somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র মিরাজ শরীফ সংক্রান্ত বিশুদ্ধ আক্বীদা

২৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পবিত্র রজবুল হারাম মাস উনার ২৭ তারিখ দিবাগত রাতটিই পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার রাত। এ রাত এক বেমেছাল রাত। এ রাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতে গিয়েছিলেন।

পবিত্র মিরাজ শরীফ এলেই উলামায়ে সূ গং বলতে থাকে যে, পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য আছে, তাই পালন করা উচিত নয়। এর জবাবে বলতে হয়, কোন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলে যদি তা পালন নিষিদ্ধ হয় তাহলে উলামায়ে সূ’রা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এক মানে কেন? কারণ হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেব-দেবী, আবার খৃষ্টানদের ৩ জন সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং মতপার্থক্য থাকলে মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতটি গ্রহন করতে হবে। মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো পবিত্র রজব মাস উনার ২৭ তারিখ রাতে সোমবার শরীফ-এ অর্থাৎ ২৬শে রজব দিবাগত রাতে। যেমনঃ এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য মুহাদ্দিছ আরিফ বিল্লাহ আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতে লিখা ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন, "জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই।"

আবার এক শ্রেণীর উলামায়ে সূ’রা বলে থাকে, পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার মক্কা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত ঘটনা বিশ্বাস করা ফরয এবং বাকী অংশ বিশ্বাস করা নফল। তাদের এই কুফরী মুলক বক্তব্যের জবাবে বলতে হয়ে, মিরাজ শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উম্মতে মুহম্মদীর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায হাদিয়া করেছেন যা মুসলমানদের জন্য আদায় করা ফরয করা হয়েছে। তাহলে নামায সংশ্লিষ্ট সেই ঘটনা বিশ্বাস করা কি করে নফল হতে পারে? মূলতঃ পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার পুরো ঘটনা বিশ্বাস করাই ফরয। কারণ মিরাজ শরীফ আংশিক বিশ্বাস করা নামায অস্বীকারের নামান্তর, আর ইসলামের পাঁচ রুকনের একটি রুকন অস্বীকারকারী মুসলমান থাকতে পারেনা।

পবিত্র মিরাজ শরীফ এলেই উলামায়ে সূ’রা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক প্রসঙ্গে কুফরী আক্বীদা প্রচার করতে থাকে। তারা বলে থাকে যে,পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার রাতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করে শয়তানের অংশ বের করা হয়েছিল। (নাঊযুবিল্লাহ!) ওই সমস্ত উলামায়ে সূ’দের কাছে প্রশ্ন- তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা ইনশিরাহ উনার ১ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,"আমি কি আপনার বক্ষ মুবারক উনাকে প্রশস্ত (চাক) করেনি?" যদি শয়তানের অংশই থাকতো নাঊযুবিল্লাহ! তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেন, আমি কি আপনার ক্বলব মুবারক-কে প্রশস্ত (চাক) করিনি? মূলত, সিনা মুবারক চাক উনার সীমাহীন মর্যাদারই বহিঃপ্রকাশ। আবূ দাউদ, নাসায়ী, মুসনদে আব্দুর রাযযাক ইত্যাদি কিতাবের হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত, ইস্তিঞ্জা মুবারক পান করার কারণে পানকারী ব্যক্তি জান্নাতী বলে সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘দুররুল মুখতার-এ উল্লেখ আছে যে,মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম এবং সে সমস্ত নিয়ামত মুবারক যার বা যাঁদের ভিতর প্রবেশ করেছে বা করবে উনার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক থেকে নাপাকী বের করা হয়েছে? (নাউযুবিল্লাহ! ) একমাত্র কাট্টা কাফিরের পক্ষেই এ ধরনের কথা উচ্চারণ করা সম্ভব।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মিরাজ শরীফ শেষ করে ফিরে আসার পরও ওযু মুবারক উনার পানি মুবারক গড়িয়ে পড়ছিল, দরজা মুবারক উনার কড়া নড়ছিল এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারক গরম ছিল। এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত ও নামধারী মাওলানারা বলে থাকে যে, যেহেতু পবিত্র মিরাজ শরীফ ২৭ বছর ব্যাপী সংঘটিত হয়েছিল তাই পবিত্র মিরাজ শরীফ সংঘটিত হওয়ার সময় পৃথিবীর সময়কে স্থির করে দেয়া হয়েছিল। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চায় যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সময়ের মুখাপেক্ষী। (নাঊযুবিল্লাহ!) হযরত উযাইর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ বছর যাবৎ নিদ্রারত ছিলেন। এই সময়কালের মধ্যে উনার বাহন গাধাটি মরে, পঁচে মাটির সাথে মিশে গেল। কিন্তু উনার খাদ্য মুবারক অক্ষত অবস্থায় রইল। মুবারক নিদ্রা ভঙ্গের পর তিনি যখন নিজ এলাকায় ফিরে আসলেন তখন দেখতে পেলেন উনার পুত্রের বয়স মুবারক ২০ থেকে ১২০ বছর হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে উলামায়ে ‘সূ গং কি জবাব দেবে? সময় যদি স্থিরই করতে হয় তাহলে পুত্রের বয়স কিভাবে পিতার বয়সের চেয়ে বেশি হলো? উল্লেখ্য যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা হলো, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী এবং বাকি সবকিছুই উনার মুখাপেক্ষী। সুতরাং ২৭ বছর ব্যাপী পবিত্র মিরাজ শরীফ মুলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুজিযা শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত।

আবার অনেকে পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার ঘটনাকে যবন, ম্লেচ্ছ, আইনস্টাইনের E=mc2 নামক সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা চালায়। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুজিযা শরীফ উনারকে ইহানত করার শামিল।

তাই মুসলমানদের উচিত পবিত্র মিরাজ শরীফ সংক্রান্ত কুফরী আক্বীদাগুলো এবং মনগড়া ব্যাখ্যাগুলো পরিহার করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়া উনার আক্বীদা পোষণ করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তাওফীক দান করুন এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহসান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×