বৃষ্টির সোদাঁ গন্ধে বুদঁ হয়ে আছে অনিন্দিতা। আকাশের আধাঁরে অপূর্ণ ইচ্ছে গুলো খুঁজে বেড়ায়, যেগুলো লুকিয়ে রেখেছিল মেঘের পরতে পরতে। যত অপূর্ণ ইচ্ছে অনিন্দিতা'র - জমা আছে আকাশের বুকে। একাকী সময় গুলো তে মেঘেদের কাছ থেকে ইচ্ছে গুলো ধার নেয়। ওল্টে পাল্টে দেখে। আবার সযতনে ফেরত দেয়। কারণ, সে জানে সে আকাশ হোক কিংবা মেঘ - তার চেয়ে বিশাল আশ্রয় আর নেই ।
অনিন্দিতা যেদিন কিশোরের হাত ধরে ঘর ছেড়েছিলো সেদিন ছিলো ধুম বৃষ্টি। বর্ষার আকাশে থেমে থেমে গর্জন। অনিন্দিতার মনের ভেতরও কম গর্জন নয়। প্রতিটি প্রহর পলে পলে যার সান্নিধ্যে বেড়ে উঠেছে, সেই মা, মায়ের অষ্টপ্রহর বকুনি সব কিছুকে ছেড়েছুড়ে নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্য ঘর ছেড়েছিলো সে।
অনিন্দিতা প্রেমে পড়েছিলো কিশোরের আওলা ঝাওলা চুলের, বাউণ্ডুলে জীবনের। আর ও অনেক কিছু হয়ত।
প্রেমে পড়ার জন্য কারণ লাগে না।
অনিন্দিতা কিশোরের হাত ধরে ঘর ছেড়েছিলো ঠিকই, কিন্তু সীমানা পেরোতে পারে নি। তার পয়সা অলা বাবার দাপটের সীমানা। রক্ত চক্ষু ভাই এর গর্জনের সীমানা। যাদের দাপট আর গর্জন তাকে মাধ্যমিক এর চৌকাঠ পর্যন্ত যেতে দেয় নি, সেই দাপটই তাকে জীবনের সীমানা পেরোতে দেয় নি শেষ পর্যন্ত। কিশোরের হাত ধরে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া অনিন্দিতার কাছে জীবনের সীমানাই বটে।
পয়সা অলা বাবা আর রক্ত চক্ষু ভাই এর অযাচিত অভিভাবকত্বে অনিন্দিতার পৃথিবী ছিল চার দেয়াল। আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন মাখা দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করতে পারতো হয়তো, কিন্তু আকাশের নিচে বাঁধনহারা ছুটোছুটি কিংবা এলোচুলে স্বপ্ন খেলা মেঘের পরতে লুকিয়ে রাখা ইচ্ছে খাতায় ঠাঁই পেতো।
তাই কিশোরের হাত ধরে ঘর ছাড়া যতটা না স্বপ্ন খেলার সাথে মিতালি, তার চেয়ে বেশি ছিলো খাচাঁ ভেঙে বেরিয়ে আসা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি টুকু পর্যন্ত পেরোতে পারে নি যে, তার চিন্তায় জীবনের কঠিন অলি গলি আর কতটুকু ই বা গভীর হবে! সেই বোধ পর্যাপ্ত পরিমাণে গভীরতা পাক আর বা পাক জীবনবোধের ডাকে সাড়া দিয়েছিলো সে।
পথ কিভাবে ফুরোবে জানেনা অনিন্দিতা, তবে এটা জানতো ঐ আওলা ঝাওলা লম্বা চুল কিংবা ঠোঁটের কোণের এক টুকরো হাসি ; ওই দেখে দেখেই জীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে। । জীবন আর কতটুক। আর কিছু তার নিজের হোক বা না হোক, আর কিছু থাক বা না থাক, ওই হাসি টুকু তো তার।
শেষ পর্যন্ত অনিন্দিতার নিরুদ্দেশ যাত্রা আর নিরুদ্দেশ থাকে নি। আবার ফিরে আসতে হয়েছিল বন্দি খাচাঁ চার দেয়ালে। এর পরের গল্প খুব সাদামাটা। যেভাবে সংসার পাতে সবাই। । যে গল্প লেখা হয় সমাজ নামক আজগুবি যন্ত্র আর অভিভাবকত্বের দাপুটে কালিতে।
অনিন্দিতা সুখে আছে কিনা জানি না। তবে এটুকু জানি সে এখনও অপেক্ষা করে কোনো এক রাজপুত্রের। যে তাকেঁ স্বপ্ন দেখিয়েছিল মাতাল হাওয়ার। যার কাছে জীবনের অথৈ গহীনে আলো খুজেঁ পেয়েছিলো বাচাঁর, যে খুব সাদামাটা কিছু শব্দের রিনিঝিনিতে বুঝিয়েছিলো জীবনের অর্থ। অনিন্দিতা এখনো অপেক্ষায় থাকে কোনো একদিন পংখীরাজে চড়ে আসবে রাজপুত্তুর। হাতের দু'জোড়া কাকঁন খুলে দিয়ে বলবে চল হারিয়ে যাই.... আকাশভরা জোস্না দেখি, বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে স্বপ্ন খেলা পাতি, মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলি কিংবা পাহাড়ের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভেঙে ফেলি সীমানা প্রাচীর। বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দে গাঙ্গে ঢেউয়ের সাথে আমরাও নেচে ওঠি রিনিঝিনি রিনিঝিনি।
জানি এখনো সে অপেক্ষা করে কোনো এক রাজপুত্রের।।