সবকিছু কি সুন্দর চলছে। নির্বিঘ্নে........নিরবে....এবং গোছালোভাবে। তবু মনে হয় কোথাও যেন স্বস্তি নাই। কিছুদিন গেলেই মনটা কেন যেন অস্থির হয়ে উঠে। খুঁটেখুটেঁ আশপাশের সবকিছু থেকে যত রকমের দোষ আছে বের করতে থাকি। মনে হচ্ছে এটা মানব নামক যন্ত্রটার নিয়মিত স্বভাব। কোন অবস্থানেই এই যন্ত্রটা খুশি নয়। শুধু অবস্থান পরিবর্তনের চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়ানো, আর সেটাকে নিয়েই জীবনটাকে অস্থির করে তোলা। এভাবেই সঞ্চিত অয়েল-ফুয়েল খরচ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখা সারাক্ষণ। এছাড়া আর কাজ কি? না হয় তো জীবনটা সহজ হয়ে যাবে। পা.....নির মত সহজ! জীবনকে এত সহজ করার কোন মানে হয়? জীবনে সংঘাত কিংবা দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রাখার জন্য তো কোনো না কোনো একটা ইস্যু লাগবে!
আমার কাছে মনে হয় জীবনের যত সংঘাত, সংগ্রাম আর দ্বন্দ্ব সব এক একটা ইস্যু। এছাড়া আর কিছু নয়। মানুষ নামক প্রাণী টাকে আমার কাছে যন্ত্র-ই মনে হয়। কারণ, যন্ত্রের মত অকারণেই ছুটে চলে এই প্রাণিটি। কোনোকিছুরই কোন অর্থ নাই। যে যেভাবে চলছে, সেভাবেই তো কাটছে জীবন! জীবন কাটানোর রকমফের এর পার্থক্যের কারণে পৃথিবীর গতিবিধি কিংবা সূর্য উঠা ডোবাতে তো কোনো পার্থক্য দেখি না! পার্থক্য কেবল ভাবনা তে। আমরা জীবনকে যে যেভাবে ভাবি জীবন তা-ই! জীবন সেরকমই!
এই যে আজ সকালে আম্মু বকবক করছিল তার আশপাশের অনেক আত্নার আত্মীয়-স্বজনের সুখ-দু:খের পথচলা নিয়ে; ওই মেয়েটার জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো.........কি মেয়ে কি হয়ে গেছে!........ওর জামাই ওরে রেখে আর একটা বিয়ে করেছে......এখন আর ওর দিকে কোনো খেয়ালই নেই!....আমি ভাবছি কি হতো ওর জামাই আর একটা বিয়ে না করলে? করেছে তাতেই বা কি তফাৎ তার জীবনে? কিই বা হতো ওর দিকে খেয়াল রাখলে? ওকে অনেক ভালোবাসলে? ----মনে হচ্ছে কিছুই হতো না। এখন যা হচ্ছে তা-ই হতো। সময় এগিয়ে যেতো। দিন গড়িয়ে রাত আসতো। দিনে দিনে বয়স ভারী হতো। আর কিছুদিন পর তার চুলে পাক ধরতো। চোখের দৃষ্টির সীমানা আস্তে আস্তে ছোট হতো। চোখে একটা লাল ফ্রেম এর চশমা চড়তো। অবশেষে একদিন পৃথিবী আলোকে ফাকিঁ দিয়ে অন্ধকারে চলে যেতো। এখনো তা---ই হবে। কোনো কিছুর ব্যতিক্রম নাই। তবে? তবে তফাৎ কোথায়??এক মানব আর এক মানবীকে অনেক ভালোবাসলে কিংবা খুব কেয়ারিং স্বামী হলে এমন কি তফাৎ তার জীবনে? কিংবা অনেক সুন্দরী স্ত্রী। সুন্দর গোছানো সংসার। ভালোবাসার কমতি নেই চারপাশে। সুন্দর বোঝাপড়া। তাতেও কি কোনো তফাৎ আছে শেষ পর্যন্ত? কারণ শেষ সীমানা তো একটাই। যা সবাই জানি। প্রত্যেকেই পৃথিবীতে এসেছে কিছু সময় সবার কাছে নিজের অস্তিত্বকে জানান দিবে বলে। এর বাইরে তো আর কিছু নেই। তার সময় শেষ হলে সে চলে যাবে।
