somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বের লিংক

লোকে বলে ঈশ্বরচন্দ্রের সাহস আছে বটে।
সে বিধবাদের আবার বিয়ে দেবার কথা বলে। লোকে আরো বলে, ঈশ্বরচন্দ্র নাস্তিক। অবশ্যই নাস্তিক। নাস্তিক না হলে কেউ বিধবাদের বিয়ের কথা বলে? তাছাড়া ঈশ্বরচন্দ্রকে কেউ কখনও মন্দিরে যেতে দেখেনি। এদিকে ঈশ্বর প্রায় এক হাজার লোকের সিগনেচার সংগ্রহ করেছেন যারা চায় বিধবাদের আবার বিয়ে হোক। এবং তিনি এত খাটাখাটনি করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অন্য দিকে ঈশ্বর চন্দ্রের বিপক্ষের লোকেরা প্রায় এক লাখ সাক্ষর সংগ্রহ করেছে যেন বিধবাদের বিয়ে না দেওয়া হয়। তাহলে ধর্মের ক্ষতি হবে। অনাচার হবে। প্রয়োজনে ঈশ্বরকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ধর্মের ক্ষতি করা যাবে না। ধর্ম মানুষের কোনো উপকার করতে না পারলে ক্ষতি করতে পারে অনেক। সব ধর্মেই মেয়েরা অবহেলিত রয়ে গেছে।

ইংরেজ সরকার বিধবাদের আবার বিয়ে'র বিল পাশ করে দিলো।
চারিদিকে সাড়া পড়ে গেলো। দুষ্টলোকেরা তাতে ভীষন অবাক। দুষ্টলোকেরা ভাবছে রামমোহন সাহেব 'স্বামীর চিতাতে স্ত্রীর মৃত্যু বন্ধ করে দিলো'। অর্থ্যাত মেয়েদের স্বর্গে যাবার পথ বন্ধ করে দিলো রামমোহন। রামমোহনের কারনে স্বামী মারা গেলে, একই চিতায় পুড়ে মরতে না পেরে স্ত্রীলোকেরা বিধবা হয়ে নরক জীবন পার করতো। সেটাই মূলত ধর্মের পথ। অথচ রামমোহন সাহেবও ধর্মের ক্ষতি করলেন। সেই পথ ধরলেন ঈশ্বরচন্দ্র। শিক্ষিত ব্রাহ্মণ সমাজ আজ হতবাক। কি হচ্ছে ভারতবর্ষে! এত অনাচার ভগবান কি সইবেন? ধর্ম বিরোধীদের থামানো যাচ্ছে না। দেখা যাবে যুগে যুগে রামমোহন, ঈশ্বরের মতো আরো বুদ্ধিহীন লোকজন আসবে। তাঁরা ধর্মের বারোটা বাজাবে। থামাতে হবে ঈশ্বরচন্দ্রকে। নারীরা থাকবে ঘরে। রান্না করবে, বাচ্চা পয়দা করবে।

প্রথম বিধবা বিবাহের আয়োজন সম্পূর্ন হয়ে গেলো।
ঈশ্বরচন্দ্র মহা খুশি। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি উঠে বসলেন। বিধবা কনের নাম- কালীমতি। বয়স- ১১ বছর। বরের নাম- শ্রীশচন্দ্র। কার্ড ছাপানো হলো। ২১ সে অগ্রাহায়ন, রবিবার। প্রায় দুই হাজার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গকে নিমন্ত্রন জানানো হলো। তাঁরা নিমন্ত্রন রক্ষা করলেন। খুব ধুমধাম করে বিয়ের কাজ সম্পূর্ন হয়ে গেলো। সারা কলকাতা জুড়ে একমাস শুধু এই বিধবা বিয়ের গল্প চললো। দুষ্ট লোকেরা এই বিয়েতে বাঁধা দেওয়ার নানান রকম চেষ্টা করেও সফল হতে পারলো না। কেউ কেউ বললো, ঈশ্বর কেন বিধবা বিয়ে করলো না? জুঠো খাবার খেতে ভালো লাগে না, তাই না? কেউ কেউ ঈশ্বরচন্দ্রকে ছিঃছিঃচন্দ্র নাম দিলো। এমনকি প্রথম বিধবা বিয়ের পাত্র শ্রীশচন্দ্রকে খুব প্রহার করা হয়েছিলো। তিনি মরতে মরতে বেঁচে গেছেন। যাইহোক, দেখতে দেখতে টানা পঞ্চাশটা বিধবা বিবাহ দিয়ে ফেললেন ঈশ্বর চন্দ্র। বিয়ের খরচের জন্য এগিয়ে এলেন সমাজের ধনী সম্পরদায়।

