এই ঘটনাটা আমার দাদীর মুখে শোনা।
অনেকদিন আগের কথা। আমার দাদী তখন ছোট। আমার দাদীর একটা চাচা ছিল। সেই চাচা তখন বয়সে যুবক। রাজপুত্রের মতো চেহারা। টকটকে লাল ফর্সা। সেই চাচা ছিল খুব হাসি-খুশী মানুষ। সারাদিন বাচ্চাদের সাথে বাড়ি-ঘর মাতিয়ে রাখতো। দুধের মতো ফর্সা সেই চাচাকে যুবতী মেয়েরা দেখলেই প্রেমে পড়ে যেত। তো হঠাৎ করেই সেই যুবক কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে গেল। খাওয়া-দাওয়া, গোসল এসবের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হলো। এভাবে কয়েকমাস যাবার পর বাড়ির সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। ছেলেটার হঠাৎ করে এ কী হলো!
বাড়িতে সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি ছিল বাড়ির রাখাল। জোয়ান-মর্দ-তাগরা এই রাখালের ওপর অর্পিত হলো সেই রাজপুত্র টাইপ চাচার নিস্তেজ আর উদাসী হয়ে যাওয়ার রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব। তো প্রথম দিন রাখাল সারাদিন সেই যুবককে চোখে চোখে রাখলো। যুবকের মাঝে আহামরি কিছুই দেখতে পেলনা রাখাল। এভাবে কেটে গেল আরও কয়েকদিন। কিছুদিন পর হঠাৎ রাখালের চোখে কিছু একটা ধরা পরলো। এই যুবক গভীর রাতে, একা একা ঘর থেকে বেড়িয়ে কই যায়? রাখাল খেয়াল করলো, প্রত্যেকদিনই রাত গভীর হলে যুবক আলগোছে হেটে হেটে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। ঝর-বৃষ্টি-আপদ-বিপদ সবকিছুকে উপেক্ষা করে। রাখাল নিয়ত করলো, রাতে যুবকের পিছু নেবে। যুবক কোথায় যায়? কী করে? সবকিছু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে ছাড়বে। তো একদিন পূর্ণিমা রাতে রাখাল যুবকের পিছু নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। রাখাল লুকিয়ে রইলো গোয়াল ঘরের পাশে, নিঃশব্দে। অনেক রাতে যুবক আলগোছে বেড়িয়ে এল ঘর থেকে, খালি পায়ে। পরনে ধবধবে সাদা রঙের গাউন। যুবক বাড়ি থেকে নেমে হাটা দিল বাড়ির উত্তর দিকের রাস্তা ধরে। তার কিছুক্ষণ পর আস্তে করে গোয়াল ঘরের আড়াল থেকে বের হয়ে এল রাখাল। কাঁচা মাটির উঁচু-নিচু, আঁকা-বাকা রাস্তা। সাদা ধবধবে গাউন পরনের যুবক হাটছে দ্রুত গতিতে। লম্বা লম্বা পায়ের কদম ফেলছে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে যুবককে লক্ষ্য করে পিছু পিছু হাটছে রাখাল। লম্বা লম্বা গাছের ডাল হতে বাঁদুরেরা ডানা ঝাপটায়। অদূরে শেয়ালেরা ডেকে চলে রহস্য মাখা সুরে। বাতাসে শরীর শিরশিরিয়ে উঠে। রাত গভীর হয়।
রহস্য ঘেরা মায়াবী সে রাত।
(গল্পের বাকিটুকু খুব ভয়ঙ্কর। তাই আর লিখলাম না।)