somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ৬৯

১৭ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

আমি একজন ব্যর্থ মানুষ।
আগাগোড়া একজন ব্যর্থ মানুষ। জন্মের পর থেকেই আমি ব্যর্থ মানুষ। যখন দুনিয়াতে আসি, আমার জন্য আমার মা প্রায় মারাই যাচ্ছিলেন। ডাক্তাররা কোনো মতে মাকে বাচিয়েছেন। আমি জন্মের পর বাবার ব্যবসায় ধ্বস নামলো। বাসায় একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। এই প্লেট ভাঙ্গে। কেউ পিছলা খেয়ে পড়ে পায়ে ব্যথা পায়। আমাকে যে দেখতে আসে। সে-ই অসুস্থ হয়ে যায়। কেউ কেউ এমন অসুস্থ হয় যে, তাকে হাসপাতালে ভরতি হতে হয়। তখন আমি ছোট। এসব বড় হয়ে জেনেছি। এজন্য আমার বাবা মা আমাকে খুব বেশী আদর স্নেহ দেয় নাই।

স্কুলে ভরতি হলাম। আর ফেল করতে শুরু করলাম।
সব সাবজেক্টে ফেল করি। অথচ একই স্কুলে আমার অন্য ভাই পড়ে। সে পাশ করে। আমি আর আমার একই শিক্ষকের কাছে পড়ি। ফেল করি, আর অন্য স্কুলে ভরতি হই। কারন সব সাবজেক্টে ফেল করার কারনে স্কুল আমাকে আর রাখতে চায় না। শিক্ষকরা বলেন, আমার মতো বাজে ছাত্র তাঁরা তাদের জীবনে দেখে নাই। দুনিয়ার সব বিষয় আমি জানি। লেখাপড়া ছাড়া দুনিয়ার সব বিষয় আমার ভালো লাগে। বাবা সারাদিন থাকে বাইরে বাইরে। জন্মের পর থেকেই মা আর শিক্ষকদের হাতে মাইর খেতে খতে আমার জীবন যাচ্ছে। আমি শুধু ভাবি, আমি তো পৃথিবীতে নিজ ইচ্ছায় আসি নাই। তাহলে কেন আমার উপর জোর করে তোমাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিচ্ছো!

একদিন বাবা বললেন-
প্রিয় পুত্র আমার জীবনে লেখাপড়ার দরকার আছে। কোনো রকমে মেট্রিক পাশ করে কলেজে ভরতি হও। এটাই তোমার কাছে আমার চাওয়া। তুমি ৩৩ নম্বর পেলেই আমি খুশি। বাবার জন্য মায়া হলো। কিছুটা পড়ালেখা শুরু করলাম। আর সত্যি সত্যি ৩৩ নম্বর পেয়ে-পেয়ে পাশ করে গেলাম। কলেজে উঠে প্রেম করার শখ হলো। অথচ কোনো মেয়ে আমার সাথে প্রেম করতে চায় না। কিন্তু আমার চেহারা ছবি ভালো। দেখতে বাংলা সিনেমার নায়কের চেয়ে কম নয়। বিশেষ দিন গুলোতে একাএকা ঘুরি। প্রেমিকা নেই। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়। কত অগা-বগা-যগা প্রেম করে বেড়াচ্ছে চোখের সামনে! রাগে নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা করে। এমনই পোড়া কপাল! অথচ বাপে আমার নাম রাখছে আশিক।

