somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেখা যাচ্ছে। আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যেভাবে একটি সংস্কারমুখী প্রশাসনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা এখন অনেকের কাছেই এক ধরনের দুরাশা বলে মনে হচ্ছে।

এই সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের মধ্যে প্রথম দুটি "সংস্কার" ও "নির্বাচন" নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ প্রবল বলেই প্রতীয়মান। তবে, ফ্যাসিস্ট এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচারের প্রশ্নে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। অন্য কিছু না হলেও, এই গণহত্যাকারী ও লুটেরা দলটিকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে, ড. ইউনূস একটি বড় কাজ করবেন বলে আমি মনে করি।

অনেকের মতো আমিও মনে প্রাণে চাই, ড. ইউনূস আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকুন এবং গণহত্যাকারীদের বিচারের পাশাপাশি কিছু মৌলিক ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার যেমন প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামোর অগ্রগতি, সুনিশ্চিত করুন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাঁর ক্ষমতার ভারসাম্য এখন আর ততটা স্থিতিশীল মনে হচ্ছে না। আমার ধারণা, এর একটি বড় কারণ হলো, তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি জনগণের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে হয়ে গেছে ছাত্র রাজনীতির কিছু অংশ এবং তথাকথিত "শত্রুর শত্রু", অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ জামায়াতের উপর।

প্রথমদিকে তিনি যখন এই শক্তিকে গ্রহণ করেছিলেন, তা কিছুটা সময়ের জন্য কার্যকর মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ছাত্রদের মধ্যে কিছুটা অতি-ডানপন্থি, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তথাকথিত "তৌহিদি জনতা" ও মৌলবাদী আচরণ, নেতৃত্বের অভাব এবং তাদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এই সরকারের গতি-প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। একটি কার্যকর পরিবর্তনের জন্য যে জনগণের প্রতিধ্বনি দরকার ছিল, সেই ভিত্তি যথেষ্টভাবে তৈরি হয়নি। এর ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল উদ্দেশ্য যেমন ঝুঁকির মুখে পড়েছে, তেমনি ড. ইউনূসকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কও বেড়েছে।

ড. ইউনূসের উচিত ছিল এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করা। শুধুমাত্র ছাত্রশক্তি বা সুযোগসন্ধানী উপদেষ্টাদের উপর নির্ভর না করে, জনগণের বাস্তব অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে একটি দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারমূলক নীতি গ্রহণ করলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।

বিএনপিকে এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ দায়ী করার সঙ্গে আমি একমত নই। বাস্তবতা হলো, বিএনপি স্পষ্ট কোনো আদর্শিক দল না হলেও, তৃণমূল পর্যায়ে তাদের জনপ্রিয়তাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রবল।

বরং জামাত এবং তথাকথিত কিংস পার্টির সমন্বিত তৎপরতা সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করছে। ইলিয়াস এবং পিনাকি গং-এর মতো ব্যক্তিরা বিদেশি অর্থায়ন ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাদের সীমাহীন মিথ্যাকথা দিয়ে মাঠপর্যায়ে যেভাবে হস্তক্ষেপ করছে, এবং ফেসবুককেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে, তা ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।

আমার অভিমত হলো, যদিও বিএনপির ভেতরে অনেক ‘বর্জ্য’ রয়েছে, যেমন মির্জা আব্বাসের মতো পঁচা-খচা নেতারা, যাদের অতীত কার্যকলাপ জনগণের পক্ষে ভুলে যাওয়া কঠিন, তবুও এই মুহূর্তে বিএনপিই তুলনামূলকভাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র। আওয়ামী বিরোধিতার মূখ্যধারায় জামায়াত নয়, বিএনপিরই থাকা উচিত; এবং বিএনপির উচিত এখন মাঠের শক্তির পরিবর্তে তাদের আদর্শকে জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:০০
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×