somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরোপের গীর্জাতন্ত্র ও বর্তমান

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউরোপীয় চার্চ ও রোমের পোপেরা পনের-ষোড়শ শতকের দিকে তৎকালীন মানুষের বিবেককে ক্রয় করে নিয়েছিল ফলে ধর্ম সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণার জন্ম হয়। যাজক শ্রেণীর লোক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য ধর্মীয় মত বিশ্রীভাবে বিকৃত করত। ক্রমাগত বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের কারণে পোপকে অধস্তন যাজকগণ ঘৃণা করত আবার যাজকদের ঠিক একই কারণে ঘৃণা করত জনগন। যাজকদের টেবিলগুলো ছিল স্বর্ণখচিত। তাদের চারপাশ ঘিরে থাকতো অর্ধউলঙ্গ বালিকা দল। গীর্জায় ও মঠে কুমারীদের অবস্থা ছিল অনেক খারাপ। আত্মার-উন্নতি সাধনের পথ ছেড়ে তারা দেহের চাহিদা মেটানোর দিকে ঝুঁকে যায়।

পোপেরা মোটা টাকার বিনিময়ে পাপমোচন সার্টিফিকেট বিক্রি করতো। তারা একে "ইকিউম্যানিক্যাল কাউন্সিলের ইন্ডালজেন্স" বলতো। এই কাউন্সিলের আবার ধর্ম পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের অধিকার ছিল। তারা এও বলে যে যদি কেউ এই সার্টিফিকেটকে নিরর্থক বলে প্রচার করে তাহলে তাকে ধর্মচ্যুত করা হবে। ক্রমে পোপ অধিকতর সম্পদশালী হয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে শুরু করেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিচরণ পর্যায়ে পোপদের সাথে শুরু হয় রাষ্ট্রনায়কদের লড়াই। লড়াই যখন চলতো তখন পোপেরা জনগণের উপর অধিক কর আরোপ করে দিত। করভারে জনগণ অসন্তোষ প্রকাশ শুরু করলো। এই অসন্তোষকে কাজে লাগালো রাষ্ট্রনায়কেরা। তারা গীর্জার শোষণের বিরুদ্ধে জনগণকে আরো খেপিয়ে তুলল। তারা যাজক এবং পোপদের গোপন পাপাচার ও অমিতাচারের কাহিনী জনসমক্ষে প্রচার করা শুরু করলো। পাদ্রীসুলভ পোশাকের আড়ালে যে লাম্পট্য আত্নগোপন করেছিল তা জনগণের সামনে নগ্ন হয়ে যায়। পোপ আর যাজক শ্রেণীর এই সমস্ত অনৈতিক কার্যকলাপ জনগণের কাছে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল সাহিত্যের উপকরণ। নাটক, গান, কবিতা, গল্প ইত্যাদিতে ফুটে উঠত তৎকালীন গীর্জাতন্ত্রের সকল কার্যকলাপ। এইসব অস্ত্র ছিল চরম আঘাত। এর পরিণতিতে ভয়ানক নেতিবাচক আত্মপ্রকাশ করলো যার ফলে ইউরোপে ধর্ম এবং জীবনের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের সব সম্ভাবনা বিলীন হলো। ধর্মীয় মতবাদ এবং সমাজ ব্যবস্থা পৃথক হওয়া শুরু করলো।

এরকম আরো লাখখানেক উদাহরণ দেয়া যাবে গির্জাতন্ত্রের বরাতে। এইসমস্ত অন্যায় আর অধঃপতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে মার্টিন লুথার, জন ক্যালভিন এবং উলরিখ উইংলী Protestantism-এর জন্ম দেন। শুরু হল যুদ্ধ। পোপের দোষে দুষ্ট হল ধর্ম।

ইউরোপ যুদ্ধ করেছিল গীর্জাতন্ত্র কর্তৃক সৃষ্ট ভেজাল খ্রিস্টবাদের বিরুদ্ধে যার মূলনীতি ও মূল্যমান দূষিত হয়ে গিয়েছিল। তাদের যুদ্ধ ছিল গীর্জার লোকদের শোষণ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের উদাহরণ অনুসরণ করে অন্যান্য স্থানেও ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মের পার্থক্য আর বেশিষ্ট্যগুলোকে বিবেচনা করে দেখা হল না। ইউরোপীয় সাহিত্য, শিক্ষা, শিল্প, রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনসত্তা তাই আজ ঢেকে আছে ধর্ম-বিরুদ্ধ সুর নিয়ে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার রোল মডেল ইউরোপ কেন্দ্রিক আর আমরা সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজ ধর্মকেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে দ্বিধাবোধ করছি না। ধর্মের কথা উঠলেই উদাহরণে টেনে আনছি গির্জাতন্ত্রের সেই শোষণ আর বৈষম্যের কথা।

আমরা ভিন্ন ধর্মালম্বীরা ইউরোপীয় সাহিত্য আর দর্শনের নিচে হাবুডুবু খেয়ে ধর্মকে মনে করছি সকল নষ্টের মূল। ধর্ম হচ্ছে আফিম! গড ইজ ডেড! ধর্ম কোন নৈতিকতার মাপকাঠি নয়! ধর্ম সব অশিক্ষিতের জন্য!
আসল অধঃপতনের শুরু এখান থেকেই। (আল্লাহ নৌজ দ্যা বেস্ট)

কাঁচামাল সরবরাহঃ
ইংল্যান্ডের ইতিহাসঃ ডঃ ওয়াজেদ আলী,
A Social History of England: Dr. A.N. Johri,
English Literature: William J. Longর
The Decline & Fall of Roman Empire: Edward Gibbon
European Civilization: Edward Eyre
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×