দশ বছর আগের কথা।
ফোটোগ্রাফীর উপর একটা বই লিখব। একদিন সত্যি সত্যি ফোটোগ্রাফী নিয়ে লেখা শুরু করলাম। কারন বাংলাদেশে ফোটোগ্রাফীর উপর বইয়ের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটা। সেই আমলে হাতে কলমে ফোটোগ্রাফী শেখার প্রতিষ্ঠানও ছিলো মাত্র দুইটি। এর মধ্যে একটা পাঠশালা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখতে থাকলাম প্রতিদিন। ফোটোগ্রাফীর অতি তুচ্ছ বিষয়ও মন দিয়ে পাতার পর লিখতে থাকলাম। ফোটোগ্রাফীতে নিজের জমানো অভিজ্ঞতা গুলোও লিখেছিলাম। প্রায় ১৯ হাজার শব্দ লিখেছিলাম। খুব সহজ সরল ভাষায় লিখেছি, যেন একজন রিকশাচালকও পড়লে যেন বুঝতে পারেন, বেগ পেতে যেন না হয়। কেউ যেন ফোটোগ্রাফীকে ভয় না পায়। পোড়া কপাল আমার লেখাটা শেষ করতে পারি নি আজও। ফটোগ্রাফী নিয়ে কিছু লেখা আমি সামুতে পোষ্ট করেছিলাম। সার্চ করলে হয়তো পাওয়া যাবে। লেখাটা শেষ করতে হবে। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে।
ফোটোগ্রাফীর নানান দিক রয়েছে।
ফোটোগ্রাফির কিছু দিক এখনও আয়ত্ব করতে পারিনি। যেমন- এভিয়েশন ফটোগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল ফটোগ্রাফি, ক্যানডিড ফটোগ্রাফি, ক্লাউডস্কেপ ফটোগ্রাফি, ফ্যাশন ফটোগ্রাফি, ফায়ার ফটোগ্রাফি, ফুড ফটোগ্রাফি, ফরেনসিক ফটোগ্রাফি, ফটোজার্নালিজম, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, ট্রাভেল ফটোগ্রাফি, আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি এবং ভার্নাকুলার ফটোগ্রাফি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। বুঝতে পারছি, প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। একজন দক্ষ গুরু ধরে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে পথে পান্তরে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পরিশ্রম করলে- ভালো কিছু ছবি তোলা সম্ভব হবে। এখন সবার হাতে হাতে ডি এসএলআর ক্যামেরা। আমি ফোটোগ্রাফী শুরু করেছিলাম কোডাক এর রিল ক্যামেরা দিয়ে। ছবি তুলতে পারতাম মাত্র ৩৬ টা। কি ছবি তুলেছি প্রিন্ট করার আগে বুঝা যেত না।
এখন ফোটোগ্রাফী খুবই সহজ হয়ে গেছে।
বিশ বছর আগেও ডার্ক রুম ছাড়া যেখানে কোন সংবাদপত্রের অফিস কল্পনাই করা যেত না, আজ সেখানে বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও ডার্ক রুম নেই। একজন আলোকচিত্রীর সব ধরনের ছবি তোলার যোগ্যতা থাকতে হয়। আমার ভালো লাগে স্ট্রিট ফোটোগ্রাফী। স্ট্রিট ফোটোগ্রাফীর মধ্যে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। একজন স্ট্রিট ফোটোগ্রাফারকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়। স্ট্রিট ফোটোগ্রাফারের এক-একটা ছবি হতে হয়- এক-একটা গল্প, জীবনের গল্প। একজন স্ট্রিট ফোটোগ্রাফার ফুটপাতে শুয়ে থাকা ছোট্র শিশু অথবা পার্কে বসে থাকা বুড়োর ছবি তার ক্যামেরায় ধারন করবে- এবং অন্যরা যখন এই ছবি দেখবে- তখন তারা এই ছবির মধ্যে একটা জীবনের গল্প খুঁজে পাবে। এখানেই স্ট্রিট ফোটোগ্রাফারের কারসাজি।
গত দুই বছর আমি ক্যামেরা হাত দিয়ে ধরে দেখিনি।
ঘরে ক্যামেরাটা কোথায় আছে তাও সঠিক জানি না। নষ্ট হয়ে গেছে কিনা তাই বা কে জানে! তবে ক্যামেরা আমি আবার হাতে নিবো। হহয়তো খুব শ্রীঘই। কিছু ভালো ছবি আমাকে অবশ্যই তুলতে হবে। আমার জীবনে ৫ টা যদি ভালো ছবি তুলে থাকি, পাঁচ লাখ তুলেছি ফালতু ছবি। আমাকে সবচেয়ে বেশি তুলতে হয়েছে অনুরোধের ছবি। লোকজন ক্যামেরা হাতে দেখলেই অনুরোধের আসর ডেকে বসেন। মানাও করা যায় না। এমন কি তাদের বাড়িতে গিয়েও স্ত্রী, পুত্র, কন্যার ছবি তুলে দিতে হয়েছে। বিপুল সময়ের অপচয় করেছি। আর না। বহু পোলাপান আমার কাছে ফোটোগ্রাফী শিখতে এসেছে। সবার আগে আমি তাদের ক্যামেরা ধরা শিখাই। পোলাপান অবাক হয়! আরে ব্যাটা ক্যামেরা যদি ভালো করে ধরতেই না শিখিস তাহলে ভালো ছবি তুলবি কেমন করে!
ক্যামেরা এবং ফোটোগ্রাফী নিয়ে লাখ লাখ সৃতি আছে।
সেগুলো ভুলে যাবার আগে লিখে ফেলতে চাই। একটা সময় দিন-রাত ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। দল বেঁধে যেতাম ফোটোওয়ার্কে। বছরের পর বছর। এমনও হয়েছে মধ্যরাতে ঘরে কাগজ ছিড়ে ছিড়ে আগুন জ্বালাতাম। তারপর নানান ভাবে সেই আগুনের ছবি তুলতাম। সামান্য একটা শাপলা ফুলের ছবি তোলার জন্য নোংরা জলাশয়ে নেমে যেতাম পরিস্কার জামা কাপড় পড়ে।। একটা প্রজাপতি বা ফড়িং এর ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা তাক করে ঘাসের উপর শুয়ে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। দশ বছর আগে ফ্লিকারে একটা একাউন্ট খুলেছিলাম। এই যে লিংক। আগে ঘন্টার পর ঘন্টা ফ্লিকারে পড়ে থাকতাম। সেই দিন গুলো কোথায় গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:২২