somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ভৌতিক কান্ড

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি মাঝে মাঝে একটা চায়ের দোকানে যাই।
চায়ের দোকানটা খিলগাও এর তিলপাপাড়া এলাকাতে। গলির অনেক ভিতরে চায়ের দোকান টা। বেশ নিরব জায়গা। রাস্তাটা বেশ পরিস্কার। সবচেয়ে বড় কথা ফুটপাত গুলো দখল মুক্ত। ফুটপাতে লাগানো গাছ গুলো অনেক বড় হয়েছে। দেখতে ভালো লাগে। চায়ের দোকানের উলটো দিকে একটা ক্লাব আছে। ক্লাবের নাম এ বি সি। আসলে এটা নামে ক্লাব। এখানে খেলাধূলার কোনো ব্যবস্থা নেই। এলাকার হোমরা চোমরা ক্লাব নাম দিয়ে জায়গাটা দখল করে রেখেছে। মাঝে মাঝে তারা মদ তদ খায়। যাই হোক, আমি যে দোকানে চা খাই তার মালিকের নাম বিল্লাল। বিল্লাল নিজেই চা বানায়। সারাদিনে দোকানে বেচাকেনা মন্দ না।

বিল্লাল আমাকে খুব পছন্দ করে।
কেন পছন্দ করে আমি জানি না। বিল্লালের বয়স বেশি না। হিসাব করলে বয়স আমার চেয়ে কমই হবে। ছোট একটা চায়ের দোকান, এই দোকানে আমি চা সিগারেট খেয়ে দুই হাজার টাকা বাকি করেছি। কিন্তু বিল্লাল আমার কাছে কখনও টাকা চায় নি। গত কয়েকদিন বিল্লালের দোকানে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। খোঁজ নিয়ে আমি বিল্লালের বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি সে অনেক অসুস্থ। আমার ধারনা, সম্ভবত বিল্লালের করোনা হয়েছে। বিল্লালকে দেখাশোনার করার কেউ নাই। সে একা একরুম নিয়ে মেসে থাকে। আমি বললাম, বিল্লাল কি খবর? সে বলল, জ্বর আছে ভাইজান, সাথে শরীর ব্যথা, কাশি হয় খুব, কোনো গন্ধ পাই না, কোনো খাবারের স্বাদ পাই না। আমি বললাম, লক্ষন তো করোনার! সে বলল, করোনা ফরোনার ভয় আমি পাই না।

যখন আমাদের দেশে লকডাউন শেষ হয়-
তখন বিল্লালের চায়ের দোকানে গেলাম। লকডাউন এর কারনে বিল্লাল প্রায় দুই মাস দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলো। তার মেজাজ খুব খারাপ ছিলো তখন। বিল্লাল বলল, করোনা ফরোনা কিচ্ছু না। সব ভাওতাবাজি। করোনা বলে কিছু নেই। গুজব। এই গুলা সরকারের সাজানো নাটক। আমাদের মতো গরীবদের সরকার মারার বুদ্ধি করছে। আমি বললাম, বিল্লাল করোনা গুজব নয়, বাস্তব। আমার কথা বিল্লাল কিছুতেই বিশ্বাস করলো না। আজ বিল্লালের ঠিকই করোনা হয়েছে। বিছানায় শুয়ে কুকাচ্ছে। ছটফট করছে। তবে আমি জানি সে সুস্থ হয়ে উঠবে। তার মনোবল তীব্র। ও আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমি সব সময় দুধ চা খাই। কিন্তু বিল্লাল আমাকে দুধ চা খেতে দেয় না। সে বেশি করে লেবু দিয়ে আমাকে চা করে দেয়। লেবু চা টা ভালো লাগে।

আমি খুব দুঃখিত। ক্ষমাপ্রার্থী।
লিখব আমার ভৌতিক কাহিনী। অথচ শুরু করেছি চায়ের দোকানের বিল্লালের গল্প। আমার দোষ হলো আজাইরা প্যাচাল আমি বেশি পাড়ি। কাজ রেখে, অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। স্যরি। যাই হোক, আর বক বক না করে আসল কথা শুরু করি। আমি একটা চেয়ার কিনেছি। সম্পূর্ন কাঠের চেয়ার। খুব মজবুত। চেয়ারটা ব্যলকনিতে রেখেছি। সুরভি আমাকে ঘরে সিগারেট খেতে খুব কঠিন করে মানা করে দিয়েছে। তাই আমি ব্যলকনিতে গিয়ে সিগারেট খাই এখন। চেয়ারে বসি, আরাম করে হেলান দেই আর পা রাখি গ্রিলে। সিগারেট খাই। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি। ভালো লাগে। হু হু করে সময় চলে যায়।

