somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কেন ভোট দেই - দুর্বৃত্তদের ক্ষমতায়নের জন্য?

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা কী ভোট দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করি, নাকি স্বনির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোট দিয়ে অবাধ দূর্নীতি আর নৈরাজ্যের জন্য মনোনয়ন দান করি? আমার ধারনা এই যে সাধারন মানুষের পক্ষে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার অনুকূল অবস্থা আমাদের নেই। তারপরও নির্বাচনের দিনে মানুষ রাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্ক উৎযাপনের একটি সুযোগ পেয়ে থাকে।
ভোট দিয়ে আমরা সংসদে প্রতিনিধি পাঠাই। একজন সাংসদ কী ধরনের নীতি নির্ধারণ করবেন ভোট দেওয়ার আগে আমরা কখনো ভেবে দেখি না। আমাদের স্বার্থরক্ষা করে এমন ধরনের বিল সংসদে উত্থাপন করার মত যোগ্যতা সাংসদের আছে কী না এবং লোকটা ক্ষতিকর বা নির্দোষ কী না - এই ধরনের প্রশ্ন আমরা কদাচিৎ করি।

সাংসদ হবার জন্য কী একজনকে অর্থনীতি, আইন বা প্রযুক্তিবিদ্যার মত বিষয়ে দক্ষ হতে হবে, নাকি তাকে একজন সৎ মানুষ এবং সুনাগরিক হতে হবে? তাকে কী একজন হৃদয়বান মানুষ হতে হবে যে প্রান্তিক মানুষের দুঃখ কষ্টকে ধারন করে ও তাদের জন্য কাজ করার তাগিদ অনুভব করে? এসব প্রশ্নের আগে আরও যে প্রশ্নটি জাগে সেটা হল কেন আমরা ভোট দেই।

সমাজের একজন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ চাইতে পারেন যে সরকারী সাহায্যের ভাগ যেন তিনি পান। সংসদে কী আইন পাস হলো তাতে তার চিন্তা নেই। দক্ষ মানুষের চেয়ে যে মানুষ তার গম চুরি করে খাবে না বা তার ভাগের কম্বলটা লোপাট করবে না সেই প্রার্থী তার কাছে যোগ্য।

একজন কৃষক চাইবেন জমিতে দেয়ার জন্য সার বা বীজ যেন ন্যায্য দামে কিনতে পারেন। তার পরিশ্রমের উৎবৃত্ত ফসল বিক্রির সময় তিনি যেন না ঠকেন। অসুখ বিসুখে স্বল্প খরচে সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় বা মেঝেতে থেকে হলেও চিকিৎসার আশা করতে পারেন তিনি।

শহুরে মধ্যবিত্তের চাওয়ার ধরণ ভিন্ন। তারা জীবনের নিরাপত্তা চান। আইনের শাসন আর সন্তানের সুশিক্ষা চান। পরিবারের সাচ্ছন্দ চান। সরকারি অফিস আদালতে সেবা চান। ব্যাবসা-বাণিজ্য এবং জীবনধারনে উন্নতি চান। তারা চান সরকারি চাকরির নিয়োগ যেন স্বচ্ছ হয়। তাদের সন্তানরা যেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হতে পারেন।

মধ্যবিত্ত চায় যে তাদের সন্তান সুশিক্ষিত হোক কিন্তু আবার বোর্ডের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে সেই প্রশ্নপত্র কিনতে তারা দ্বিধা করেন না। তারা চান সরকারী চাকরিতে নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হোক এবং সচ্ছ হোক। আবার নিজের সন্তানের চাকরির জন্য বহু লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে তাদের বিবেক তাড়িত হয় না।

তাই দেখা যায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের চেয়ে ধর্মীয় উন্মাদনার ভুমিকা বড়। ধর্মের মুল বিষয় হলো নিজের বিবেকের কাছে সৎ ও স্বচ্ছ থাকা। সেদিকে আমাদের তাগিদ নেই। ভালো মানুষদের আমরা কদাচিৎ ভোট দেই। এর একটা কারণ এই যে আমাদের দেশে ভালো মানুষ মানে অপদার্থ মানুষ । ভালো কিন্তু অপদার্থ মানুষের দ্বারা সমাজের উপকার হয়না। রাজনীতিবিদদের মূল শক্তি অনেক ক্ষেত্রেই অবৈধ অর্থ। লুটপাট নীতির ছাতার তলে দুষ্টের দল যত সহজে একতাবদ্ধ হয়, দলছুট ভালো মানুষের আদর্শবাদী চিন্তা ও শুকনো কথায় জনগনের চিড়া ভিজে না।

ডাকাতদলের লোকের সাথে ক্ষমতার যোগ হলে যে ছায়া অর্থনীতি তৈরি হয় তাতে অনেক লোক খেয়ে পরে বাঁচে। তাই দেখি অর্থ-প্রতিপত্তিহীন ও পেশী শক্তিতে দুর্বল মানুষ ভোটে দাড়ালে তাদের জামানত প্রায়শঃই বাজেয়াপ্ত হয়।

আমাদের মনস্তত্ত্বের স্ববিরোধিতা এবং দ্বিচারিতাকে পেশাজীবী রাজনীতিবিদেরা সহজে স্বকার্যে লাগায়। একজন সৎ এবং সুনাগরিক মানুষ কী করে সুসংগঠিত হবেন এবং আমাদের প্রতিনিধি হবেন যেখানে আমরা নিজেদের সুবিধার জন্য অন্যায় করতে দ্বিধাবোধ করিনা। তাই শঠ এবং ভন্ড রাজীনীতির লোকেরাই আমাদের গণ-প্রতিনিধি হয়ে ওঠে। আমাদের জনপ্রতিনিধি আমরা নির্বাচন করতে পারি না। বরং তারা নিজেরাই সুসংগঠিত ভাবে নিজেদের নির্বাচিত করে। লাঠি বা হাতুড়ি নিয়ে তারা আমাদের চালিত করে এবং গণমানুষের নাম ব্যবহার করে নিজেদের দুষ্কর্মগুলোর স্বীকৃতি আদায় করে।

তাই দেখা যায় ভোট দিয়ে আমরা দুর্নীতিবাজদের আনুষ্ঠানিক ছদ্ম-স্বীকৃতি দেই মাত্র। ভোট দেওয়ার নামে আমরা আদতে কিছু মানুষকে অবাধ দূর্নীতি এবং নৈরাজ্য করার ন্যায্যতা দেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৪৮
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×