somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: 'ভালোলাগা' এক পরজীবী কষ্টের নাম!

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



#(এক)#

ও এখনো সেভাবে তাকিয়ে আছে।

ওর এই দৃষ্টি টা আমার খুব চেনা। হয়ত আমাকে পড়ার চেস্টা করছে। যে কোন বিষয়কে বিশ্বাসে নেয়ার আগে ও বারবার এভাবেই পরখ করে দেখতে চায়। বিভিন্নভাবে বিশ্লষণ করে, চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করে। হয়ত গুনে গুনে দেখে কপালের রেখায় ক'টি ভাজের পরিবর্তন হয়েছে। এবং সেখানে কি কি লেখা রয়েছে।

আমি নির্বিকার তাকিয়ে থাকি ওর চোখের দিকে। সময় দেই। ও দেখুক। যা দেখতে চায়। আমি ওকে পড়তে দেই। আমাকে।

'তোমরা তো একজন নারী মহাসচিব পেতে যাচ্ছ।' এবার চাইছিলাম ও একটু নড়ে চড়ে উঠুক। তাই কঠিন বিষয়কেই টেনে আনলাম।
কথাটি শুনে সামান্য নড়েচড়ে উঠে ও। 'হুঁ, জানি।' 'এটা হচ্ছে প্রত্যাশা বা সম্ভাবনার একটা জায়গা। নিশ্চিত না।' 'প্রত্যাশার জায়গাটা নিয়ে আত্নতুষ্টির কিছু নাই। বরং কষ্টের একটা সম্ভাবনাকে দাঁড় করিয়ে রাখা। প্রত্যাশা খুব খারাপ জিনিস। এটা না থাকাই ভালো। বোকারা প্রত্যাশা করে। আমার মত বোকারা, যারা কষ্ট পেতে চায়। সুখের জীবনে টেনে টুনে কষ্টকে কাছে টেনে তার সাথে সখ্যতা গড়তে চায়।'

বাহ্! কি সুন্দর একরাশ ডায়লগ ঝেরে দিলো। এই হচ্ছে মেয়েদের সমস্যা। সুযোগ পেলেই ডায়লগ ঝারে। নড়েচড়ে উঠলাম। ডায়লগের পেছনের গন্ধটা একটু একটু টের পাচ্ছি। নাহ্। খুব বেশি নাড়ানো যাবেনা। আগেভাগেই হাত গুটিয়ে নেয়া ভালো। ওর এই রূপটিকেও আমি খুব চিনি। যখন কোনো কিছু নিয়ে রাগ থাকে, ও এভাবেই সহজ বিষয়েও দ্বিমত পোষণ করে। প্রসঙ্গকে টেনে নিয়ে যায় ওর নির্ধারিত লক্ষ্যস্থলে।

'ওটা ২০১৬ সাল শেষ হবার পরের বিষয়। বান কি মুন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আছেন। তবে এটা ভালো যে ‘নারী মহাসচিব নিয়োগে সমর্থনকারী বন্ধুদের গ্রুপ’ নামে একটি অনানুষ্ঠানিক সংগঠন করা হয়েছে। তারা এরই মধ্যে প্রায় ৭০টি দেশের সমর্থন আদায় করেছে।'

ওর কন্ঠের স্থিরতা এবং আলোচনার স্বাভাবিকতায় কিছুটা স্বস্তি পেলাম। এবারের মত পাশ কাটানো গেলো। সবসময় রাগ, মান-অভিমান এসবের মুখোমুখি হতে চাই না। এই রূপটা মাঝেমাঝে ঠিক আছে। ভালো ও লাগে কোনো কোনো সময়। কিন্তু এখন না। এখন ভালো লাগছেনা। নীরা ও এই বিষয়টা বুঝতে পারে-সেটা আমি বুঝি। যেমন এখন বুঝতে পেরেছে। বিষয়টাকে পাশ কাটিয়ে খুব সহজেই আলোচনার স্বাভাবিকতায় ফিরে এসেছে।

নীরা চায়ে চুমুক দেয়। আদা লেবু দিয়ে লাল চা। এটা ওর ভীষণ প্রিয়। যখন আমরা এই টং দোকানটার পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, এখানটায় থামি। দুই মগ ভর্তি লাল চা নেই। দু'জনে বেশ আয়েশ করে চায়ে চুমুক দেই আর কাব্যরসহীন কঠিন কঠিন সব গল্পে চা'টা শেষ করি। সবসময় কাব্যরস নীরা পছন্দ করে না। তাই বলে নীরা কাব্যরসহীন নয়। আবার সবসময় কঠিন হয়ে থাকলে ও বেশ কঠিন একটা ভাব নেয়। সেটা মনে হয় আমাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে যে আমার এখন একটু হাসা দরকার। একটু আধটু কাব্যরসের ও দরকার এই মুহুর্তে। ওর চরিত্রের এই দ্বৈত রূপ মাঝে মাঝে আমার কাছে ও দুর্বোধ্য মনে হয়।