চার দিন আগের কথা।
তখন অনেক রাত। সুরভি গভীর ঘুমে। আমি সিনেমা দেখছি। সিনেমার নাম- No Mercy। ভয়াবহ সিনেমা। মুভিটা আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছি। ভাবলাম ব্যলকনি থেকে একটা সিগারেট খেয়ে আসি। খুব চুপি চুপি ব্যলকনিতে গেলাম। বাতি জ্বালালাম না। কারন যদি সুরভির ঘুম ভেঙ্গে যায়। বেচারি সারাদিন অনেক কাজ করে। আরাম করে ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক। তাছাড়া ব্যলকনিতে বাইরে থেকেও বেশ আলো আসে। কাজেই ঘুটঘুটে অন্ধকার না। ব্যলকনিতে গিয়ে আমি প্রচন্ড অবাক। আমার কেনা নতুন চেয়ারটায় কেউ একজন বসে আছে। কোনো ভুল না। স্পষ্ট দেখলাম। এবং ভালো করে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে দেখলাম। কেউ একজন চুপ করে বসে আছে। আমি এক দৌড়ে ঘরে চলে এলাম। এবং চুপ করে বিছানায় সুরভির পাশে শুয়ে থাকলাম। প্রচন্ড ভয় পেয়েছি আমি। আমার সারা শরীর কাঁপছে। এটা কি করে সম্ভব?

সুরভিকে এই ঘটনা কিছুই বললাম না।
সে আমার চেয়ে বেশি ভীতু। সামান্য লোডশেডিং হলেই ভয়ে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে। যাই হোক, এরপর থেকে প্রতিদিন রাতে ব্যলকনিতে যাই সিগারেট খেতে। এবং কাউকে না কাউকে ঠিকই বসে থাকতে দেখি। চুপ করে বসে থাকে। কোনো কথা বলে না। এখন আর ভয় পাই না। অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি ধরেই নিয়েছি, যারা আমার ব্যলকনিতে বসে থাকে তারা আমার মৃত আত্মীয়স্বজন। একেকদিন একেকজন আসেন। কিছুক্ষন বসে থেকে চলে যান। তারা তো আমার কোনো ক্ষতি করছে। তারা থাকুক তাদের মতোন। কিন্তু সমস্যা হলো গতকাল। গতকাল প্রতিদিনকার মতো ঠিক রাত দুটোয় ব্যলকনিতে গিয়েছি সিগারেট খেতে। গিয়ে দেখি চেয়ারটায় বিল্লাল বসে আছে। চায়ের দোকানের বিল্লাল।

আমি জানি আমার এই ঘটনা কেউ বিশ্বাস করবে না।
সবাই বলবে মিথ্যা গল্প। বানানো গল্প। অবাস্তব। আমি নিজেও এই ঘটনা বিশ্বাস করতে চাই না। আমি একজন আধুনিক মানুষ। কোনো প্রকার কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। তবে একথাও সত্য দুনিয়াতে অনেক কিছু ঘটে, যার ব্যখ্যা নেই। যা ব্যখ্যা করা যায় না, তাই ই তো অলৌকিক। আমার ব্যলকনিতে চেয়ারে রোজ রাতে কেউ না কেউ বসে থাকে। এটা সত্য কথা। মিথ্যা নয়। অবশ্য যদি আমাকে অন্য কেউ এই গল্প করতো- আমি এক বাক্যে তাকে ফিরিয়ে দিতাম। বলতাম- এটা আপনার মনের ভুল। এটা কখনও সম্ভব না। ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই আমার সাথেই রোজ এই রকম ঘটনা ঘটছে। আজিব! আসলেই দুনিয়াটা অনেক রহস্যময়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪১
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×