ছবিঃ আমার তোলা।
আমি খুবই অলস হয়ে গেছি।
গ্রামের ভাষায় যাকে বলে আইলসা। গতকাল সকালে টেবিলে বসেছি নাস্তা করবো। কিন্তু পাউরুটিতে মাখন মাখতে ইচ্ছা করছে না। অতি সামান্য কাজ। বাটি থেকে চামচে মাখন নিবো, রুটিতে লাগাবো। সামান্য কিছু চিনি ছিটিয়ে দিবো। খেয়ে নিবো। অথচ এই সামান্য কাজ টুকু করতে ইচ্ছা করছে না। রুটি মাখন সামনে নিয়ে বসে আছি। মনে মনে ভাবছি হায় কেউ যদি রুটিতে একটু মাখন লাগিয়ে দিতো। এই ভাবতে ভাবতে আধা ঘন্টা চলে গেছে। শেষে এক কাপ চা খেয়ে উঠে গেছি। অথচ এই আমি তিন বছর আগেও সামান্য কারনে মেজাজ খারাপ হলে পায়ে হেঁটে এয়ারপোর্ট চলে যেতাম।
দুদিন আগের কথা-
সারারাত বৃষ্টি হলো। ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা পড়লো। রীতিমতো শীতে আমি কাঁপছি। উঠে যে ফ্যানটা কমিয়ে দিবো সেটা ইচ্ছা করছে না। শীতে কুকড়ে মুকড়ে আছি। এদিকে আমার গালি গায়ে ঘুমানোর অভ্যাস। তারপর আমার একটা ছোট্র টেবিল ফ্যান আছে। ঘুমানোর সময় মাথার কাছে রেখে ছেড়ে দেই। অস্থির বাতাস। ঘুমের মধ্যেই শীতে কাপতে কাঁপতে কুন্ডলী পাকিয়ে আছি তবু উঠে গিয়ে ফ্যান বন্ধ করতে ইচ্ছা করছে না। শেষে চেষ্টা করলাম মাথার বালিশ দিয়ে পিঠ ঢেকে দিতে। না তাতেও কাজ হয়নি। ঠান্ডায় কষ্ট করতে হয়েছে। এতো আইলসা আমি হলাম কি করে? আমি তো এরকম ছিলাম না।
অনেক দিন ধরে দেয়াল ঘড়িটা বন্ধ হয়ে আছে।
প্রতিদিন ভাবি আজ একটা পেন্সিল ব্যাটারি কিনব। কিন্তু কেনা হয় না। অথচ প্রতিদিন আমি বাইরে যাচ্ছি। নানান জিনিসপত্র কিনছি। বাসায় এসে সময় দেখার জন্য ঘড়ির দিকে তাকাই তখন মনে হয়- আহ আজও ব্যাটারিটা কেনা হলো না। এমন কি আমি রোজ যে দোকানে চা খাই। তার পাশের দোকানটাতে পেন্সিল ব্যাটারি সাজিয়ে রাখা। চা খাওয়ার সময় বেশ কয়েকবার সেই পেন্সিল ব্যাটারির দিকে চোখ যায়। সুরভি তার বাবার বাড়ি থেকে এসে বলল, তুমি এত ব্যস্ত একটা ব্যাটারি কিনে এনে লাগানোর সময় পাও নি! রাত তখন দশটা। আমি তেজ দেখিয়ে ছয় তোলা থেকে নামলাম। এবং ১২টা পেন্সিল ব্যাটারি নিয়ে এলাম।
আমি নিয়মিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাই।
অথচ আজ দশ দিন ধরে ঘরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নেই। প্রতিদিন বাইরে যাচ্ছি। অথচ ওষুধ না কিনে বাসায় চলে আসছি। এদিকে রাতে শুরু হয় বুক জ্বলাপোড়া। এন্টারসিডও নেই যে মুখে দিয়ে চুষবো। শেষে রাত দুইটায় দোতলায় ভাবীকে ফোন দিলাম। ভাবী আমাকে একটা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দেন। সেটা খেয়ে রাতে আরাম করে ঘুমিয়েছি। এদিকে আমি বাসায় বলেছি সাদা ভাত রান্না করো। সাথে ভাজি- ভরতা। কিন্তু বাসার মানুষ পোলাউ, কাচ্চি আর বিরানী রান্নার হিড়িক লাগিয়েছে। তারউপর সন্ধ্যায় আবার পাকোরা, পিয়াজু, নুডুলসহ হাবিজাবি রান্না করছে রোজ। এরকম উলটা পালটা খেয়ে আমার অবস্থা কাহিল।
মা অনেকদিন ধরে বলছে শাপলা খাবে।
শাপলা খাওয়ার জন্য নাকি তার মন ছুটে গেছে। সে ইলিশ মাছ দিয়ে শাপলা খাবে। চিংড়ি মাছ খাবে এবং শুটকি মাছ দিয়ে নাকি শাপলা খাবে। নানী নাকি আগে শাপলা রান্না করতো অনেক মজা করে। সেই শাপলা মাকে কেউ এনে দেয় না। আমিও দেই নি। আমি দিব কি আমার কিছুই মনে থাকে না আজকাল। গতকাল মা রেগেমেগে নিজেই শাপলার সন্ধানে বের হয়েছে। একগাধা শাপলা নিয়ে এসেছে। আজ বাসায় শাপলার তিন আইটেম করেছে। ইলিশ মাছ দিয়ে, চিংড়ি দিয়ে আর শুটকি মাছ দিয়ে। শাপলা আমি কোনো দিন খাই নি। আজও খাবো না। সুরভি গতকাল তার বাবার বাড়ি থেকে বিরানী নিয়ে আসছে- আমি সেটাই খাবো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৫০