somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিগারেট এবং কবিতা

০২ রা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিদুন ভাই তার রেসিং সাইকেলটা নিয়ে “মামার বাড়ি - ১০৫” –এর সামনে এসে দাঁড়াল। হাতে যথারীতি কোকের একটা বোতল। আরেক হাতে আধপোড়া সিগারেট। দুই কানে কাঠমিস্ত্রির মতো পেনসিলের বদলে দু’টি সিগারেট স্থলাভিসিক্ত। ব্যাকআপ হিসাবে রেখে দিয়েছেন। সিট থেকে না নেমে মিষ্টি একটা লাজুক হাসি দিয়ে বললেন, রঙ্গন! একটা কবিতা লিখে দিতে হবে। বিনিময়ে এক কার্টুন বেনসন।
আমি তো ভাই বেনসন খাই না। তাহলে গোল্ডলিফের কার্টুন আর কোক ছয়টা।
বললেন, ফাটাফাটি যেন হয়। কিন্তু কিসের কবিতা বলবেন তো?
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে হাতে ধরিয়ে দিলেন। রুমের সবাই কাগজটার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। দেখলাম মেয়েলি হাতের লিখা একটা ছড়া। “সফদার ডাক্তার”-এর কোলাজ। “রিদুনের রিদুনামি”।
..................................................
রিদুনের রিদুনামি বুয়েটের ক্যাম্পাসে
ধুপ-ধাপ ধুম-ধাম কত কিছু ঘটেরে
লিকলিকে কালা ঠ্যাঙ জোড়াতালি হাফপ্যান্ট
ক্রিকেটের বলহাতে ফুটবল খেলেরে।।
ভরপেট তিনবেলা ভাত খায় গামলা,
যেন ঘানিটানা বলদের মজুরের কামলা।
এদিকে রিদুন ভায়া আয়নাকে বলে রোজ
আমি দেখি কালা না খানিকটা শ্যামলা(!)
লোকে বলে আহারে(!)
উহুরে কি ভাবেরে
আরেকটু সাদা হলে কালা বলা যেতরে!
রাস্তার ললনারা এইবেলা সাবধান,
রিদুনের হৃদয়টি শতমাইল বেগবান।
সিনাটাকে ফুলিয়ে পিঠটান করে সে,
রমণী হরণে মন আহা উহু করে রে।
এইবার রিদুনামি মহাখালী বাসস্ট্যান্ড,
পরনে এখনো সেই জোড়াতালী হাফপ্যান্ট।
ভগিনীর ফেরেন্ডরা বসে আছে বাসেতে,
“ইমপ্রেস করবই” – ঠেকায় কে আমারে”।
এইভেবে রিদুলাল বাসটার পেছনে
প্রাণপণ দেয় ছুট দাঁতমুখ খিঁচায়ে।
রিদুনের রিদুনামি কত কি যে বন্দনা
মাথাটাতে ছিট আছে (হৃদয়টা মন্দ না)।
..................................................
....এবার বলেন, মেয়েটা কে। কী করে? কোথায় পড়ে? কী সম্পর্ক? দেখতে কেমন? এক গাদা প্রশ্ন।
এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। লিখবা কিনা কও?
কবিতা লিখা কি ডালভাত? শানে নুযুল না জেনে কিভাবে লিখি? চিন্তিত ভঙ্গিতে বললাম।
আচ্ছা, তাহলে শুনো। বেচারের মুখ চোখ লজ্জায় লাল। নাকি আর একটু কালো? নতুন প্রেমে পড়া হাই ইশকুলের কালো ছেলেটির মত।
আমি কঠিন সিরিয়াস হয়ে হাত-পা ঝেড়েঝুড়ে বসলাম।
কেউ একজন গলা খাঁকারি দিল। আর একটা কোক হলে মন্দ হত হত না, কি কস, রিদুন্যা?
এক কান থেকে সেগারেট বেরিয়ে এল ঠোঁটে। যেন রবিন হুড তার ধনুকে শর পরিয়ে শত্রু নিধনে প্রস্তুত।
ঘটনা হল, মেয়েটির নাম স্বর্ণা। ময়মনসিংহ মেডিকেলের সেকেন্ড ইয়ার। বোনের রুমমেট। ওর ভাইয়ের সাথে আমার বোনের বিয়ে।
আমরা একসাথে বলে উঠলাম, মানে বেয়াইন! তাই বলেন! তো উনি এখন কোথায়? ছড়াটা পেলেন কীভাবে?
আমাদের বাসায়। এখন ছন্দে ছন্দে এর উত্তর দাও। আমি সিগারেট নিয়ে আসি। সিগারেট ছাড়া তো আবার আমাদের কবির কবিতা আসে না।
আরে! রাখেন আপনার সিগারেট। মেয়েরে না দেখলে কবিতা হবে না।
যেন তৈরি ছিল। গলা থেকে পেন ড্রাইভটা খুলে বাড়িয়ে দিল।
জুম ইন করে করে দেখলাম একে একে সবক'টা ছবি। উনার সামনে যতটা শালীনভাবে সম্ভব।
সিগারেট আগুনে পোড়াতে পোড়াতে লিখে ফেললাম। জন্ম নিল “সাদাকালো”।
..................................................
গোলগাল চেহারায় রঙচঙ লাগিয়ে,
ছড়াখানি লিখেছ তালগোল পাকিয়ে।
কালোর ভিতরে কেন সাদা মন খুঁজলে?
আর কী কী খুঁজে পাও চোখদু’টি বুঁজলে?
সাদাকালো স্বপ্নেরা কতরাত জ্বালিয়ে
ঘুমুতে দেয়নি মোটে বলবে না বানিয়ে।
মুগ্ধ হতে গিয়ে আয়নায় যতবার
তাকিয়েছি, পারিনি স্বরূপে কোনবার।
তোমার গোলালু চোখে নিজেকে খুঁজে পেয়ে,
মুগ্ধ না যতটা, বিব্রত তারচেয়ে।
দুষ্টু হাওয়ায় যদি মুখে চুল উড়ালে,
সরিয়ে আবার কেন চোখ দু’টি ঘুরালে?
এনাটমি ছেড়ে দিয়ে আজ তুমি স্বর্ণা,
সাইকোলজির ক্লাসে কেন দিলে ধর্ণা?
যে ঘরে আমায় রাখো, আমি তার আয়তন।
তোমার হৃদয়ে শুধু আমারি যে বিচরণ।।
..................................................
পরের ঘটনা না হয় আরেক দিন বলব।
খুব ঘুম পাচ্ছে রে ভাই।
এই সামহোয়্যারইনব্লগ গত কয়েকদিন একদম ঘুমাতে দেয়নি।
শুভ সকাল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৮:২২
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×