somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একজন ইমাম সাহেবের মৃত্যু

২৩ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে।
রাস্তায় ধরা পরা চোর ছিনতাইকারীকে যেভাবে মারা হয়, ঠিক সেভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে। উত্তেজিত জনতা বড় কঠিন জিনিস। কেউ না খেয়ে থাকলে, কেউ চিকিৎসার অভাবে মরতে বসলে, কেউ ক্ষুধায় কষ্ট পেলে উত্তেজিত জনতা নড়াচড়া দেয় না। কিন্তু একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে উত্তেজিত জনতা দারুন ভূমিকা রাখে। যাকে মারা হচ্ছে তার বয়স পঁচিশ বছর। সে একজন ইমাম। যে গ্রামের লোকজন ইমামকে মারছে, সেই গ্রামের মসজিদের ইমাম সে। তার নাম শফিকুল ইসলাম। সহজ সরল একটা ছেলে। শফিক মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। তার সারা শরীরে রক্ত। তবু লোকজন তাকে মেরেই চলেছে। সে মৃত্যুর খুব কাছে চলে গেছে। এখন শফিকের কোনো ব্যথা বোধ হচ্ছে না। সে উত্তেজিত জনতাকে চোখে দেখতে পাচ্ছে না, সে দেখছে রাতের আকাশ। রহস্যময় আকাশ। যে আকাশে থেকে জোছনা এসে পড়ছে এই পৃথিবীতে।

গ্রামের নাম রয়না।
অতীব সুন্দর গ্রাম। গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী, অন্য পাশ দিয়ে গেছে চন্দনা নদী। আমি খেয়াল করে দেখেছি যে গ্রামের পাশ দিয়ে নদী বয়ে যায়, সে গ্রামের মানুষদের দুঃখ কষ্ট কম। এবং গ্রামের মানুষ গুলো ভালো হয়। মানবিক হয়। হৃদয়বান হয়। রয়না গ্রামের চেয়ারম্যান হচ্ছেন এজাজ উদ্দিন। উনি নিজের টাকায় একটা পাকা মসজিদ করেছেন। মসজিদের নাম রেখেছেন নিজের মায়ের নামে কিন্তু তার দুঃখ গ্রামের মানুষজন শুক্রবার ছাড়া প্রায় মসজিদে আসেই না। দিন দিন মানুষ আল্লাহ খোদার নাম ভুলেই যাচ্ছে। কি এক যন্ত্র এসেছে ইন্টারনেট। ফেসবুক, টিকটক আর ইউটিউবে ব্যস্ত পোলাপান। সারাক্ষণ চোখের সামনে মোবাইল ধরে থাকে। এজাজ উদ্দিন তার মসজিদের জন্য শহর থেকে একজন ইমাম এনেছেন। ইমামের নাম শফিকুল। অল্প বয়স। একদম চ্যাংড়া। ঢাকার বাগিচা মসজিদের মোয়াজ্জেম সাহেব তাকে পাঠিয়েছেন। শফিকুল নাকি অনেক জ্ঞানী মানুষ। খুব ভালো ছেলে।

ভনিতা বাদ দিয়ে, মূল গল্পে প্রবেশ করি।
শফিকুল কোরানে হাফেজ হলেও সে বাইবেল, ত্রিপিটক পর্যন্ত তার মুখস্ত। ফিজিক্স কেমিস্ট্রি সম্পর্কে তার জ্ঞান আছে। একবার গ্রামের এক কৃষক পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে তার কাছে আসে পানিপড়ার জন্য। শফিক হুজুর স্পষ্ট বলে দেয়, পানি পড়ায় কাজ হবে না। আপনি ডাক্তারের কাছে যান। আরেকবার গ্রামের এক স্ত্রীলোক তাবিজের জন্য তার চার বছরের ছেলেকে নিয়ে আসে, ছেলে বিছানায় প্রস্বাব করে দেয়। শফিক হুজুর বলে তাবিজ কোনো কাজের জিনিস নয়। তাবিজ দিয়ে দুনিয়ার কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ আসে শফিক হুজুরের কাছে। তার মেয়ের আগামীকাল বৃত্তি পরীক্ষা। হুজুর যেন একটু দোয়া করে দেয়। শফিক হুজুর স্পষ্ট বলে দেন, দোয়ায় কাজ হবে না। যদি আপনার কন্যা ভালো করে পড়ে এবং সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দেয় তাহলেই সে পাশ করবে। দোয়া দিয়ে তাকে পাশ বা ফেল করানো যাবে না।

