
আজকে বাংলা আষাঢ় মাসের ৩০ তারিখ।
আর একদিন পর শুরু হবে শ্রাবন মাস। চলছে বর্ষাকাল। অথচ কোনো বৃষ্টি নাই। চারিদিকে মারাত্মক গরম। ঘর থেকে বাইরে যাওয়া যায় না এমন অবস্থা। রোদের মারাত্মমক তাপ। ছোট ভাই তার পরিবার নিয়ে কক্সবাজার গেছে। গমের কারনে চলে এসেছে। চামড়া যেন পুড়ে যায়। বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে না কেন? তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ৩৫ ডিগ্রী। কিন্তু অনুভব করছি তারপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী। সাধারণত ৩০ ডিগ্রী তাপমাত্রা হলেই শরীরে ঘামাচি উঠে যায়। ছোটবেলায় বর্ষাকাল নিয়ে রচনা মূখস্ত করেছি। সেই রচনার সাথে এখনকার বর্ষাকালের কোনো মিল নেই! আষাঢ়, শ্রাবন মাস নিয়ে কত কবিতা আর গান আছে। সে সব আজ মিথ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোরবানীর ঈদ শেষ হলো।
এবার প্রায় দেশে এক কোটি গরু এবং ৩৫ লাখ ছাগল জবাই হয়েছে। গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আগামী বছর হয়তো আরো বেশি গরু ছাগল জবাই হবে। আমাদের এখানে বিশাল হাঁট বসিয়েছিলো। অসংখ্য গরু। কিন্তু ঈদের আগের দিন পুরো হাঁট খালি হয়ে গেছে। লোকজন গরু কিনতে এসে ফিরে গেছে। আমি মনে মনে ভেবেছিলাম এত এত গরু কিনবে কে? তাছাড়া একটা মাঝারি সাইজের গরুর দাম দেড় লাখ টাকার বেশি। বাংলাদেশের মানুষ তো বেশ ভালোই ধনী। তাহলে গরুর মাংসের জন্য এত লোক বাড়ি বাড়ি ছোটাছুটি করে কেন? এবার নিজেদের জন্য কোন মাংস রাখি নাই। সব বিলিয়ে দিয়েছি।
ভেবেছিলাম ঈদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটা ছবি ব্লগ পোষ্ট দিবো।
ব্লগার শায়মা সব সময় ঈদের খাবারদাবার নিয়ে একটা রাজকীয় ছবি ব্লগ পোষ্ট দিতেন। উনাকে অনেকদিন ব্লগে দেখছি না। মনে হয় ব্যস্ত আছেন। যাইহোক, কোরবানীর ঈদের দিন আমার ঘর থেকেই বাইরে বের হতে ইচ্ছা করে না। লোকজনের রাস্তায় গরু জবাই দেয়। রাস্তা নোংরা করে রাখে। হাঁটা যায় না। আর খুব বাজে গন্ধ। অবশ্য এবার সিটি কর্পোরেশন ভালো সার্ভিস দিয়েছে। আমার ঈদের আসল আনন্দ ছিলো ছোটবেলায়। এখন কোনো আনন্দ পাই না। টিভির অনুষ্ঠান দেখি না। কারো বাসায় যাই না। কেউ বাসায় এলেও বিরক্ত লাগে। শুধু খাওয়াদাওয়া করি। নিজের কন্যাকে সময় দেই।
মা রান্না করা ছেড়ে দিয়েছে- বহু বছর হয়েছে।
তার চার ছেলের বউ রান্নাঘর দখল করে নিয়েছে। ঈদের দিন আমাদের বাসায় তিন রকমের সেমাই রান্না হয়। দুধ সেমাই। শুকনো সেমাই আর লাচ্ছা সেমাই। তিনটা সেমাই খেতে দারুন হয়। প্রচুর পরিমানে রান্না করা হয়। ফ্রিজে থাকে। যখন খুশি নিয়ে নিয়ে খাও। পায়েস রান্না হয় ঈদ উপলক্ষ্যে। ৮ কেজি দুধকে জাল দিয়ে-দিয়ে এক কেজি করা হয়। সেই একে কেজি দুধ দিয়ে পায়েস তৈরি করা হয়। সাথে কনডেন্স মিল্ক ও নানান রকম বাদাম দেওয়া হয়। বাসার সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে খায়। কিন্তু আমি খাই না। কেন জানি পায়েস, পুডিং আর বোরহানী আমার ভালো লাগে না। বাসায় বলেছি, আমি যেসব খাবার খাই না, সেসব খাবার কেন রান্না করো!
ঈদের দিন দুপুরের খাবার হচ্ছে খিচুড়ি।
সাথে গরুর মাংস, মূরগীর মাংস। চিংড়ি ফ্রাই। ইদানিং বাসায় বোরহানী বানানো হয়। আমার ভাবী আজকাল কোনো কিছু দোকান থেকে কিনেন না। উনি নিজে সব বাসায় তৈরি করেন। কারন বাসার তৈরি খাবার ১০০% নিরাপদ। রাতের খাবার হচ্ছে- পোলাউ, রোষ্ট (দেশী মূরগী), গরুর মাংস। টিকিয়া। এছাড়া থাকে, চটপটি, সনপাপরি, পুডিং আর নানান রকম কোমল পানীয়। আমি ইদানিং খাবার দাবার কমিয়ে দিয়েছি। খুবই সামান্য খাই। কম খেলেই শরীর সুস্থ থাকবে। তাছাড়া মা বলেছে, বয়স হচ্ছে, হিসাব করে খেও। খেয়ে অসুস্থ হয়ে যেও না।
ছোটবেলায় দেখেছি মা খুব বেশি কিছু রান্না করতো না।
তবে মায়ের হাতের একটা খাবার আমি খুব মিস করি। সেটা হচ্ছে জাল দেওয়া মাংস। এক পাতিল মাংস নিতো, তাতে শুধু আদা, রসুন, লবন আর জিরা দিতো। আর কিচ্ছু না। খুব অল্প সময়ে মাংস নরম হয়ে যেত। গরম গরম খেতে দারুন লাগতো। জাল দেওয়া মাংসটা আমি খুব মিস করি। যখন খেতে ইচ্ছা করতো, চুলায় গরম করতাম আর খেতাম। শেষের দিকে খেতে মাংসটা বেশি ভালো লাগতো। জাল দিতে দিতে মাংসের স্বাদ বেড়ে যেত। এখনকার বউ-জিরা এসব পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




