছিলাম, প্রাগৈতিহাসিক কালে হ্রদটা আরো অনেক বড় ছিলো, তাহলে হ্রদের আগের এলাকায় কী হয়েছে? সেটাই দেখার মতো আরো চমৎকার জিনিষ। বনভিল সল্ট ফ্ল্যাট, বা বনভিলের লবন সমতল হলো হ্রদের পুরানো এলাকা - মরুভূমিতে যেমন বালি জমে থাকে, এখানে তেমন যতদূর চোখ যায়, ধবধবে সাদা লবন জমে আছে। অসাধারণ দৃশ্য , লবনের সাদা প্রান্তরের মধ্য দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। দূরে লবনের প্রান্তরের মধ্য থেকে হঠাৎ গজানো পাহাড়গুলোকে মনে হচ্ছে, যেনো শূন্যে ভেসে আছে।

ইউটাহ যখন শেষ হয়ে আসছে, তখন আরেকটা ইন্টারেস্টিং জিনিষ চোখে পড়লো। প্রায় ৪০ মাইল পথ একেবারে সোজা রাস্তা চলে গেছে। একটুও বাঁক নেই। তাকালে সামনে বহু দূরে পথ দেখা যাচ্ছে। আমার ২২০০ মাইল যাত্রায় এরকম আর চোখে পড়েনি।

নেভাডাতে প্রবেশের মুখেই শুরু হলো সিয়েরা নেভাডা পর্বতমালা। পাহাড় পর্বতে পুরো পথ ভর্তি, প্রচন্ড জনবিরল। আর শুরু হলো মরুভূমি। অবশ্য সিনেমাতে দেখা মরুভূমির মতো ধুধু বালি নয়, এই মরুভূমিটা ক্যাকটাসের ঝোপে ভর্তি।

উইনেমুকা। নামটাই কেমন বিদঘুটে, কিন্তু এই শহরটা হলো সল্ট লেক হতে ক্যালিফোর্নিয়ার ঠিক মাঝপথে। তাই এখানেই থামার প্ল্যান করেছিলাম। নেভাডা আমেরিকার খুব অল্প এলাকার একটি, যেখানে জুয়া খেলা বৈধ। জুয়ার নগরী লাস ভেগাস নেভাডাতেই অবস্থিত, তবে দক্ষিণ মাথায়। আমরা যাচ্ছি মাঝের
রাস্তা দিয়ে। উইনেমুকা শহরে এসে পৌছেছি রাত ১০টার দিকে, একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বেরুলাম। শহর প্রচন্ড ছোট, থাকে কেবল হাজার পাঁচেক লোক, কিন্তু নেভাডা তো, কাজেই এখানেও ক্যাসিনোর কমতি নেই। লাস ভেগাসে আমরা দুইবার গেছি, তাই ক্যাসিনো দেখেছি ঢের। তবে এই ছোট শহরেও দেখি

মধ্যরাতেও প্রচুর লোক ক্যাসিনোতে হাজির। এই ক্যাসিনোতে রাতের খাওয়া সেরে, স্লট মেশিনের আশে পাশে ঢু মেরে, রুমে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেলো।


[ছবিগুলো ক্যামেরা ফোনে জারিয়ার হাতে তোলা, অনেক ছবিতেই ধবধবে সাদা যা দেখছেন, তা কিন্তু পানি না, বরং লবনে ঢাকা প্রান্তর। আর একটা পাহাড় খোদাই করে তৈরী করা একটা টানেলের ছবি আছে, ওর মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়াটা ছিলো এক নতুন অভিজ্ঞতা]

[আগামী পর্বে সমাপ্য]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০০৭ সকাল ১১:৫৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×