somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমার নানা নানীর প্রেম কাহিনী

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উপরের ছবিটা ভালো করে দেখুন।
এটা একটা ভারতীয় নায়িকার ছবি। নায়িকার নাম- মধুবালা। এখন তিনি বেঁচে নেই। মধুবালা কি সুন্দর দেখেছেন? একদম সহজ সরল সুন্দর। কেমন স্বচ্ছ ও পবিত্র মুখখানি! মধুবালা অসংখ্য মানুষের প্রিয় নায়িকা ছিলেন। এযুগের ক্যাটরিনা বা দীপিকা মধুবালার কাছে কিছুই না। কথাটা ভুল বললাম, আসলে প্রতিটা মেয়েই সুন্দর। একেকজন একেক রকম সুন্দর। যেমন কারো আকছে পাহাড় ভালো লাগে, কারো কাছে সমুদ্র। পাহাড়-সমুদ্র দুটাই সুন্দর। ঠিক তেমনি কারো কাছে মধুবালাকে ভালো লাগে, কারো কাছে ক্যাটরিনা। যাইহোক, আমি এসব আলোচনা এখন বাদ দেই। মূল লেখায় প্রবেশ করি। আমার আজকের লেখাটা আমার নানা নানীকে নিয়ে। নানা নানীরা একসময় তরুন-তরুনী ছিলেন।

আমার নানী দেখতে মধুবালার মতোন ছিলেন।
তখন তার বয়স ১৭ বছর। নানা নানী দুজনের বাড়ি বিক্রমপুর। তবে একই গ্রাম না। একজনের থানার নাম- লৌহজং, গ্রামের নাম রানী গাও, আরেকজনের থানার নাম- সিরাজদিখান। গ্রামের নাম নিমতলা। তবে একই অঞ্চলের হয়েও তাঁরা কেউ কাউকে চিনতেন না। নানা গেলেন কলকাতায় লেখাপড়া করতে। একদিন ছুটিতে নানা বিক্রমপুর ফিরে এলেন। পদ্মানদীতে চড় জেগেছে। সেই চড়ে বিরাট মেলা বসেছে। তখনকার দিনে মেলা মানেই নাগরদোলা। নানান রকম মজাদার খাবার। পুতুল নাচ। বাইস্কোপ। সার্কাস। মাটির তৈরি নানান রকম জিনিসপত্র। কাঁচের চুড়ি, আলতা ইত্যাদি। মেলা চলতো টানা সাত দিন। পুরো বিক্রমপুরের মানুষ এই মেলাতে আসতো।

মেলাতে গিয়ে নানা নানী দুজনের দেখা।
প্রথম দেখা। নানা নানীকে দেখে মুগ্ধ! আমার নানা কোনো রকম ভনিতা না করে নানীকে বললেন, আমার নাম ওমর আলি। আমি কলকাতায় লেখাপড়া করছি। আমার গ্রামের নাম নিমতলা। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। নানী দেখলেন- ওমর আলী লোকটা উঁচা লম্বা। দেখতে সুন্দর। ভালো স্বাস্থ্য। হাসিটা সুন্দর। মাথা ভরতি চুল। মেলা শেষ হওয়ার আগেই নানা নানীর বিয়ে হয়ে গেলো। আমার নানা কোনো যৌতুক নেননি। উলটা নানীর যতটুকু ওজন তাকে ততটুকু স্বর্ন দিয়ে বিয়ে করেন। সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিলো না। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে নৌকা ছাড়া উপায় ছিলো না। আমার নানা গ্রামের মানুষ। তিনি সাঁতার পারতেন। গাছে উঠতে পারতেন। নৌকা বাইতে পারতেন। চাষবাস পারতেন। নদী থেকে মাছ ধরতে পারতেন।

আড়িয়াল বিলের পাশ দিয়ে নৌকা যাচ্ছে।
নৌকায় আছেন আমার নানা নানী। তাদের বিয়ে হয়েছে একমাস হয়ে গেছে। নানা কলকাতায় যাবেন। তাই স্ত্রীকে তার মায়ের কাছে রেখে আসতে যাচ্ছেন। তখনও সন্ধ্যা হয়নি। নৌকা বাইছে আমার নানা ওমর আলি। চুন্ডি শাড়ি পড়ে বসে আছে আমার নানী সরলা বিবি। হঠাত ডাকাত আক্রমণ করলো। ডাকাতরা সব কেড়ে নিলো। সরলা বিবির গলার চেন, আংটি, নাকফুল, বাজু, বিছা, বালা ইত্যাদি সব নিয়ে গেলো। নানা শুধু দেখলেন। তার কিছু করার নেই। দুইজন ডাকাত তাকে ধরে রেখেছেন। এবং একজনের হাতে ধারালো ছুড়ি। নানা নানীকে বললেন, সব দিয়ে দাও। কোনো সমস্যা নেই। আমার অনেক আছে। নানী সমানে কেঁদে চলেছেন।

হঠাত ডাকাতদের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো।
তাঁরা সরলা বিবিকে সাথে করে নিয়ে যাবে। এবার নানা রেগে গেলেন। তার শরীরে দশ জনের শক্তি চলে এলো। নানা রেগেমেগে চার ডাকাত কে মেরে আধামরা করে ফেললেন। তিনজন ডাকাত কোনো রকমে পানিতে লাফ দিয়ে বাঁচল। এবং পালিয়ে গেলো। কিন্তু ডাকাত দলের সর্দার পালাতে পারলো না। নানা তাকে মেরে, আধমরা করে- পুলিশের কাছে দিয়ে দিলেন। যাইহোক, সেই ঘটনা থেকে সরলা বিবি বুঝতে পারলেন ওমর আলি তাকে কতটা ভালোবাসেন। নানা কলকাতায় গেলেন। কলকাতার নানার ভালো লাগে না। এদিকে আমার নানা নানীর বাবা মা অসুস্থ। আসামে তাদের বিরাট ব্যবসা। নানী চিঠি দিলেন নানাকে। নানা লেখাপড়া ছেড়ে ননীর কাছে চলে এলেন। নানী তার বাবা মায়ের ব্যবসায় মন দিলেন।

এবার শুধু হলো সরলা বিবি ও ওমর আলীর আসল জীবন।
নানী ব্যবসায় মন দিলেন। পিতলের থালা বাটি কলস ইত্যাদি তৈরি করা হতো। নানী আসামে গিয়ে ব্যবসা সামাল দিতে লাগলেন। ব্যবসা বাড়তে শুরু করলো। কাপডের ব্যবসা শুরু করলেন। হু হু করে টাকা আসতে শুরু করলো। নানা সারাদিন নানির সাথেই থাকতেন। তবে ব্যবসা একা নানীই দেখাশোনা করতেন। নানা যেখানেই যেতেন তার সাথে থাকতো রেডিও। ফুটবল খেলা নানান খুব পছন্দ। স্টেডিয়ামে টিকিট করে নানা খেলা দেখতেন। সময়টা তখন ১৯৬৫ সাল। ভারত সরকার আসাম থেকে মুসলিমদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন। চলমান ব্যবসা রেখে নানা নানী জীবন বাঁচিয়ে বিক্রমপুর ফিরে এলেন। তখন আমার মায়ের বয়স দশ মাস। আমার নানী বুদ্ধিমতি মহিলা ছিলেন। তিনি ঢাকায় কিছু জমি কিনলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×