এই আসা-যাওয়ার মাঝে এত রঙ্গ খেলা....আবেগ, অনুভুতি, মান-অভিমান, পাওয়া না পাওয়া এসবের অন্তর্নিহিত মাত্রা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ অর্থটা কোথা্য় তা এখনো অমিমাংসীতই রয়ে গেছে আমার কাছে। ঘটনা, ঘটমান এবং অঘটিত এই তিনের মধ্যে অন্তত আমি কোনো তফাৎ এখনো খুজেঁ পাই নি। -ঘটনা ঘটেছে-কারণ এটা ঘটার ছিলো। ঘটেছে ভালো হয়েছে। -ঘটনা ঘটবে কারণ এটা ঘটতে হবে। এতেও কোনো সমস্যা নাই। -অঘটিত থেকে গেছে কারণ এটা ঘটবে না। এতেও সব ঠিক আছে।
তাহলে সমস্যা কোথায়? আমার এই অমিমাংসীত ভাবনার মাঝেই আবার বকবক শুরু হলো মায়ের। 'এখন সব বদলে গেছে'। 'আগের মত কিছুই নাই'। 'আন্তরিকতা নাই আগের মত। চিন্তা-ভাবনা গুলো ও আগের মত নাই.........' বকবকবকবক.....আচ্ছা কি হবে আগের মত আন্তরিকতা থাকলে? আগে কি কিছু হয়েছিলো যখন অনেক আন্তরিকতা ছিলো? চিন্তা-ভাবনা গুলাে যখন অনেক সুন্দর ছিলো? কি এমন হয়েছিলো? আর এখন কি হচ্ছে না? কিছুই না। যা যেমন চলছে, তেমনই চলবে।
ঐ যে মাথার পাশে একটা চিনচিন অনুভুতি....কেন ও বললো না....কেন ডাকলো না.....কেন তাকালো না.....কেন হলো না....কেন এলো না......কেন গেলো না.......কেন...কেন...কেন....এই চিনচিন তার'টাকে উপড়ে ফেলতে পারলেই আর এইসব কেন মাথায় আসবে না। সব সংঘাত দ্বন্দ্ব এক নিমেষে নি:শেষ হয়ে যাবে। তখন আর কোনোকিছুই অস্বাভাবিক মনে হবে না। কারণ কোন কিছু ঘটা বা না ঘটাতে কোনো তফাৎ নাই!
যে মেয়েটির জীবন শুরু হয়েছে রাস্তার পাশে, তার জীবনটা যেমন কেটে যাবে সময়ের সাথে। যার জীবন শুরু হয়েছে হাজারো আলোকশিখার ঝলকানিতে বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদে তার জীবনটা ও কেটে যাবে সময়ের সাথে।জীবন শুরু হয়েছে জীবনের কোনো এক প্রান্ত থেকে। শেষ হবে জীবনের কোনো এক প্রান্তে। এটাই সত্য। এটাই জীবন। এবং এটাই পথচলা। এর উপরে আর কিছু নেই। মাঝখানে সব শূন্য সমীকরণ। আর এই 'শূন্য সমীকরণ' নিয়ে আমাদের যত্ত বাড়াবাড়ি! সমীকরণ এর এই কিনারে এসে এখন খুব হাসি পাচ্ছে। কারণ; সবশেষ সমীকরণ হচ্ছে 'আমরা বোকা'। 'বোকা মানুষ'!
(ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৬