
ছোটবেলার কথা। থাকি শহরে। সাঁতার জানি না।
একদিন আব্বা বললেন, বাংলাদেশে হলো নদীর দেশ। এই দেশে অনেক নদী। অথচ আমার ছেলে সাঁতার জানে না। মনে মনে ভাবলাম। এবার সাঁতার টা শিখে ফেলব। আব্বা খুশি হবে। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। স্কুল বন্ধ। পুরো ডিসেম্বর মাস হাতে আছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এবার সাঁতার শিখেই গ্রাম থেকে ফিরবো। সাঁতার না জানার কারনে আব্বা আম্মা আমাকে নদী পথে কোথাও যেতে দেয় না। বই পড়ে সাঁতার শেখা যায় না, এটা আমি জানি। সাঁতার শেখার জন্য পানিতে নামতে হবে- এতটুকু আমি বুঝি। সাঁতার শেখা খুব কঠিন কিছু না।
গ্রামে গেলাম। আমাদের নিজেদের একটা পুকুর আছে।
গ্রামের অনেক পোলাপান এই পুকুরে এসে দাপাদাপি করে। সাঁতার কেটে ছোট ছোট পোলাপান পুকুরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় চলে যায়। আমি দূর থেকে তাকিয়ে দেখি। বড় ভালো লাগে। তবে আমার ধারনা আমাদের পুকুরে একটা মস্ত বড় সাপ আছে। একবার আমি নিজের চোখেই দেখেছি- বড় একটা সাপ একেবেকে পুকুরে নেমে যাচ্ছে। আমি ভাই সাপ খুব বেশী ভয় পাই। কাজেই পুকুরে সাঁতার শেখাটা সঠিক কাজ হবে না। যদি সাপটা আমাকে কামড়ে দেয়। একমাত্র সাপের ভয়ের কারনে আমার গ্রামে আসতে ইচ্ছা করে না।
আমি স্নান করি ছোট গোছল খানায়। কল ছাড়লেই বড় বালতি ভরে যায়।
সাবান মাখি, চুলে শ্যাম্পু দেই। পাঁচ ছয় মিনিটে গোছল শেষ। গ্রামে গিয়ে মনে হলো- পুকুরে সাঁতার শিখবো না। পুকুরের পানিতে অনেক লোক গোছল করে। বউ ঝি'রা হাড়ি পাতিল ধোয়। তাছাড়া একটা বড় সাপ তো আমি নিজের চোখেই দেখেছি। আমাকে সাঁতার শিখতে হবে নদীতে। আমার বন্ধু রবিন সে নদীতে সাঁতার শিখেছে। রবিন মিথ্যাবাদী। ওর কথা বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। হয়তো সে সাঁতার জানেই না। অথচ বলে সে সাঁতার কাটতে পারে। সত্যজিতের 'সোনার কেল্লা' বইটা রবিন আমার কাছ থেকে চুরী করেছে। ও মনে করেছে- সেটা আমি জানি না।
আমাদের বাড়ি থেকে ১৫ মিনিট হেঁটে গেলেই পদ্মানদী।
আমি একটা গামছা কাঁধে নিয়ে হাঁটা দিলাম। বিশাল নদী। দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। নদীতে কেউ গোছল করছে। কেউ কাপড় ধুয়ে নিচ্ছে। একজনকে দেখলাম গরুকে গোছল করিয়ে দিচ্ছে। আমি শার্ট প্যান্ট খুলে গামছা পড়ে নিলাম। ভয়ে ভয়ে নদীতে নামলাম। ঠান্ডা পানি। বুক পর্যন্ত পানিতে নামলাম। এবং ডুবে গেলাম। নদীর পানি মুখ দিয়ে পেটে ঢুকে গেলো। কেউ একজন আমাকে টেনে তুললো। গামছা পরা ছিলাম, সেই গামছা কোথায় হারিয়ে গেলো আমি জানি না। ন্যাংটা অবস্থায় আমাকে বাড়ি নিয়ে আশা হলো। আমার নুনু নিশ্চয়ই সকলে দেখে ফেলেছে!
আমাকে কোলে করে বাড়িতে দিয়ে গেলো।
দাদী খুবই রাগ করলো। বলল, গাধা পুলা। আমাকে বললেই তো আমি সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করে দেই। তোকে কে বলেছে নদীতে নামতে। আব্বা দাদীকে বলল, আমার ছেলেকে গাধা বলবা না। যাইহোক, পরের দিন ঠিক করলাম পুকুরেই সাঁতার শিখে নেবো। হাটু পর্যন্ত পুকুরে নামলাম। দেখি আমার পা ঢেবে যাচ্ছে। পুকুরের মাটি নরম। আমি কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। ডুবে গেলাম। পুকুরের পানি দিয়ে পেট ফুলে গেলো। এক মেয়েকে আমাকে টেনে তুললো। মেয়েটা সুন্দর। ঢাকা ফিরে এলাম। সাঁতার শেখা আর হলো না। আসলে এক জীবনে মানুষ সব শিখতে পারে না। ভাগ্য বলেও একটা কথা আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



