আমার ডাক্তার বন্ধু বলেছিলো-
তুই মারা যাবি আত্মহত্যা করে। বন্ধুর কথা শুনে আমি অবাক! আমি আমার মনূষ্য জীবনকে ভালোবাসি। আত্মহত্যা করা টাইপ লোক আমি না। বরং যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের আমার নির্বোধ বলে মনে হয়। বন্ধু খুব ভাব নিয়ে বলল, আমরা ডাক্তার। আমরা অনেক কিছুই বুঝি। রোগীর চোখ মুখ দেখে অনেক কিছু বলে দিতে পারি। মনে মনে বন্ধুকে বললাম, ছাগল কোথাকার! আমি সুন্দর জীবনযাপন করি। মদ্যপান করি না। আবার রবীন্দ্রনাথের মতো চিরতার পানিও পান করি না। কোনো পার্টিতে গেলে মদ খেয়ে বেসামাল হয়ে পড়ি না। মেয়েদের কোমর ধরে নাচি না। তার মানে এই না যে মেয়েদের প্রতি আমার কোনো আকর্ষন নেই। মেয়েদের আমি ভালোবাসি। তবে সব মেয়েদের নয়। বেছে বেছে সুন্দর মেয়েদের। তার মানে এই না যে আমি মেয়েদের উপর জোরজবরদস্তি করি।
আমি একাএকা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি।
যখন শহরের থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে আমি ছূটে চলে যাই দূরে কোথাও। আমার প্রথম পছন্দ পাহাড় আর সমুদ্র। আমি সেখানেই যাই। কিছুদিন একাএকা থাকি, তারপর আবার শহরে ফিরে আসি। মানুষ যেখানেই যাক, তাকে গন্তব্যে ফিরে আসতে হয়'ই। সে যাক গে, আমি যেখানে যাই- একটা উঁচু টিলার উপর কাঠের বাড়ি। বড় বড় দুটা রুম। পরিস্কার বাথরুম। বারান্দায় দাঁড়ালে দূরে সমুদ্র দেখা যায়। দিনে রাতে সব সময় শীতল বাতাস। চারপাশ বেশ নিরিবিলি। অনেক রকমের গাছপালা। গাছে নাম না জানা অনেক পাখি। সুন্দর নির্জন অতি মনোরম পরিবেশ। কোলাহল মুক্ত। এরকম পরিবেশ আমাকে আনন্দ দেয়, শান্তি দেয়। হায়াত বাড়িয়ে দেয়। এই রিসোর্টে একজন কেয়ারটেকার আছেন। সে সকালে এসে খোজ নিয়ে যায় কিছু লাগবে কিনা। আমার কিছু লাগবে না। যা যা লাগবে সব শহর থেকেই নিয়ে এসেছি। সারা জীবন এরকম একটা পরিবেশে থাকতে পারলে বেশ হতো।
সুন্দর, বড় মায়াময় এক বিকাল।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে ভাব এসেছে। হয়তো মহৎ কোনো উপন্যাস লিখে ফেলতে পারবো। উপন্যাস লেখা হলো না, দেখলাম এক মেয়ে আমার টিলার দিকে এগিয়ে আসছে। সুন্দর একটা শাড়ি পরা। মাথা ভরতি চুল। খুব নরম ভাবে হাঁটছে। যেন মাটি কষ্ট না পায়। মেয়েটা ইশারায় টিলার উপর আসার অনুমতি চাইলো। আমিও ইশারায় আসতে বললাম। আমি বেশ অবাক হলাম এমন নির্জনায় একটা জায়গায়, একটা মেয়ে হঠাত আমার কাছে কেন? কি চায় সে? মেয়েটাকে কাছ থেকে দেখে বেশি ভালো লাগলো। বয়স কত আর হবে? বড়জোর একুশ। আচ্ছা, যান তেইশ। আমি আর বাড়াতে পারবো না। সহজ সরল একটা মেয়ে। চোখে কাজল নেই। ঠোঁটে লিপস্টিক নেই। শহরে আজকাল কাজল আর লিপস্টিক ছাড়া মেয়ে চোখেই পড়ে না। শহর থেকে অনেক দূরে বলেই কি মেয়েটা কাজল দেয়নি, লিপস্টিক দেয়নি! তবুও তো মেয়েটাকে বেশ লাগছে। এই মেয়েটা যেন রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে উঠে এসেছে। তার নাম লাবন্য।
মেয়েটা বলল, আপনি বেশ কিছুদিন ধরে এখানে এসেছেন-
