প্রিয় কন্যা আমার-
অনেকদিন পর তোমাকে নিয়ে লিখছি। অথচ গত দশ দিন ধরে ভাবছি- তোমাকে নিয়ে লিখতে বসবো। মন মেজাজ ভালো নেই। টানা পাঁচ দিন তোমার জ্বর। ওষুধ খাওয়ার পর জ্বর কমে। আবার জ্বর বাড়তে থাকে। ডাক্তারেরে কাছে গেলাম। ডাক্তার বললেন, ভাইরাস জ্বর। ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তার কিছু নেই। ডাক্তার ভালো কথা বললেন, কিন্তু পাঁচটা টেস্ট দিলেন। সব গুলো রক্তের টেস্ট। এই টেস্ট করাতে গিয়ে তোমার খুব কষ্ট হয়েছে। তুমি খুব কান্না করেছো। ডাক্তার তোমার অনেক ররক্ত নিয়েছে। পাঁচ টা টিউবে রক্ত নিয়েছে। একবার ডান থেকে, একবার বাম হাত থেকে। কষ্টে বা ব্যথায় তুমি ছটফট করেছো। তোমার কষ্ট দেখার পর আমার ভীষন খারাপ লেগেছে। ছোট একটতা বাচ্চাকে ডাক্তার এই কষ্টটা না দিলেই পারতেন।
প্রিয় ফারাজা,
ডাক্তার তোমাকে টেস্ট গুলো না দিলেই পারতো। কেন দিলো কে জানে! টেস্ট করার পর দেখা গেলো কোনো সমস্যা নাই। এমন কি জ্বরও নেই। তাহলে এত গুলো টেস্ট কেন দিলো- একটা ২০ মাসের বাচ্চাকে? অনেক টাকা খরচ হয়েছে। টাকা গেছে যাক। সেটা কোনো সমস্যা না। কিন্তু রক্ত নেওয়ার সময় তোমার খুব কষ্ট হয়েছে। ডাক্তার অন্যায় করেছে। যেহেতু ভাইরাস জ্বর। তাহলে এত এত টেস্ট দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো না। যাইহোক, এখন তুমি ভালো আছো। সুস্থ আছো। আজ আট দিন ধরে তুমি তোমার নানা বাড়ি আছো। হয়তো আরো এক সপ্তাহ থাকবে। তোমার মামা মামী গেছেন চেন্নাই। বাসায় তোমার নানা আর ছোট মামা আছে। অবশ্য তাঁরা সারাদিন বাসায় থাকেন না। সকালে বের হয় রাতে ফিরে। গতকাল আমি মিরপুর গিয়ে তোমাকে দেখে আসছি। তোমাকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে বের হয়েছিলাম। আমার সাথে বাইয়ারে গেলে তুমি খুব খুশি হও।
প্রিয় কন্যা আমার-
তোমার বড় চাচা তোমার মাথার চুল ফেলে দিয়েছে। যদিও বর্ষাকাল চলছে। কিন্তু গ্রীষ্মকালের চেয়ে বেশি গরম। এজন্য তোমার বড় চাচা তোমার, রোহা'র আর শাবিবের চুল ফেলে দিয়েছে। তোমার বড় চাচা তোমাদের খুব ভালোবাসেন। আমার মনে হয় না- দুনিয়ার কোনো নাপিত কারো চুল এত আগ্রহ নিয়ে ফেলে। যাইহোক, তুমি এবং তোমার মা বাসায় না থাকলে আমার ভালো লাগে না। যদিও প্রতি দিনই অসংখ্যবার ভিডিও কলে কথা হচ্ছে। ফারাজা, তোমাকে যদি বলি, বাবাকে ভালোবাসো? তুমি বলো- ''হ্যাঁ বাসি'। 'বাসি' বলে একটা টান দাও। বাবাও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। অনেক। তোমার বিশ মাস বয়স চলছে। মোটামোটি তুমি অনেক কথা বলতে পারো। একদিন তোমার বিশ বছর হবে! তত দিন কি আমি বেঁচে থাকবো? হ্যাঁ অবশ্যই বেঁচে থাকবো। বেঁচে থাকা উচিৎ। বেঁচে থাকা দরকার।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম-
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমস্ত শিল্পকর্ম দিয়ে একটি কথাই যেন বলতে চেয়েছেন- জীবন সুন্দর। জীবন কিন্তু এমনি এমনি সুন্দর হয়ে যাবে না। জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে হয়। সাজাতে না পারলেই জীবন অসুন্দর হয়ে যায়। একদম ব্যাড়াছ্যাড়া অবস্থা হয়ে যায়। তোমার জীবন তুমি সুন্দর করে সাজাবে। অন্য কেউ এসে তোমার জীবন সাজিয়ে দিবে না। দেয় না। এরকম হয় না। তোমার ক্ষুধা পেলে, তোমাকেই খাবার নিয়ে খেতে হবে। কেউ তোমাকে খাইয়ে দিবে না। ভালো থাকা, নিজেকে ভালো রাখা- এটা তোমার দায়িত্ব। এবং এটা আমার স্বপ্ন। আমাদের স্বপ্ন অবশ্যই তুমি সত্যি করবে। এখানে আমি বা তোমার মা তোমাকে কিছু বলব না। তুমি যা করবে ভালো করবে- এই বিশ্বাসটুকু নিয়ে আমি থাকতে চাই। তুমি ভালো থাকলেই আমার ভালো থাকা হবে। আমি আনন্দ নিয়ে মরতে পারবো। মরার পরও ভালো থাকবো। কাজেই আমাকে ভালো রাখার জন্য তোমাকে ভালো থাকতে হবে। তুমি জীবনে সৎ থাকবে। সৎ কর্ম করবে। এবং আনন্দ নিয়ে জীবনযাপন করবে। বেঁচে থাকবে। এটা আমার হুকুম এবং দাবী।
প্রিয় কন্যা আমার-
প্রতিদিন দুবার লোডশেডিং হচ্ছে। গতকালের কথা। সন্ধ্যায় আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেলো। প্রচন্ড গরম। আমি বাইরে হাঁটতে বের হলাম। আমাদের এলাকায় হাঁটার কোনো জায়গা নেই। আমি পাশের এলাকায় হাঁটতে বের হয়েছি। সেই এলাকায় বিদ্যুৎ আছে। হঠাত শরীর এবং মন খুব খারাপ লাগছে। আমি হাতে পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছি না। খুব ঘামছি। ভীষন ক্লান্ত লাগছে। দেখি সামনে একটা মসজিদ। মসজিদে এসি আছে। ৪০/৫০ জন লোক নামাজ পড়ছে। এশার নামাজ। আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। ঠান্ডায় আমার শরীর ভরে গেলো। আরাম অনুভূত হলো। শরীরের ঘাম মুহুর্তেই শুকিয়ে গেলো! লোকজন নামাজ পড়ছে পড়ুক। আমি কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে নিই। মসজিদের এসি গুলো ভালো। দারুন ঠান্ডা হয়েছে। ছোট মসজিদ কিন্তু বড় বড় ৪টা এসি। আমি শুয়ে পড়লাম। আরামে আমার ঘুম এসে যাচ্ছিলো। হুজুর কে বলতে ইচ্ছা করলো- হুজুর একটা বালিশ দেন, আর একটা কোলবালিস। আরাম করে একটু ঘমাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:২৪