ওস্তাদ বললেন, ওহে শিষ্য খবর কি?
জ্বী ওস্তাদ ভালো।
তোমাকে যে ঈশ্বর জ্ঞান দিলাম, তা কি হৃদয়ে ধারন করতে পেরেছো?
শিষ্যঃ কিছুটা তো বুঝতে পেরেছি নিশ্চয়ই।
ওস্তাদঃ কিন্তু তোমার চোখে মুখে কোনো দীপ্তি দেখা যাচ্ছে না।
শিষ্যঃ যদি অনুমতি দেন তো নির্ভয়ে বলি।
বলো।
আসলে ঈশ্বর টিশ্বর কিছু নেই। ঈশ্বর তো মানুষের অলীক কল্পনা। ঈশ্বর কোনো কাজে লাগে না। সুতরাং ঈশ্বর থাকা আমাদের জন্য কোনো প্রয়োজন নেই।
বৎস, তাহলে তুমি বিগত পাচ বছরে আমার কাছ থেকে কি শিখলে?
শিষ্যঃ ঈশ্বর সাধনা ইচ্ছা ছিল আমার। কিন্তু শেষে বুঝলাম এটা নিরর্থক। পাচটা বছর নষ্ট হলো আমার।
হে বৎস, তুমি সঠিকভাবে সাধনা করনি। এখন আমার রাগ লাগছে।
শিষ্যঃ ওস্তাদ অযথা আমাকে ভৎসনা করছেন। আমি তো অন্যের মতো চরিত্রভ্রষ্ট হইনি। কত ঋষিরা ব্যভিচারী হয়েছে।
ওস্তাদঃ সে জন্য তোমাকে সাধুবাদ জানাই।
শিষ্যঃ আমি আপনার সেবা করেছি। শ্রদ্ধা করেছি। আমার কর্মে খুশি হয়েই আপনি আমাকে সাথে রেখেছেন।
ওস্তাদঃ আমার সিদ্ধান্তে ভুল ছিলো না।
শিষ্যঃ ঈশ্বরের আলোয় আলোকিত হতে পারিনি।
ওস্তাদঃ তুমি আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হও।
শিষ্যঃ নানা পন্ডিতের নানা কথা শুনে আমি দিকভ্রান্ত। পথভ্রষ্ট। এজন্য আমি নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। নারীসঙ্গ আমাকে আনন্দ দেয়। ঈশ্বর দেয় ভয়। এখন আপনিই বলুন আমার কি দোষ।
ওস্তাদঃ নারীসঙ্গ আমি কখনো লাভ করিনি। ইহার মজা বুঝি না। কাজেই নারী তোমাকে কি আনন্দ দেয়, সেটা বুঝতে পারছি না।
শিষ্যঃ নারী এক আশ্চর্য আনন্দ। রাজা, বাদশা, প্রজা, ফকির সকলেই নারীতে বশ। আপনি নারীসঙ্গ কখনও উপভোগ করেন নি বলে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আপনার অগোচরে রয়ে গেছে।
ওস্তাদঃ কিন্তু নারী বিষয়ে আমি অজ্ঞ নই।
শিষ্যঃ ওস্তাদ আপনি কখনো মদ খেয়েছেন? ধর্মগ্রন্থের বাইরে গিয়ে জ্ঞান আহোরন করেছেন? ফুটপাতে শুয়ে থাকা মানুষ দেখেছেন? ক্ষুধার্ত শিশু দেখেছেন? অসহায়, দরিদ্র মানুষ দেখেছেন? মধ্যরাতে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা নিশিকন্যা দেখেছেন? অত্যাচার, জুলুম হতে দেখেছেন? অন্যায় হতে দেখেছেন?
ওস্তাদঃ আমি সবই আস্বাদন করেছি। কিন্তু তোমার কথায় বিস্মিত হয়েছি!
সন্ধ্যা যখন ঘনায়মান। এক রাজনটির আগমন হলো।
প্রত্যেকেই মুগ্ধ হয়ে নর্তকীর দিকে তাকিয়ে আছে ছেলে বুড়ো সবাই! জজ ব্যারিস্টার, ব্যবসায়ী, বেকার যুবক, আর্টিস্ট, শিক্ষক, গায়ক, সাংবাদিক, শিল্পপতি, চাকরীজিবী- সবাই নর্তকীর সান্নিধ্য চায় মনে মনে। নর্তকীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ওস্তাদ শিষ্য দুজনেই এসেছেন।
ওস্তাদঃ আমি আজ রসগ্রহণ করতে এসেছি।
শিষ্য মৃদু হাসলো।
শিষ্য বলল, হে মহান রমনী ওস্তাদ কে আনন্দ দান করো।
ওস্তাদঃ মানুষ সব জানে। সুখ, দুঃখ, প্রেম, ভালোবাসা, ক্লান্তি। অবসাদ। জন্ম মৃত্যু। কিন্তু মানুষ সব ভুলে থাকতে চায়। যে জ্ঞান সব বাধাকে ধ্বংস করে, সেটাই ঈশ্বর জ্ঞান। শিষ্য তুমি আবার সাধনায় ব্যাপৃত হও।
যথার্থই বলেছেন, ওস্তাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৪৪