somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীর মুক্তিযোদ্ধা: তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিজানুর রহমান, বীর প্রতীক
অসীম সাহসী এক মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দলে বিভক্ত। তাঁরা অবস্থান নিচ্ছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। একটি দলে আছেন মিজানুর রহমান। তিনি একটি উপদলের (প্লাটুন) দলনেতা। তাঁদের সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করল। বিপুল বিক্রমে তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ চালালেন। শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। রক্তক্ষয়ী সম্মুখযুদ্ধে তাঁর চোখের সামনে হতাহত হলেন কয়েকজন সহযোদ্ধা। মিজানুর রহমান দমে গেলেন না। সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। একটানা কয়েক দিন চলা যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তাঁরাই জয়ী হলেন। এ ঘটনা আখাউড়ায়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটের মধ্যে রেল যোগাযোগের জন্য আখাউড়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক স্টেশন। আখাউড়ার কাছেই ভারতের গুরুত্বপূণ সীমান্তবর্তী শহর আগরতলা। ১৯৭১ সালে আখাউড়ায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্তিশালী এক প্রতিরক্ষা অবস্থান।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আখাউড়া দখলের জন্য মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সেখানে সমাবেত হয়। যৌথ বাহিনীর পরিকল্পনা ছিল মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্স ও মিত্রবাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশন তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে আখাউড়া দখলের। মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্স ও ৩ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর দিক থেকে আখাউড়ার দিকে অগ্রসর হন। এস ফোর্সের বি (ব্রাভো) কোম্পানির একটি প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান।
মুক্তিযোদ্ধারা ১ ডিসেম্বর আখাউড়ার কাছে সমবেত হওয়া মাত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁদের ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ শুরু করে; বিমান হামলাও চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা দমে যাননি। তাঁরা নিজ নিজ অবস্থানে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন।
৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে মিজানুর রহমানেরা পাল্টা অভিযান শুরু করেন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর তাঁরা আখাউড়ার বিরাট এলাকা দখল করতে সক্ষম হন। আখাউড়ায় ৫ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। এরপর গোটা আখাউড়া এলাকা মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। আখাউড়ার যুদ্ধে মিজানুর রহমান যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
৩ ডিসেম্বরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মিজানুর রহমানের দলনেতা (কোম্পানি অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামানসহ আট-নয়জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২০ জন গুরুতর আহত হন। পাকিস্তানিদের মধ্যে ১৯-২০ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। অনেকে আত্মসমর্পণ করে।
মিজানুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘বি’ কোম্পানিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় যুদ্ধ করেন। পরে ৩ নম্বর সেক্টর (আশ্রমবাড়ী-বাঘাইছড়ি সাবসেক্টর) ও এস ফোর্সের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মিজানুর রহমানকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১০৪।
মিজানুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের বাউচাইল গ্রামে। অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি এখানেই বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবার নাম মো. আবদুল খালেক খান। মা মাহফুজা খানম। স্ত্রী নূরজাহান খানম। তাঁর দুই ছেলে, তিন মেয়ে।
মিজানুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যুদ্ধ করে দেশটা আমরা স্বাধীন করেছি। সরকার আমাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দিয়েছে। কিন্তু আজকাল বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে দাওয়াতটুকু পর্যন্ত পাই না।’
সূত্র: প্রথম আলোর নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ব্রিগেডভিত্তিক ইতিহাস।

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×