চুড়ি, ফ্রক, পুতুল, গ্যাসের চুলা. ....আরো কত কিছু যে হতে পারে! নারীরা তো সারাজীবনটাই 'চুড়ি' 'ফ্রক' পড়ে 'পুতুল' খেলে চুলা'য় রান্না করে কাটিয়ে দিয়েছে যুগে যুগে। এর বাইরে তো আর কোনো কিছু নারীদের আওতাভুক্ত নয়। নারীদের হাতে কলম থাকতে নেই। ফ্রক, দোপাট্টা কিংবা বারো হাত প্যাচেঁর শাড়ির বাইরে কোনো পোষাক থাকতে নেই। চার দেয়াল আর চুলার বাইরে তার কোনো ভূমিকা নেই!
কেন রে ভাই, পথে ঘাটে জিন্স প্যান্ট আর টি শার্ট পরা মেয়ে কোনোদিন চোখে পড়ে নাই? লাঠি হাতে রাজপথে কিংবা মিছিলে মিটিং এ কোনো অগ্নিমূর্তি নারী রূপ চোখের চৌকাঠ মাড়ায় নাই? কোনো দিন কোনো কালে কোনো চুড়ি পরা নারীর হাতের কলমের খোঁচায় জীবনের চড়াই উৎরাই পাড় হও নাই? কোনো দিন কোনো কালে আকাশপথে আনন্দ ভ্রমণকালে কোনো নারীর হাত পথ দেখিয়ে তোমার জীবনকে সুরক্ষিত করিয়া উড়াইয়া নিয়ে যায় নাই? নারী হাতের ইশারায় নির্দেশনা দিয়েছে , আর সেই নির্দেশনা পালন করতে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে করতে সদ্য পেটে চালান করা খাবার হজম হয়ে পেটের মধ্যে 'কুলহু আল্লাহ' পড়তে শুরু করেছে তেমন ঘটনা কখনো ঘটে নাই তোমাদের জীবনে !!! তবে! তবে কেন এখনও নারীদের ঐ চুড়ি, পুতুল আর চুলায় আবদ্ধ রেখে তাদের ক্ষমতাকে খর্ব করে দেখার প্রয়াস? নারী কি কেবলই পুতুল নাচের উপকরণ! মঞ্চের বাইরে বসে পুতুল নাচ উপভোগ করা তার সাজে না? আর কত উদাহরণ দিতে হবে নারীদের বিচরণকে আর একবার তোমাদের চোখের দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে একটা প্রদর্শনী আয়োজন করার জন্য।
যতই উদাহরণ তোমাদের চোখের সামনে এনে হাজির করা হোক না কেন, যতই নারীর সামনে 'নতজানু' হয়ে হুকুম তামিল করতে করতে ইহকাল পার করে দেওয়া হোক না কেন, তবু ও 'নারী' তো 'নারী'! 'মেয়েমানুষ'!! 'উপহাসের সুর' কন্ঠ থেকে ছাড়া পায় না। 'উপহাসের দৃষ্টি' তা-ও পরিবর্তন হয় না। নারী'র প্রতি উপহাস, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য এবং সুযোগ পেলেই দুই হাতে দশটা আঙ্গুল তুলে নারীর ক্ষমতাকে ছোটো করে তার গন্ডিকে একটা আবদ্ধ স্তরে প্রকাশ করায় একটু ও ছাড়ো না তোমরা।
হ্যাঁ, তোমরা তাঁরা, তোমরা ওরা, তোমরা সবাই। তোমরা 'পুরুষদল'। তোমরা নারীদের মধ্যে বেঁচে থাকা যুগে যুগে 'পুরুষতান্ত্রিক উত্তরাধিকার'।
'জেন্ডার' প্রশিক্ষণে আমরা শেখাই, আমরা শিখি শৈশবকালেই আমরা 'কন্যা শিশু' এবং 'পুত্র শিশু' দের মানসিকতার গঠনে পার্থক্য তৈরি করে দেই। তাদের খেলনার উপকরণে থাকে বিভাজন, আচরণের বহি:প্রকাশের ধরণ নির্ধারণে থাকে বিভাজন, তাদের বিচরণ ক্ষেত্র নির্ধারণে থাকে বিভাজন, তাদের কেমন দেখাবে কেমন দেখানো উচিত সেই চিন্তার গঠনে তৈরি করি বিভাজন। এভাবে একটা আরোপিত বিভাজন আমরা তৈরি করে দেই বলেই যুগে যুগে সমাজের ভিন্নতায় পরিবেশের ভিন্নতায় 'নারী' এবং 'পুরুষ' এর ভূমিকা এবং দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে ভিন্নতা থাকে। এবং সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবেশের ভিন্নতায় এই বিভাজনের মাত্রা ও একেক রকম হয়। খুব সহজ এই বিভাজনের একটা উদাহরণ প্রায়ই আমরা উচ্চারণ করি ; 'কন্যা শিশুদের' খেলনা হয় পুতুল, হাড়িঁ পাতিল, ইত্যাদি । যেখানে ছেলে শিশুদের হাতে থাকে বিকট শব্দের খেলনা অস্ত্র, বিমান কিংবা ফুটবল। এখন বড়কালেও দেখছি আমরা বের হতে পারছিনা পুতুল, ফ্রক কিংবা চুলা থেকে।
পৌরসভা নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে যা দেখছি সত্যিই মর্মাহত হয়েছি। এ কেমন মানসিকতার প্রকাশ! খুবই অবাক লাগছে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিক্রিয়াও চোখে পড়ছে না এ নিয়ে। এ প্রকাশ এটাই ইঙ্গিত করে কোনো 'জেন্ডার' প্রশিক্ষণই কোনো কাজে আসবেনা এই মানসিকতার পরিবর্তনে।
এটাই সত্য যুগে যুগে নারী নেতৃত্ব, ক্ষমতায়ন, দক্ষতার প্রকাশ কিংবা এগিয়ে চলা পুরুষ মহল কোনো দিন ভালো চোখে দেখেনি এবং আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করেনি। নারীদের এগিয়ে চলা কখনো ঐ 'বাঁকা দৃষ্টি' এড়াতে পারে নি। সবশেষে এটাই সত্য। চরম সত্য।।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৪