বিধবা বিয়ে দিতে গিয়ে ঈশ্বর চন্দ্র অনুভব করলেন-
বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে হবে। এবং কুসংস্কার দূর করতে হবে। এজন্য দরকার শিক্ষা। এবং নারী শিক্ষা। কিন্তু সেসময় নারী শিক্ষার জন্য স্কুল ছিলো না। ইংরেজ সরকারের সাথে বিদ্যাসাগর কথা বললেন। ইংরেজরা বলল- আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বরং আমরা চাই নারীরা শিক্ষা গ্রহন করুক। নারীরা শিক্ষিত হলেই দেশের উন্নতি সম্ভব। তুমি জেলায় জেলায় স্কুল চালু করো ঈশ্বর। আমরা অবশ্যই খরচ দিবো। ঈশ্বরচন্দ্র নারী শিক্ষার গুরুত্ব সাধারন মানুষদের বুঝাতে শুরু করলেন। নিজে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বই লিখতে শুরু করলেন। বাঁধা দিলো ব্রাহ্মণরা। ব্রাহ্মণ্যরা মনে করে তাদের জাত অনেক উন্নত। মেয়েরা ঘরর বাইরে গেলে জাত যাবে। এর মধ্যে ঈশ্বর বিধবাদের গয়া, কাশি না পাঠিয়ে বিয়ে দিচ্ছে। কিছু শিক্ষিত ব্রাহ্মণ বিদ্যাসাগরের উপর চটে গেলো। ঈশ্বর বলল, আমার উপর আমার বাবা মায়ের দোয়া আছে। আমার কোনো ক্ষতি হবে না। ঈশ্বর একবার তার মাকে দেখতে গিয়ে ঝড়ের রাতে দামোদার নদী সাতরে পার হয়ে গিয়েছিলো।

বিশ্বে একশো বছর পরপর মহামারী হয়।
ঠিক তেমনি বিশ্বে একশো বছর পর পর একজন মহামানবের জন্ম হয়। ভারত বর্ষের একজন মহামানব হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন- ন্যায়ের জন্য, নারী মুক্তির জন্য, নারীর কল্যাণের জন্য, নারী শিক্ষার জন্য, বিধবাদের পুনরায় বিবাহের জন্য। এবং তিনি সফল হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ ভারতবর্ষের সকল নারী স্বাধীন। তাঁরা লেখাপড়া করছে। চাকরী করছে। ঘরসংসার করছে। বহু দরিদ্র পরিবারের খরচ চালিয়েছেন বিদ্যাসাগর। বহু অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার খরচ চালিয়েছেন, দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার খরচ দিয়েছেন। নিজের টাকা খরচ করে বিধবাদের বিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য অনেক ধনী সম্প্রদায় ঈশ্বরের পাশে ছিলেন। এমন কি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে অর্থ সাহায্য করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র। নইলে মাইকেলকে কারাগারে যেতে হতো। কিন্তু বিদ্যাসাগর যখন নারী শিক্ষা ও বিধবাদের বিবাহ নিয়ে লড়াই করেছেন, তখন পাশে এসে দাড়ান নি মাইকেল।

(দ্বিতীয় পর্ব এখানেই সমাপ্ত।)

তথ্যসুত্রঃ
১। তৎকালীন বঙ্গ সমাজ- শিবনাথ শাস্ত্রী
২। কলিকাতার কথা- প্রমথনাথ মল্লিক
৩। বিদ্যাসাগর ও বাঙ্গালী সমাজ- বিনয় ঘোষ
৪। পিতাপুত্র- অক্ষয়চন্দ্র সরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×