হয়ত বা নীরার এই দুর্বোধ্য দ্বৈত রূপই কোনো একদিন আমাকে কাছে টেনেছিলো। এখনো কাছেই আছে সে। আমি। শুরুর সময়ের মত আকর্ষনটা এখন সবসময় ওভাবে টের পাই না। এটা আমি বুঝি। হয়ত নীরা ও বোঝে। ইদানিং কেমন যেন দূরে দূরে থাকে। আমি বুঝি এর কোনোটা অভিমান। কোনোটা ইচ্ছে করে দুরে থাকা। সবসময় ওর অভিমান ভাঙ্গাতে আমি যাই না।

আমার এখনো চা শেষ হয়নি। লাইট পোস্টের আলোতে নীরার চেহারাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। শান্ত গভীর দৃষ্টিতে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে নীরা। চারপাশের শীতল আবহাওয়ার মতই যেন শীতল হয়ে আছে সে। এখন একটু একটু মায়া হচ্ছে নীরার জন্য। ওর রাগের কারণটা জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু জানি এখন ও বলবে না।

চা শেষ করে আমরা আবার হাটঁতে শুরু করি। নীরার হাতটা টেনে নেই। খুব শীতলভাবে ও হাতটা এগিয়ে দেয়। শীতল হাতের স্পর্শে ওর চাপা অভিমানটুকু আরো স্পষ্ট হয়।



#(দুই)#



সকালে মোবাইল অন করে দেখি নীরার একটি এসএমএজ। সারারাত মোবাইল অফ ছিলো। চার্জে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কাল রাতে বাসায় অনেক গানবাজনা হয়েছিলো। ওতে ব্যস্ত ছিলাম। নীরার কথা একবারও মনে পড়ে নি। জানি একটা এসএমএস এর অন্তত অপেক্ষা করেছিল সে। বিছানা ছেড়ে উঠার আগে একটা ফিরতি এসএমএস পাঠিয়ে দিলাম। অন্য সময়, বিশেষ করে শুরুর দিকে ওর এসএমএস না পেলে অনেক রাত অব্দি ঘুমোতে পারতাম না। প্রতীক্ষার প্রতিটি প্রহরে প্রহরে কি রকম আনন্দ, কিছু কিছু যন্ত্রণা কতটা প্রত্যাশিত হতে পারে তা তখন বুঝতাম। এখন ওই উম্মাদনা কেটে গেছে।

নীরার মুখ টা কেমন যেন শুকিয়ে আছে। বুঝিনা মেয়েটা হঠাৎ এমন করা শুরু করলো কেন। সবসময় কেমন একটা দুখি দুখি ভাব করে রাখে। মনে হয় রাজ্যের অভিমান জমা হয়ে আছে। মাঝে মাঝে রাগী চেহারা নিয়ে কেমন কটমট করে তাকায়।

'আচ্ছা বলো তো তোমার কি হয়েছে? তুমি সবসময় এমন রাগ করে থাকো কেন।'
যথারীতি শীতল দৃষ্টিতে তাকায় নীরা। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে স্থির হাসি। এই হাসির অর্থ এমন কিছু বলে দিচ্ছে যা আমার খুব বেশি একটা পক্ষে যাবে না। মনে হচ্ছে ও মনে মনে বলছে, 'তুমি এ কথা জেনে কি হবে? আদৌ কি দরকার আছে তোমার জানার?'

'আচ্ছা, ঐদিন শেষ পর্যন্ত কি কাজটা হয়েছিল? ফাইলটা খুঁজে পেয়েছিলে? পরে জিজ্ঞেস করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।' বুঝতে পারলাম প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইছে নীরা।

'নাহ্! আরেকদিন যেতে হবে। সরকারি অফিসের বিষয় কোনো দিন একবারে হয়?'

'হু, তা ঠিক।' নীরা ও সুর মেলায়। এভাবে প্রসঙ্গ পালটে যায়।

এভাবে সম্পর্কের শীতলতার মধ্য দিয়ে কয়েক সপ্তাহ কেটে যায়। কয়েক দিন ধরে আমি খুব ব্যস্ত পারিবারিক কিছু কাজ নিয়ে। নীরার সাথে যোগাযোগ হয় নি তেমন একটা। মাঝখানে নীরা একবার ফোন দিয়েছিল। ফোন দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ডেকেছিল। কোনো বিশেষ কিছু মনে করে তড়িঘড়ি করে গিয়েছিলাম। 'আসলে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই!' নীরা অপরাধীর মতো নিচু স্বরে বলে।

'হুঁ, আমি ও বুঝতে পেরেছিলাম। আমার ও তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। তুমি এভাবে ডাকাতে ভালোই হয়েছে।'

অনেক দিন পর নীরার মুখে হাসি দেখলাম। অন্য সময় যে ও হাসে না তা নয়। তবে ঐ হাসিতে প্রান ছিল না। যেটা এখন দেখেছি। আমি জানি কিভাবে খুশি করানো যায় ওকে। খুব অল্পতে খুশি হয় নীরা। যদি সেটা প্রকৃত কিছু হয়। আমার এই কথাগুলোর মধ্যে হয়তো প্রকৃত কিছু খুঁজে পেয়েছে ও।

(চলবে)

ছবি: অপরূপ দে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×