কারো কাছ থেকে আদর ভালোবাসা পায়ার জন্য-
সবার আগে আপনাকে যোগ্য ও দক্ষ হতে হবে। একজন সফল মানুষ হতে হবে। একজন ভালো মানুষ হতে হবে। হতে হবে একজন মানবিক ও হৃদয়বান। বাংলাদেশে 'জামাই আদর' বলে একটা কথা আছে। বিয়ের পর জামাই শ্বশুর বাড়িতে বেশ খাতির যত্ন পায়। আবার কিছু কিছু জামাই পায় ঝাড়ুর বারি। হয়তো জামাইটা ভালো না। লোভী, বদ, নেশাখোর। অথবা নির্বোধ। মেয়েটাকে অসুখী করে রেখেছে। কাজেই মন্দ জামাইরা শ্বশুর বাড়তে আদর বা খাতির যত্ন পায় না। শ্বশুর বাড়িতে আদর পেতে হলে- একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হতে হবে। এই সমাজে কেউ কাউকে এমনি এমনি খাতির যত্ন করে না। তা সে জমাই হোক বা না হোক। আসলে সব কিছু অর্জন করে নিতে হয়। আমাদের সমাজটা ভালো না। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিয়ম গুলো বদলানো দরকার।
আমার নিজের কথা বলি- আমি কোনো যৌতুক নেইনি।
এজন্য শ্বশুর বাড়িতে গেলে আমি বেশ খাতির যত্ন পাই। শ্বশুর বাড়িতে আমি পা দেওয়া মাত্র আমার শ্বশুর বাজারে ছুটেন। মাঝে মাঝে এমনও হয়- শ্বশুর মশাই মাত্র বাজার থেকে ফিরেছেন। তবু আমাকে দেখার পর আবার বাজারে যান। বলেন জামাই এসেছে। আবার নতুন করে বাজারে যেতে হবে। এমনকি আমার শ্বশুর মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে বলেন, একটা দেশী পাঙ্গাশ মাছ পেয়েছি। তুমি চলে এসো। আরেকদিন ফোন করে বলবেন, আজ দেশী কই মাছ পেয়েছি। বাসায় চলে এসো। যদি আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক নিতাম, তাহলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাকে ভালোবাসতো না। আদর করতো না। বেশির ভাগ ছেলেরা যৌতুক নিয়ে মস্ত এক ভুল করে ফেলে। যৌতুক একটা ভুল প্রথা। অন্যায়। ভীষন অন্যায়। ধারধেনা করে বড় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করাটা জাস্ট বেকুবি। আজকাল তো বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রচুর খরচ করা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনি যে জেলাতে বিয়ে করেন না কেন-
আপনি যদি একজন অসফল মানুষ হোন, তাহলে শ্বশুর বাড়ি কেন আপনি কোথাও আদর যত্ন পাবেন না। যারা বললেন, অমুক জেলায় বিয়ে করলে বেশী খাতির যত্ন পাওয়া যায়। আদর পাওয়া যায়, তাঁরা ১০০% ভুল বলেন। অযোগ্য অদক্ষ লোকের কোথাও খাতির যত্ন নাই। ভালোবাসা নাই। সমাদর নাই। কদর নাই। এমনকি নিজের বাড়িতে আদর পাবেন না। প্রতিষ্ঠিত, সফল, যোগ্য, দক্ষ লোকের খাতির সবখানে। কাজেই মানুষের কাছ থেকে আদর ভালোবাসা পেতে হলে, আগে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। আপনি হত দরিদ্র হলে নিজের স্ত্রীর কাছেও দাম পাবেন না। শ্বশুর বাড়ি তো দূরের কথা। যদি সত্যিকার জামাই আদর পেতে চান তাহলে নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। একজন সফল মানুষ হয়ে আপনি যে জেলাতেই বিয়ে করেন না কেন আদর, খাতির, যত্ন পাবেন। অসফল ব্যাক্তি হলে আপনার কোথাও খাতির নাই।
আমাদের অঞ্চলে একটা প্রবাদ আছে-
'জাতের মেয়ে কালো ভালো, নদীর পানি ঘোলা ভালো'। এজন্য একটা শিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। একটা ভালো বংশের মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। কালো হোক সমস্যা নাই। একটা ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। যে মেয়েটা সহজ সরল। জটিলতা কুটিলতা মুক্ত। রান্না জানে। সামাজিকতা জানে। ঘর সংসার সামলাতে জানে। আধুনিক এবং কুসংস্কার মুক্ত। হাসিখুশি প্রানবন্ত। যে ভালোবাসতে জানে। ছাড় দিতে জানে। বুদ্ধিমতি। টেকনোলজি ও আধুনিক বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারনা আছে। যে মেয়ের বাবা মা এবং ভাই বোনের রুচিবোধ আছে, শিক্ষা আছে। এরকম একটা পরিবারের মেয়ে বিয়ে করলে এবং আপনি যোগ্য ও দক্ষ হলে- জামাই আদর অবশ্যই পাবেন। ভালোবাসা পাবেন। কিন্তু কোনো কিছুই এমনি এমনি পাবেন না। সব আপনাকে অর্জন করে নিতে হবে। মোটকথা সব কিছু নির্ভর করছে আপনার উপর।
আমাদের এলাকায় এক ছেলে বিয়ে করেছে।
ছেলেটা ঘর জামাই থাকে। তারউপর কাজকাম কিছুই করে না। এই ছেলেটা শ্বশুরবাড়ি থেকে আদর, ভালোবাসা, সম্মান কিছুই পায় না। তাকে ভাঙ্গা কাঁপে চা খেতে দেওয়া হয়। ভাঙ্গা প্লেটে ভাত খেতে দেওয়া হয়। ঘর জামাই থাকার কারনে সুযোগ পেলেই তাকে নানান রকম অপমান সূচক কথা বলা হয়। ঘর জামাই থাকার অনেক যন্ত্রনা। স্ত্রী চাকরি করে। স্ত্রীর কাছ থেকে ঘর জামাই টাকা নেয়। বলে আমাদের ইসলাম ধর্মে নিয়ম আছে স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার। স্ত্রীর সম্পত্তি এক হিসেবে স্বামীর সম্পত্তি। আমাদের নবীজি অনেক দরিদ্র ছিলেন। বয়স্ক ধনী মহিলাকে বিয়ে করেছেন। তারপর স্ত্রীর কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিয়েছেন। একসময় ধর্মের দোহাই দিয়ে স্ত্রীকে ঘরে রেখেছেন। এবং স্ত্রীর ব্যবসা নিজের হাতে নিয়েছেন।