
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেখা যাচ্ছে। আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যেভাবে একটি সংস্কারমুখী প্রশাসনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা এখন অনেকের কাছেই এক ধরনের দুরাশা বলে মনে হচ্ছে।
এই সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের মধ্যে প্রথম দুটি "সংস্কার" ও "নির্বাচন" নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ প্রবল বলেই প্রতীয়মান। তবে, ফ্যাসিস্ট এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচারের প্রশ্নে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। অন্য কিছু না হলেও, এই গণহত্যাকারী ও লুটেরা দলটিকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে, ড. ইউনূস একটি বড় কাজ করবেন বলে আমি মনে করি।
অনেকের মতো আমিও মনে প্রাণে চাই, ড. ইউনূস আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকুন এবং গণহত্যাকারীদের বিচারের পাশাপাশি কিছু মৌলিক ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার যেমন প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামোর অগ্রগতি, সুনিশ্চিত করুন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাঁর ক্ষমতার ভারসাম্য এখন আর ততটা স্থিতিশীল মনে হচ্ছে না। আমার ধারণা, এর একটি বড় কারণ হলো, তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি জনগণের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে হয়ে গেছে ছাত্র রাজনীতির কিছু অংশ এবং তথাকথিত "শত্রুর শত্রু", অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ জামায়াতের উপর।
প্রথমদিকে তিনি যখন এই শক্তিকে গ্রহণ করেছিলেন, তা কিছুটা সময়ের জন্য কার্যকর মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ছাত্রদের মধ্যে কিছুটা অতি-ডানপন্থি, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তথাকথিত "তৌহিদি জনতা" ও মৌলবাদী আচরণ, নেতৃত্বের অভাব এবং তাদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এই সরকারের গতি-প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। একটি কার্যকর পরিবর্তনের জন্য যে জনগণের প্রতিধ্বনি দরকার ছিল, সেই ভিত্তি যথেষ্টভাবে তৈরি হয়নি। এর ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল উদ্দেশ্য যেমন ঝুঁকির মুখে পড়েছে, তেমনি ড. ইউনূসকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কও বেড়েছে।
ড. ইউনূসের উচিত ছিল এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করা। শুধুমাত্র ছাত্রশক্তি বা সুযোগসন্ধানী উপদেষ্টাদের উপর নির্ভর না করে, জনগণের বাস্তব অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে একটি দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারমূলক নীতি গ্রহণ করলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
বিএনপিকে এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ দায়ী করার সঙ্গে আমি একমত নই। বাস্তবতা হলো, বিএনপি স্পষ্ট কোনো আদর্শিক দল না হলেও, তৃণমূল পর্যায়ে তাদের জনপ্রিয়তাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রবল।
বরং জামাত এবং তথাকথিত কিংস পার্টির সমন্বিত তৎপরতা সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করছে। ইলিয়াস এবং পিনাকি গং-এর মতো ব্যক্তিরা বিদেশি অর্থায়ন ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাদের সীমাহীন মিথ্যাকথা দিয়ে মাঠপর্যায়ে যেভাবে হস্তক্ষেপ করছে, এবং ফেসবুককেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে, তা ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
আমার অভিমত হলো, যদিও বিএনপির ভেতরে অনেক ‘বর্জ্য’ রয়েছে, যেমন মির্জা আব্বাসের মতো পঁচা-খচা নেতারা, যাদের অতীত কার্যকলাপ জনগণের পক্ষে ভুলে যাওয়া কঠিন, তবুও এই মুহূর্তে বিএনপিই তুলনামূলকভাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র। আওয়ামী বিরোধিতার মূখ্যধারায় জামায়াত নয়, বিএনপিরই থাকা উচিত; এবং বিএনপির উচিত এখন মাঠের শক্তির পরিবর্তে তাদের আদর্শকে জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