একদিন বুঝলাম বড় হয়ে গেছি।
বাবাকে বললাম, আমাকে বিয়ে করিয়ে দেন। আমার বিয়ে করা দরকার। বাবা চোখ মুখ লাল করে বললেন, শুয়োরের বাচ্চা- বাদাইম্মা, কাম কাজ নাই। বিয়ে করার শখ হইছে। নিলর্জ্জ শালা। তোর আপন ভাই মাসে লাখ টাকা ইনকাম করে। সে এখনও বিয়ে করে নাই। আর তুমি শালার পো আইছো বিয়া করতে! সারাটা জীবন আমারে জ্বালাইছো। বাবা কথা শেষ করার আগেই কাশতে শুরু করলো। বাবা অনেক অসুস্থ। বয়সও অনেক হলো। যাইহোক, বাবা বললেন, যেহেতু তুমি আমার সন্তান। আমার দায়িত্ব তোমাকে বিয়ে দেওয়া। আমি তোমার বিয়ে দিবো। মরার আগে বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে গেলেন। এই বিয়ে দিয়ে আসলে বাবা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে গেলেন। বাবার উচিৎ ছিলো- আগে আমাকে একটা ব্যবসা ধরিয়ে দেওয়া। বাবা মায়ের ভুলের জন্য- আমার জীবনটা শেষ!

বিয়ে করলাম। সংসারে বাচ্চা হলো।
একদিন বাবা মারা গেলো। তার ছয় মাস পর মা মারা গেলো। আমি পড়ে গেলাম বিশাল সমুদ্রে। জানি না সাঁতার। বাবা মারা যাওয়ার পর কিছুই পেলাম না। তার জমি নেই, বাড়ি নেই। মায়ের দিক থেকেও কিছু পেলাম না। এমনই পোড়া কপাল আমার। অথচ কত পোলাপান বাপ-মা মরার পর জমি পায়, টাকা পায়, বাড়ি পায়। আমি কিছুই পেলাম না! বাবা মা বেঁচে থাকতে থাকা, খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় নাই। এখন তাঁরা দুনিয়াতে নাই। এখন আমাকে বেগ পেতে হচ্ছে। তাদের উচিৎ ছিলো মরে যাওয়ার আগে আমার জন্য কোনো একটা ব্যবস্থা করে যাওয়া। এটা তাদের জন্য অসস্মভব ছিলো না। ইচ্ছা করেই তাঁরা আমাকে পথের ফকির করে রেখে গেছে। আমি তাদের ক্ষমা করবো না। এখন আমি পড়ছি ভয়াবহ বিপদে। শ্বশুর শালার পো কিছুই দেয় না। অথচ তার অনেক আছে।

এখন আমার মন মেজাজ অত্যাধিক খারাপ।
কারে ধরি, কারে গালি দেই বলা যায় না। আমার মা বাবা দুইজনের প্রতিই আমার অনেক রাগ। তাঁরা আমাকে দুনিয়াতে এনেছে। এখন মরে গেছে। তাদের কি উচিৎ ছিলো না মরার আগে আমার জন্য কিছু রেখে যাওয়া। তাঁরা যদি একটা পাঁচতলা বাড়ি রেখে যেত- মাস শেষে লাখ লাখ টাকা ভাড়া পেতাম। পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে জীবনযাপন করতে পারতাম। বাপ মার ভুলের কারনে ছেলে মেয়ের কষ্ট। এজন্য আমি আমার মা-বাপ কাউকে পছন্দ করি না। তাদের উপর আমার অনেক রাগ। এমন কি শ্বশুর শালার পোর উপরেও অনেক রাগ। তাদের আমি ক্ষমা করবো না। যাইহোক, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। দেখি সামনে কপালে কি আছে। যতদিন বেঁচে আছি, খেলে যেতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:২৪
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খালেদার ১টি প্ল্যান ছিলো, মহা-ডাকাতের ১টি প্ল্যান আছে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৩



২০১৪ সালের ভোটের আগে খালাদা বলেছিলো যে, তার কাছে ১টা প্ল্যান আছে, যা ১ বছরের মাঝে বেকার সমস্যা ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করে দিবে। তিনি প্ল্যানটি প্রকাশ করেননি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোর কথা তুই লিখে সত‍্যতা প্রমান কর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১



ব্লগ মনে হয় কারো কারো বাপ দাদার জমিদারি হয়ে গেছে। সব পোস্ট দালাল , রাজাকার, জঙ্গিদের অথবা লালবদরদের স্বপক্ষে হোতে হবে। সত‍্যের আগমনে মিথ্যা বিস্মৃতির অবসান হয় ।আদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×