শ্রাবণ মাস। নদী, খাল-বিল একদম যৌবনে।
যেদিকে তাকাও শুধু পানি। বাস এবং নৌকায় আসতে হয়েছে। গ্রামের পরিবেশ আসলেই স্বস্তি দেয়। নাম না জানা কত ফুল ফুটে আছে। পুকুরঘাটের শ্যাওলার গন্ধ, এমনকি পাট পচা গন্ধও মন্দ লাগে না। উপভোগ্য।
বিল ভরতি কচুরিপানার ফুল দিয়ে।
দুটা মেটে সাপ এঁকেবেঁকে চলে যেতে দেখলাম। কি সুন্দর দৃশ্য! যাবো রসুলপুর গ্রামে। শুনেছি বনেদি গ্রাম। পুরো গ্রাম গাঢ় সবুজ। প্রতিটি বাড়িতেই নানান রকম ফলের গাছ আছে। হাস-মূরগী, গরু আছেই। আমি যার কাছে যাচ্ছি তার দুই শ' বিঘে জমি আছে। মস্ত বড় দীঘি আছে। দীঘি ভরতি সুস্বাদু মাছে।
রসুলপুর গ্রামের শেষ আছে একটা হিন্দু গ্রাম।
অতি দরিদ্র গ্রাম। এরা মাছ ধরে, জাল বুনে আর নৌকায় আলকাতরা লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এই গ্রামে দূর্গা পূজা হয় বেশ ধুমধাম করে। পুজার বেশির ভাগ খরচ দেয় রসুলপুর গ্রামের ধনী মুসলমানরা। দুটা গ্রাম বেশ উচুতে। বর্ষায় পানি উঠানে আসে না। তবে কোথাও যেতে হলে নৌকা ছাড়া উপায় নাই।
আমি কাদা মাখা পথে হেটে চলেছি।
প্যান্ট অনেক খানি গুটিয়ে নিয়েছি। খালি পা। হাতে ছাতা আছে শরীফ কোম্পানির ছাতা। একদল বাচ্চা আমাকে দেখে খুব হেসে নিলো! শহরের মানুষ পা টিপে টিপে হাটছে। আকাশে মেঘ আছে। বর্ষন শুরু হবে যেকোনো সময়। কাশফুল, শিউলি ফুল দেখা যাচ্ছে। ঝড় বৃষ্টির দিনে পাখি দেখা যায় না। এমনকি কাকও।
দুপাশে পাটক্ষেত। মাঝখানে মাটির সরু রাস্তা।
কাদায় পা গেথে যায়। পাট গাছের উপর অসংখ্য ফড়িং উড়ছে। সামনে ভয়াবহ বিপদ। বাঁশের সাঁকো। সাঁকো আমি পার হতে পারি না। একটা বাঁশের উপর দিয়ে হেটে যাওয়া! আমি শহরের মানুষ। গ্রামের অভিজ্ঞতা নেই। সাঁকোর নিচে স্বচ্ছ পানি। একঝাঁক পোনা মাছ আর একটা বড় শোল মাছ স্পষ্ট দেখা গেলো!
এক বাড়ির উঠানে বসলাম বিশ্রাম নিতে।
তারা আমাকে নারকেল মুড়ি খেতে দিলো। লাল চা দিলো। বাড়ির কর্তা দুপুরে খেয়ে যাওয়ার জন্য খুব করে বলল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:০৩