(এই লেখাটি আমার নয়। এটা লিখেছেন আমার শ্বশুরমশাই। তার অনুমতি নিয়েই লেখাটি ব্লগে দিলাম।)
জেলখানায় ডিটেনশনপ্রাপ্ত আসামীর সাথে সরকারের বিশেষ শাখর অনুমতি ব্যতিরেকে পরিবার বা আত্মীয় স্বজন কেউ দেখা করার অনুমতি পান না। আমি সরকারের ডেটেনিউ হওয়ায় পরিবার স্বজন বিছিন্ন হয়ে গেলাম। আমার কথা বলার সাথী সুভ্রত দাদা, মগবাজারের সেভেন ষ্টার গ্রুপের মোল্লা মাসুদের সেকেন্ড ইন কমান্ড টিক্কা ও নাটকা বাবু। এ ছাড়া আর একজন ভদ্র বেশী বর্ডার নিয়ন্ত্রক আন্ডার ওয়ার্ল্ডের অস্ত্র ক্রেতা উদীচী হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী যশোরের হাসান। এদের সাথে আড্ডা, ঘুম এবং বই পড়ে সময় কাটাতাম। তা ছাড়া আমার রুমমেট বাবু,টিক্কা প্রতিদিনই আমার পড়ার জন্য তিনটা পত্রিকা বিকেলে গেইটে আগত তাদের মুরিূদানদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে আমায় পাঠ দানের সুযোগ করে দিত।সত্যি কথা বলতে কি সন্ত্রাসীদের মাঝে আর একটি মানুষের অস্তিত্ব আমি জেলে না গেলে বুঝতে পারতাম না।
এই ভাবে আমার দিনের পর দিন চলে যেতে থাকে। তখন আমার বৃদ্ধা মা বেঁচে আছেন। আমি তাকে নিয়ে বেশী চিন্তা করতাম। মায়ের আমি ছাড়া কেউ দেখার নাই। আমি ভাবতাম আমার চারটি সন্তানের কথা, যাদের মধ্যে বড় ছেলে শুভ্র কলেজে, মেয়ে দুটো স্কুলে এবং ছোট ছেলে সুপ্ত তখন তেমন কিছু বুঝার বয়স হয়নি। আমি যখন জেলে গেলাম সেদিন ১ লা অগষ্ট। তখনকার সময় মাসের শেষ সপ্তাহ সরকারি কর্মচারীরা কিভাবে চলত তা এখনকার সরকারি কর্মচারীরা বুঝবে না। আমি যখন জেলে যাই,তখন আমার ঘরে তেমন কোন টাকা ছিল না। সচিবালয়ে মাসের এক তারিখে বেতন হয়,সুতরাং ঐ দিন বেতন পাবো বিকেলে পুরো মাসের চাল ডাল তেল ও অন্য মাসিক বাজার করব কিন্তু তার পরিবর্তে আমার ঠিকানা হলো সরকারের মেহমানখানায়।
আল্লাহ ন্যায় ও সত্যের পথের পথিকের আহারের ব্যবস্হা করেন । আমি ভাবিনি যে সকল ব্যক্তি আমার বাসার খোঁজ খবর নিয়েছেন তাদের ঋণ অপরিশোধ্য। যেমন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেবের আমলের মন্ত্রী আমার শ্রদ্ধা ভাজন বিশিষ্ট আইনজীবী মাহবুবুর রহমান,রুহুল আমিন হাওলাদার, আমার বড়ভাই তুল্য নুরুজ্জামান মুন্না ভাই প্রমুখ। আর একজন আমার শুভাকাঙ্ক্ষী শ্রদ্ধেয় তৎকালীন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব সিরাজ উদ্দীন আহমেদ বিভিন্ন মন্ত্রীর, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতার দ্বারে দ্বারে ঘুরে বোঝাতে চেয়েছেন জনতার মঞ্চে তথা আওয়ামী লীগের সরকারে আসায় আমার ভুমিকার কথা। কি ন্তু ওদের কর্ন কুহরে সিরাজ ভাইয়ের আওয়াজ পৌঁছে নাই। জনাব সিরাজ উদ্দীন আহমেদ আমলা হয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদ্রোহ করেছিলেন যা বরগুনাবাসী এখনও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, তার প্রতি ও কেউ সহানুভূতি দেখায়নি। কারন একুশ বছরে মুল গাছে অনেক আগাছা জন্মেছিল তাইতো সিরাজ উদ্দিন সাহেবরা ওদের অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছিল।
(চলবে----)