শফিক হুজুরকে নিয়ে রয়না গ্রামের লোকজন কিছুটা হতাশ।
এ আবার কেমন হুজুর ফুঁ দেয় না, তাবিজ কবচে বিশ্বাস নেই, দোয়া করে না, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে বলে। গত শুক্রবার খুতবার সময় শফিক হুজুর বলেছেন, মাদ্রাসার চেয়ে স্কুলে পড়ানো ভালো। মাদ্রাসায় পড়ালে আপনার সন্তান হয়তো মসজিদে আযান দেওয়ার কাজ পাবে, অথবা মুসুল্লিদের নামাজ পড়াবে, মরা বাড়িতে গিয়ে কোরআন খতম দেবে কিন্তু স্কুল কলেজে পড়লে সে বড় চাকরী পাবে। দেশ এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে। তখন আর তাকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না। এই গ্রামের মানুষ একসময় সাবান শ্যাম্পু ব্যবহার করতো না। কিন্তু এখন করছে। একজন কৃষকের জমিতে সমস্যা হলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে নিতে পারছে। আজকের এই আধুনিক দুনিয়ার সমস্যা গুলোর সমাধান ধর্মীয় কিতাবে বা হাদিসে নেই। অর্থ্যাত মানুষকে পুরোনো ধ্যান ধারনা আগলে রাখলে হবে না। আধুনিক হতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

রাত দুটা। শফিক হুজুর পুকুর ঘাটে বসে আছেন।
তার হাতে একটা বই। বইয়ের নাম- 'দ্য গড ইকুয়েশন'। লেখক মিচিও কাকু। চমৎকার বই। কিন্তু বই পড়লেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। কত কিছু আছে জানার। অথচ জীবন কত ছোট। গত সপ্তাহে শফিক পড়েছে- 'প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস'। অত্যন্ত চমৎকার একটা বই। শফিক যত বই পড়ে নিজেকে তার তত মূর্খ বলে মনে হয়। এই মধ্যরাতে শফিক হুজুর বুকের গবীর থেকে অনুভব করতে পারছে- কোরআন হাদিসের বাইরেও অনেক মহৎ বই আছে, সেগুলো পড়তে হবে। নইলে অন্ধকারে থাকতে হবে। মানুষ অন্ধকারে থাকলে জাতি পেছনে পড়ে থাকবে। মাদ্রাসার বাচ্চারা এসব বই থেকে কেন বঞ্চিত হবে? তাদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা দরকার। কিছু একটা করতে হবে। মানুষকে বুঝাতে হবে। মানুষ আর কতকাল অন্ধকারে থাকবে, ভুলের মধ্যে থাকবে?

এদিকে গ্রামের লোকজন শফিককে নিয়ে কঠিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
শফিক তার কিছুই জানে না। তার হাতে একটা বই। বইয়ের নাম- 'দ্য থিওরি অব এভরিথিং'। লেখক- স্টিফেন হকিং। বইটি পড়লেই বুঝা যায়- হকিং সাহেব অনেক দরদ দিয়ে বইটি লিখেছেন। বইয়ে কোনো রুপকথার গল্প নেই। শফিক হুজুর নক্ষত্র খচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনে হয়- ফিজিক্সেই সব রহস্য লুকিয়ে আছে। অনেক পড়াশোনা করতে হবে। অনেক। ধর্মীয় বই পড়ে কোনো লাভ নেই। ধর্মীয় বই পড়া মানে সময়ের অপচয়। পুরো কোরআন তার মূখস্ত। সমস্ত হাদীস সে জানে- তাতে কি? তাতে কিছুই না। সে যদি একজন পদার্থবিদ হতে পারতো। তাহলে সে বিশ্বের জন্য কিছু করতে পারতো। একজন হুজুর হয়ে কিছুই করা সম্ভব না। এই পৃথিবীতে হুজুরদের কোনো দরকার নেই। দরকার আছে- আলবার্ট আইনস্টাইন, আইজাক নিউটন, গ্যালিলিও গ্যালিলেই, নিকোলা টেসলা, টমাস আলভা এডিসন ইত্যাদি মহান ব্যাক্তিদের।

(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল।)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:৪৫
১৬টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×