somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিন্দিতা এবং এক লক্ষ একটি জোনাকি পোকা

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে তার মত করে। এক লক্ষ একটি জোনাকি পোকার সাথে একাত্ম হয়ে জেগে আছে অনিন্দিতা । ওর দু'চোখে কোনোভাবেই ঘুমকে আশ্রয় দিতে পারে না। রহস্যময় মায়া ভরা একটি মুখ দু'চোখে আশ্রয় হয়ে স্থির হয়ে আছে। যে মুখটি একসময় সহজ সরল এবং এক দৃষ্টিতে পাঠযোগ্য ছিলো, সে মুখটি সময়ের পরিবর্তনে রহস্যময় হয়ে উঠেছে অনিন্দিতার কাছে। অনুভবের পরিবর্তনে কতকিছুই পরিবর্তিত হয়! সহজ সরল মুখ রহস্যময় হয়ে উঠে, আবার রহস্যময় অবয়বে পৃথিবীজোড়া মায়া এসে ভর করে। এ এমন মায়া, যাকে কোনো ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যায়িত করা অনিন্দিতার পক্ষে সম্ভব হয় না। এ মায়া কেবলই টানতে জানে, স্বস্তি দিতে জানেনা। যাপিত জীবনের পুরোটুকু সময় কেড়ে নিতে জানে, দৃশ্যমান সময় দেয়ার ক্ষমতা এর নেই। এ মায়া জীবনকে রহস্যময়তার দিকে টেনে নিয়ে যায়, রহস্য ভেদ করার ক্ষমতা তার নেই। এ কেমন মায়া! যার কাছে কোনো সমাধান নেই, প্রশ্নের উত্তর নেই, দেয়ার মত সময় নেই, গ্রহণযোগ্য কোনো সমাপ্তি নেই!

অনিন্দিতা রহস্যময় মুখটি'র রহস্য ভেদ করতে পারে না ঠিকই, কিন্তু মায়াভরা মুখটির প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকা থেকে কোনোভাবেই নিজেকে ফেরাতে পারে না। অনিন্দিতার বিষয়টি বড়ই আজগুবি। এই রহস্যময় মানুষটির সবটুকুই জানে সে, অথচ মনে হয় কিছুই যেন জানে না।

তাঁর মায়া ভরা মুখ, চিরচেনা হাসি কেবলই চোখের পাতায় ভেসে বেড়ায় অনিন্দিতার। চোখের পাতা দুটি বারবার এক করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় অনিন্দিতা। অনিন্দিতা ভাবে মানুষ কত বিচিত্র! বিচিত্র 'হিউম্যান সাইকোলোজি'! আজ যখন রহস্যঘেরা মানুষটার অনুভবমুখর কথাগুলোর প্রতিউত্তরে পাগলামি বলে হেসে উঠছিলো অনিন্দিতা, তখন ওর ও ইচ্ছে করছিলো পাশাপাশি আর একটু থাকুক, আর একটু নিজেদের কথা বলুক। ইচ্ছে করছিলো নিষ্পলক দৃষ্টিতে অসমাপ্ত সময় পর্যন্ত মায়াভরা মুখটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু সে জানে সে এটা হতে দিবে না। কোনো ভাবেই এই ভেতরের মানুষটাকে সে বের হতে দিবে না। দিতে চায়না। তবুও কি এক আকর্ষণ তাকে ডাকে বারবার। যে ডাকের সাড়া না দিয়ে সে পারে না। সে কি তবে ঐ মায়াবী হাসিটার প্রেমে পড়েছে? মনে মনে হাসে অনিন্দিতা। প্রেম বলে পৃথিবীতে কিছু আছে নাকি! সবই 'সময়ের' হিসেব। সময় মানুষকে নিয়ে হিসেব কষতে মজা পায়। আমরা সবাই সময়ের খেলোয়াড়। না হয় এই মানুষটার মধ্যে হঠাৎ করে এমন অনুভূতি হবে কেন? কতদিন ধরে পাশাপাশি আছে। কখনো অনিন্দিতা সেভাবে দেখেনি, তিনি ও দেখেছে বলে মনে হয় না। দেখার তো কথা ও না। তবে! তবে আজ এমন লুকোচুরি খেলা কেন! কেন টিনেজ বালিকাদের মত মনের ভেতর এমন মন উচাটন অনুভূতি, কারনে অকারণে হুটহাট হৃদয়ের কম্পন?

দূর ছাই, কি সব আজেবাজে ভাবছে সে। এমন কত মোহ, কত হৃদয়ের হাতছানি, কত চাদঁনি রাতের গল্প, নদীভরা জোছনা, নির্জন নিশীথ, এক পাহাড়ের চূড়া সে পাশ কাটিয়ে এসেছে! এক রহস্য ঘেরা মানুষ তাকে তোলপাড় করে দিবে! এক মায়াবী হাসি, যাদুঘেরা এক দৃষ্টির গভীরতা তাকে ভেঙে ফেলবে এক নিমেষে! নাহ, সেটা কখনো বিশ্বাস করে না অনিন্দিতা। তবে এটা সে অস্বীকার করতে পারে না যে ঐ মানুষটার জীবনবোধ, বিশ্বাস, অনুভুতির প্রকাশ সবকিছু কেমন করে যেন তার সাথে মিলে যায়। অনিন্দিতা কোনো না কোনোভাবে ঐ প্রকাশ'টাই প্রত্যাশা করছিলো ঐ সময়টিতে, যেটা ঠিক ঐ মানুষটি করে। তার অনুভূতির প্রকাশভঙ্গী অনিন্দিতাকে মুগ্ধ করে।
অনিন্দিতা জানে এইসব অনুভূতি বেশি দিন থাকবে না। থাকে না বেশি দিন। তাই এসবকে সে পাত্তা দিতে চায় না। কিন্তু এই যে একমাত্রার জীবনবোধ, অবাক করা মুগ্ধতা, অনুভবের সমান্তরাল পদরেখা ; এসবকে কি করে উপেক্ষা করবে অনিন্দিতা?

জানে পারবে না, যতবারই সে নিজেকে পেছনে নিতে চায় ততবারই সে হোঁচট খেয়ে অনুভবের দরজায় ভেঙে চুরে পড়ে থাকে জীবনযুদ্ধে পরাজিত ব্যর্থ সৈনিকের মত। তবুও সে পেছনে যেতে চায়, পারে না। অনিন্দিতা জানে এই না পারার ব্যর্থতা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক অমীমাংসিত এবং অসমাপ্ত কঠিন গল্পের অধ্যায়ে। যেখান থেকে টেনে তোলার জন্য তার পাশে একদিন কেউ থাকবে না। থাকবে না সেই রহস্যময় মায়াবী হাসির ঐ মানুষ টিও।

তবুও, তবুও অনিন্দিতা নিজেকে ফেরাতে পারে না।

জেগে থাকে একা এক লক্ষ একটি জোনাকি পোকার সঙ্গী হয়ে।।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×