দেশ কোন দিকে যাচ্ছে হয়তো সরকারও জানে না। যারা এখন গ্রামে চলে যাচ্ছেন তারা আরো আগে গেলে ভালো করতেন। তখন তাদের হাতে কিছু টাকা পয়সা থাকতো। গ্রামে গেলে হয়তো বাড়ি ভাড়া দিতে হবে না কিন্তু সেখানে তাদের আয়ের পথ কি হবে? এই যে মানুষ কর্মহীন হয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে- এসব মানুষদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কি? অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু শহরে না গ্রামে করাও প্রয়োজন ছিলো। যারা এতদিন বলেছে 'দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে' তাদের বিচার হওয়া দরকার।
দেশের বেশির ভাগ মানুষের সাথে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার যা ভালো বুঝে করে। সরকারের যে কোনো কাজ শেষ করতে সময় লাগে পাঁচ বছরের বেশি। যারা গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন- তারা কোনো মন্ত্রী, এমপি, সচিব বা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন এরা গ্রামে কিভাবে জীবনযাপন করবেন? এরা এতদিন শহরে থেকে টাকা পয়সা সঞ্চয় করতে পারেন নি। সরকারী চাকরিজীবিরা কি ভালো আছেন? সরকারী চাকুরীজীবি বেশীরভাগ লোকজন সরকারের জন্য কোনভাবে আয় করে না। তারা মাছের তেল দিয়ে মাছ ভাজে। আয় যে বাড়াতে হবে সেই বিষয়ে তাদের কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।
সেদিন এক শিক্ষিত ছেলেকে দেখলাম রাস্তায় ডাব বিক্রি করছে। এই ছেলে আগে একটা ছোট চাকরি করতো। বিনা নোটিশে তার চাকরি চলে যায়। দেশ হয়তো উন্নয়নের মহাসড়কে- কিন্তু এদের তো খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে হবে। চোখ বন্ধ করে বলা যায় এখন দেশে চুরী, ছিনতাই আর ডাকাতি বেড়ে যাবে। সমস্ত দেশের মানুষ এক ভয়ানক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। তবে অল্প কিছু লোক এই দেশে খুব ভালো আছে। সরকার যতই পদ্মাসেতু করুক, ফ্লাইওভার করুক, রাস্তা করুক- এসবের চেয়ে হাজার গুন বেশি দরকার ছিলো- কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কোনো সরকারই এদিকে নজর দেয় নি।
এদেশের বেশির ভাগ মানূষই অল্প আয়ের মানুষ। তারা কিছুই সঞ্চয় করে রাখতে পারে নি। সঞ্চয়ী হওয়াটা কতটা জরুরী করোনায় এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সবাই। দরিদ্রদের সঞ্চয়ী করতে সরকারের নানান রকম প্লান প্রোগ্রাম থাকতে হয়, না হয় মানুষ নিজের থেকে ভবিষ্যত প্ল্যান করতে পারে না। অবশ্য নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরীবেরা টেনেটুনে মাসই চালাতে পারে না- ফলে, এদের সঞ্চয় থাকার কথাও নয়। শহরের দরিদ্রারা গ্রামে এসে কি করে টিকে থাকবেন, অনুমান করাই কঠিন। এই যে মানুষের এখন সীমাহীন কষ্ট- এর দায়ভার নেবে কে? রাস্তায় ভিক্ষুকের সংখ্যা দশ গুন বেড়ে গেছে।
সরকার যদি ঋণ খেলাপি ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের জন্য ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার জায়গায় এদের জন্য মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকার গ্রাম ভিত্তিক অর্থনীতি চালু করত, তাহলে এর বিশাল সুবিধাভোগীরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকত। এদের কথা সরকারের কাছে বলার কেউ নেই। গ্রাম গুলোও তো উন্নত নয়। গ্রামে কিছুই নেই, আয়ের কোন পথ নেই। যে কোনো বিপদে আপদে শেষমেশ গ্রামই আমাদের শেষ ভরসা। ৭১ এ যুদ্ধের সময়ও মানুষ গ্রামে ফিরে গিয়েছিলো। এখনও যাচ্ছে। অবশ্য কোনো সরকারই গ্রামের দিকে বিশেষ নজর দেন নি।
সরকারের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা বোকামি। সরকারে দক্ষ, যোগ্য ও পরিশ্রমী লোক নেই। সামান্য একটা অফিসে দক্ষ, যোগ্য ও পরিশ্রমী লোক না থাকলে সেই অফিস উন্নতি করতে পারে না। বছরের পর বছর লস গুনতে হয়। এই করোনাকালে দুদক, নোবেল জয়ী ইউনূস, শিল্পপতি, ধনী, রাজনীতিবিদ, দূর্নীতিবাজ কেউই দরিদ্রদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নি। তবে তাদের ত্রান নিয়ে নাটক হয়েছে বেশ। সরকারের এখন উচিত সমস্ত দূর্নীতিবাজদের টাকা গুলো নিয়ে দেশের মানুষের কল্যানে কাজে লাগানো। এখনই উত্তম সময়।
সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এই দেশের জনগন নির্বোধ। কুটিল জটিল তাদের মানসিকতা। নিজের কিভাবে উন্নতি হবে সেই চিন্তা না করে- কিভাবে অন্যকে বাশ দেওয়া যাবে সেই চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের গ্রামে একটা কথা আছে- 'ছোট লোকের পোলায় যদি জমিদারি পায়, কানের আগায় কলম গুজে বাঈজি নাচায়। এই হলো আমাদের দেশের এক শ্রেনীর মানুষের অবস্থা। দেশের মা্নুষের জন্য আমার ভিষন চিন্তা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:২৬