সেটা আমরা জানি। আগামীকাল আমাদের আশ্রমে একটা অনুষ্ঠান আছে। আপনাকে দাওয়াত করতে এলাম। আমি ভাবলাম মেয়েটা বুঝি আমার কাছে চাঁদা চাইতে এসেছে। কিন্তু না। সে বলল, সন্ধ্যায় আশ্রমে সাধু সদানন্দ কথা বলবেন তার ভক্তদের উদ্দেশ্যে। এবং রাত্রে আপনি আমাদের আশ্রমে ডিনার করবেন। আমি কোনো রকম ভনিতা না করেই বলে দিলাম- আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বর আমি এসবে বিশ্বাস করি না। আশ্রম মানেই তো সেখানে কোনো না কোনো ঈশ্বরের আরাধনা করা হবে। এসব আমি পছন্দ করি না। যে জিনিস নাই তাকে নিয়ে কিসের আরাধনা? মেয়েটা বলল, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ঈশ্বর বিশ্বাস করেন। তার মানে অবশ্যই ঈশ্বর আছেন। আপনাদের মহাজ্ঞানী আইনস্টাইন সাহবেও কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাস করতেন। তাছাড়া আপনি প্রভুকে বিশ্বাস না করলেও আমাদের আশ্রমে আসতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, এই যে প্রকৃতির এত বিচিত্র সৃষ্টি, কি সুন্দর সব কিছু নিয়ম মেনে চলছে, এটাই ঈশ্বর। এর বাইরে আকাশে ঈশ্বর খোজার দরকার নেই।
ছাত্রাবস্থায় আমি পীর সাহেবের গলিতে পড়তে যেতাম।
সেখানে আমার সাথে এক মেয়ে পড়তো। সেই মেয়েটাকে একদিন চুমু খেয়েছিলাম। প্রায় জোর করেই। সেটাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম চুমু খাওয়া। আজ আশ্রম থেকে আসা এই মেয়েটাকে চুমু খেতে ইচ্ছা করছে। আমি লাবন্যকে শক্ত করে ধরে ঠোঁটে চুমু খেয়ে নিলাম। দশ সেকেন্ড তো হবেই। লাবন্য আজ বেগুনের তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছে। চুমু খেয়ে লাবন্য কান্না করছে। আর বলছে এটা আপনি কি করলেন? ছিঃ এটা আপনি কি করলেন? প্রভু আপনাকে শাস্তি না দিক। আমি প্রার্থনা করবো। আপনার জন্য আমি প্রার্থনা করবো। আমি বললাম, তোমাদের প্রভু টভু আমি বিশ্বাস করি না। তোমাকে চুমু দিয়েছি, প্রভুকে বলো আমাকে শাস্তি দিতে। শোনো বোকা মেয়ে, সারা পৃথিবীতে প্রতিটা মুহুর্তে যা ঘটছে এতে প্রভুর কোনো হাত নেই। কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছে, কোথাও নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে, কোথাও কেউ গাড়ি চাপা পড়ছে ইত্যাদি কোনো ঘটনায় ঈশ্বরের হাত নেই।
আমি বললাম, তুমি চাইলে চিৎকার করতে পারো।
লোকজড়ো করতে পারো। আমি তোমার অনুমতি না নিয়েই তোমাকে চুমু দিয়েছি। শোনো, লাবন্য তুমি কেন এরকম দুর্গম এলাকায় একটা আশ্রমে পড়ে থাকবে? তুমি কত সুন্দর। সহজ সরল। তুমি আমার সাথে শহরে চলো। আমি তোমাকে বিয়ে করবো। রানীর মতো থাকবে আমার সাথে। তুমি একটা উন্নত জীবন যাবে। বাকিটা জীবন সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবে। আশ্রমে থেকে নিজেকে বিনাশ করো না। আমি তোমার কোনো অতীত জানতে চাই না। লাবন্য কাঁদছে। আমি আবার তাকে চুমু খেলাম। দশ সেকেন্ড। বেগুন নয় সে শিং মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছে। লাবন্য আবারও মেয়েলি আচরন শুরু করলো। বলল- এ আপনি কি করলেন? বড় পাপ হয়ে গেলো! আমি আপনার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবো। শোনো লাবন্য আমি মেয়েদের কাছে যাই না। মেয়েরাই আমার কাছে আসে। আমি চাইলে শহর থেকে এখানে দুটো মেয়ে নিয়ে আসতে পারতাম।