শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে ব্লাকবোর্ডে একটা লম্বা দাগ টানলেন।
এবার সবাইকে উদ্দেশ্য করে জানতে চাইলেন: -আচ্ছা তোমাদের মধ্যে কে আছো? যে এই দাগটিকে ছোট করতে পারবে? কিন্তু শর্ত হচ্ছে তোমরা একে মুছতে পারবে না!! না মুছেই ছোট করতে হবে!
ছাত্ররা সবাই অপারগতা প্রকাশ করলো। কারণ, মোছা ছাড়া দাগটিকে ছোট করার আর কোনো পদ্ধতি তাদের মাথায় আসছে না!!
শিক্ষক দাগটির নীচে আরেকটি দাগ টানলেন, যা আগেরটির চেয়ে একটু বড়। ব্যস, আগের দাগটি মোছা ছাড়াই ছোট হয়ে গেলো!
শিক্ষক বললেন, বুঝতে পারলে তোমরা? কাউকে ছোট করতে বা হারাতে হলে তাকে স্পর্শ না করেও পারা যায়! নিজেকে বড় করো, গড়ে তুলো, তাহলে অন্যের সমালোচনা/ দুর্নাম করে তাকে ছোট করতে হবে না, তুমি বড় হলে এমনিতেই সে ছোট হয়ে যাবে!!
আজ শুক্রবার।
অবশ্যই শুক্রবার দিনটা অন্য সব দিন থেকে আলাদা। শুক্রবার সকালে আমি হোটেলে নাস্তা খাই। নাস্তা খেয়ে বাসায় ফেরার পথে সবজি টবজি কিনে নিয়ে যাই। সুরভি বলেছে আজ যেন একটা লাউ অবশ্যই কিনি। লাউ কিনতে গিয়ে আমি অবাক! একটা লাউ ১০০ টাকা। এক দাম। লাউ সাধারন সর্বোচ্চ ৪০/৫০ টাকা হয়। তার জন্য ১০০ টাকা!! কি হচ্ছে দেশে এইসব! বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা দিয়েই একটা লাউ কিনলাম। রেকর্ড। যদিও লাউ আমি খাই না। কোনোদিন খাইও নাই। লাউ প্রসঙ্গে মনে পড়লো- আমার দাদীজান কচি লাউ এর চকলা দিয়ে একদম কুচি কুচি করে দুধ দিয়ে এক ধরনের পিঠা বানাতেন। সেই পিঠাও আমাকে দেওয়া হয়েছিলো, আমি খাই নি। ইদানিং পাটিসাপটা আর বিবিখানা পিঠাটা খুব খেতে ইচ্ছা করছে। বাসায় এত রকম পিঠা বানায় অথচ কেউ পাটিসাপটা বা বিবিখানা পিঠা বানায় না। আমিও রাগ করে বলি না।
আমার ঘর সংসার আছে।
একটা মেয়ে আছে। স্ত্রী আছে। এলোমেলো জীবনযাপন করা আমাকে মানায় না। হুট করে মরে গেলে সুরভি আর পরী বিরাট বিপদে পড়বে। আমার ব্যাংকে কোনো টাকা পয়সা নেই। অবশ্য আমার কোনো পাওনাদারও নেই। পরিবারের দিকে তাকিয়ে আমাকে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেচে থাকতে হবে। বিয়ে করা মানে বিশাল দায়িত্ব মাথায় নেওয়া। দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেই হবে। শুধু স্ত্রী, কন্যার প্রতি দায়িত্ব না। মা-বাবা আছেন, ভাইরা আছে। সবার প্রতি আমার দায়িত্ব আছে, আমি সুন্দরভাবে সবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে চাই। আজ অনেকদিন পর জুম্মার নামাজ পড়লাম। জুম্মার নামাজ পড়লেই পড়ে আমি কবরস্থানে যাই। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। ভালো লাগে। কবরস্থানের সামনে ভিক্ষুকরা বসে থাকে, আমি তাদের জন্য নতুন টাকা নিয়ে যাই। সবাইকে বিশ টাকা করে দেই। বাসায় ফেরার পথে দেখলাম দেশী কুল বড়ই বিক্রি করছে। এক কেজি কিনলাম। একশ' টাকা।
আজ দুপুরে ভাত খেলাম লাল শাক দিয়ে।
আমি ভারী খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন থেকে হালকা পাতলা খাবার খাবো। সাদা ভাত, লাল শাক আর ইলিশ মাছ ভাজা। খাবারের উপর নির্ভর করে মানুষের শরীর ভালো থাকা, মন্দ থাকা। গতকাল ভাবীর বাসায় মেহমান এসেছিলো। আমারও দাওয়াত ছিলো। ভাবী দুনিয়ার খাবার রান্না করেছেন। গরুর মাংস, রোস্ট, হাসের মাংস, চিংড়ি ফ্রাই, মটরশুটি দিয়ে পোলাউ। আমি এসব কিচ্ছু খাই নাই। রাতে আমি শুধু মুড়ি খেয়েছি। আমি বুঝে গেছি- শুধু মাত্র খাবারটা বেছে খেলেই সুস্থ থাকা যায়। বুঝে না বুঝে এতদিন পাগলের মতো অনেক খেয়েছি। এখন থেকে খাবার বেছে বেছে খাবো। আমাকে বেচে থাকতে হবে। সুস্থ থাকতে হবে।
তিন বছর হয়ে গেছে।
ঘরে রঙটঙ করি না। দেয়াল গুলো কেমন মলিন হয়ে গেছে। খাট, আলমারি, ওয়ার্ডডোব গুলো কেমন মলিন হয়ে গেছে। বার্নিশ করা দরকার। ছোটবেলায় আব্বাকে দেখতাম প্রতি বছর ঘরে রঙ করাতেন। ফানির্চার গুলো বানির্শ করাতেন। বাথরুমের কল গুলোতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সারারাত টপ টপ করে পানি পড়তেই থাকে। বেসিনের কলটাও নষ্ট হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য একটা ফিল্টার মেশিন কিনতে হবে। ফিল্টার মেশিনের অনেক দাম। দশ হাজার টাকারও বেশি। পানি ফুটিয়ে আমি খেতে পারি না। কেমন গন্ধ গন্ধ লাগে। সুরভি কতদিন ধরে একটা গাড়ির কথা বলছে। এই শহরে বাস সিএনজি'তে চলে অনেক কষ্ট। কত কিছুই করা দরকার কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। অথচ সময় হু হু করে চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪০