আমার নামাজ পড়া হয় না।
নামাজ অনেকেই পড়েন না। কিন্তু যারা নামাজ পড়েন না, তাঁরা অন্তত জুম্মার নামাজ পড়েন। আমার সেটাও পড়া হয় না। কোনো না কোনো ব্যস্ততা জুম্মার দিনের নামাজের কথা ভুলিয়ে দেয়। নামাজ না পড়ার কারনে আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। শুক্রবার সবাই তাড়াহুড়া করে মসজিদে যায়। জায়নামাজ আর সুন্দর পাঞ্জাবী পড়ে। দেখতে ভাল লাগে। মসজিদে প্রচুর মানুষ হয়। মসজিদ ভরে যায়। শেষে রাস্তায় লোকজন নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যায়। যে করেই হোক জুম্মার নামাজ আদায় করতে হবে। জুম্মার নামাজটা মুসলিমদের জন্য একটা বিরাট কিছু। কেউ কেউ প্রথম কাতারে বসার জন্য ১১ টার আগেই মসজিদে চলে যান। সুবাহানাল্লাহ।
আমি নামাজ না পড়তে পারলেও-
জুম্মার নামাজের পর মসজিদের কছে যাই। একেকদিন একেক এলাকায় যাই। নামাজ শেষ হলে লোকজন মসজিদ থেকে বের হয়। ভ্যান গাড়িতে করে নানান রকম সবজি বিক্রি হচ্ছে, কেউ ফল বিক্রি করছে, কেউ আচার, কেউ ফুচকা, নানান রকম আতর, টুপি, কেউ কেউ মাছ বা মূরগী নিয়েও বসে যায়। আর সারিবদ্ধ ভাবে বসে থাকে ভিক্ষুক। শুক্রবার তাদের ভাল ইনকাম হয়। হকারদেরও ভাল বেচাকেনা হয়। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দেখি। আমার বড় ভাল লাগে। হুজুরের খুৎবা আমি মন দিয়ে শুনি। হুজুর একেক জুম্মাবারে একেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। কবরের আযাব থেকে বাঁচার জন্য সূরা মূলক পড়তে হবে। আল্লাহকে পেতে হলে আগে নবীজীকে পেতে হবে। স্ত্রীকে ভালোবাসতে হবে। হুজুরের আলোচনা হাদীস ছাড়া শেষ হয় না।
শুক্রবার হুজুদের ইনকামও বেশ ভাল হয়।
প্রতি ওক্তেই মিলাদ থাকেই। জুম্মার পরে মিলাদ হয়, আছর, মাগরিব বা এশার টাইমেও মিলাদ থাকেই। আমি নামাজ না পড়লেও মিলাদে অংশ নেই। মিলাদে অংশগ্রহন করলেও সোয়াব আছে। তাছাড়া একটা করে- মিষ্টি, ছানা, আমিত্তি, সিঙরা থাকে বাক্সে। হুজুরবা মিলাদ পড়িয়ে ৫ শ', এক হাজার টাকা পায়। তাছাড়া শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে মোনাজতের সময় হুজুর কে টাকা দিয়ে স্পেশাল দোয়া পড়াতে পারবেন। ধরুন, আপনার ছেলে বা মেয়ে পরীক্ষার্থী। হুজুর কিছু টাকা দিয়ে বলে দিবেন একটু দোয়া করে দিতে। হুজুর মোনাজাতের সময় কোনো এক ফাঁকে বলে দিবেন, এক ভাই তার মেয়ের জন্য পরীক্ষার জন্য দোয়া চেয়েছেন। আল্লাহ তাকে তুমি কামিয়াব করে দাও। তখন মুসুল্লিরা বলবেন আমিন। আমিন। কেউ অসুস্থ হলেও আপনি দোয়া করাতে পারবেন।
শুক্রবার হুজুরদের গন্যমান্য ব্যাক্তিদের বাড়িতে দাওয়াত থাকেই।
কারো বাবার মৃত্যু বাষির্কী, কারো মায়ের, কারো স্ত্রীর। অথবা কারো জন্ম বার্ষিকী। কেউ কোরআন নিয়েছে, কেউ কোরআন খতম করেছে। হুজুরদের দাওয়াত। হুজুর ছাড়া গতি নাই। তাঁরা চারটা ডাল ভাত খেয়ে যাবেন এবং দোয়া করে যাবেন। হুজুররা পেট ভোর খান। তারপর দোয়া করেন। এবং ফেরার সময় হুজুরদের হাতে কিছু টাকা গুজে দিতে হয়। এটাই নিয়ম। শুক্রবার হুজুররা একটু সাজগোজও করেন। আমাদের এলাকার হুজুর আচকান পড়েন এবং চোখে সুরমা দেন। কড়া গন্ধওলা আতর মাখেন। লোকজন যারা জুম্মার নামাজ পড়তে আসেন তাদের প্রত্যেকের সামনে দানবক্স রাখা হয়। সেই দানবাক্সে বেশির ভাগ লোকজন টাকা ফেলেন। নামাজ শেষে দেখা যায়- দান বাক্সে প্রায় এক লাখ টাকা হয়ে যায়। মাসে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা! এই টাকা দিয়ে কি হয় আমি জানি না।
শুক্রবার সবাই-ই সম্ভবত ভাল মন্দ খায়।
আমাদের বাসার কথা বলি। গত শুক্রবার আমাদের বাসায় রান্না হয়েছে হাঁস। হাঁসের মাংসটা খেতে অতি চমৎকার হয়েছে। সাথে খিচুড়ি। খিচুড়িতে ডালের পরিমান বেশি। হাঁস রান্না করেছে ভাবী। আর খিচুড়ি রান্না করেছে সুরভি। সাথে ছিলো কালিজিরা ভর্তা, আর বেগুন ভাঁজা। আমি বেশ আরাম করে খেলাম। বেশিই খেয়ে ফেললাম। খেয়ে বিছানায় পিঠ রাখলাম। হাতে রিমোট। টিভি দেখার আর সময় পেলাম না। ঘুমিয়ে গেলাম। সুন্দর ঘুম দিলাম। একদম সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠলাম। সুরভি একটা ভাল কাজ করেছে মোবাইলটা সরিয়ে রেখেছে। ঘুমের মধ্যে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমি একটা সাদা ঘোড়ার উপর বসে আছি। আমার হাতে চাবুক। দুষ্টদের শায়েস্তা করবো। প্রত্যেক দুষ্টলোকদের দুই ঘা করে লাগাবো।
ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো।
কোনো শুক্রবার আব্বা ঢাকার বাইরে থাকলে মা আমাকে এক শ' টাকা দিতো। আমি বাজারে যেতাম। ৮০ টাকা দিয়ে একটা দেশী মূরগী কিনতাম। হ্যাঁ ৮০ টাকা। মাত্র ৮০ টাকা। বড় দেশী মূরগী। সেই মূরগী মা রান্না করতো। কি যে মজা লাগতো পোলাউ দিয়ে খেতে। সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। এখন তো দেশী মূরগী পাওয়াই যায় না। পাওয়া গেলেও একটা মূরগীর দাম ৮০০ শ' টাকা। খেতে স্বাদও লাগে না। ফারাজার জন্য বাচ্চা দেশী মূরগী কিনি ৫ শ' টাকা দিয়ে। যাইহোক, ৮০ টাকা দিয়ে মূরগী আনার পর বিশ টাকা বেঁচে যেতো। সেই টাকা আমার। ২০ টাকা অনেক টাকা। একটা বাটারবন দুই টাকা। একটা পুরী পঞ্চাশ পয়সা। একটা মোগলাই পরটা ৮ টাকা। এক কাপ দুধ চা এক টাকা। আর এখন ফুটপাতের চা-ও দশ টাকা, পনের টাকা। যাইহোক, আপনারা যদি বেহেশতে যেতে চান নামাজ পড়ুন। নামাজ না পড়লে মৃত্যুর পর কপালে দুঃখ আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪২