আমি কোনো বিশেষ দিন-তারিখ মনে রাখতে পারি না।
বিয়ের তারিখ, জন্ম তারিখ এমনকি মৃত্যু তারিখও আমার মনে থাকে না। সুরভির আবার এইসব দিন তারিখ সব মনে থাকে। সেই দিনকার সমস্ত ঘটনা সুরভি সব বলে দিতে পারে। আজ যে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী আমার একদম মনে ছিলো না। আজ রাতে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে গেছে। এক কাজে উত্তরা গিয়েছিলাম। সেখানে একটা মিষ্টির দোকান দেখলাম। কি মনে করে সব রকমের একটা করে মিষ্টি কিনে নিলাম। ছোট কন্যা ফারাজা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। যদিও আজ মিষ্টি কেনার কথা ছিলো না। ফারাজার জন্য আপেল কেনার কথা ছিলো। কন্যা আপেল খুব পছন্দ করে।
বিজয় স্মরনীর সিগনালে গাড়ি থামলো।
এক অল্প বয়সী মেয়ে খুব অনুনয় বিনয় করে বলল- স্যার ফুল নেন। টকটকে লাল গোলাপ। মেয়েটার কাছ থেকে কি মনে করে, ফুল কিনে নিলাম। সাধারণত আমি ফুল কিনি না। যাইহোক, বাসায় মিষ্টি ও ফুল নিয়ে ফিরলাম। সুরভি খুব খুশী। বলল, আমি জানতাম তোমার মনে আছে। কেন শুধু শুধু বলো তোমার কোনো বিশেষ দিন তারিখ মনে থাকে না! আমি মুখটা হাসি হাসি করে সুরভির দিকে তাকালাম। আর মনে করতে চেষ্টা করলাম আজ কয় তারিখ। আজ কি কোনো বিশেষ দিন? হুট করে মনে পড়লো আজ ২২ নভেম্বর। আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। মিষ্টি ও ফুল কিনে বড় বাঁচা বেঁচে গেছি!
ভাগ্যক্রমে আজ বেঁচে গেলাম।
আমি সব সময় এইভাবে বেঁচে যাই। কন্যা মিষ্টি খাওয়ায় ব্যস্ত। সুরভি ফুল হাতে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো- আজ আমার একটা শাড়ি কিনতে ইচ্ছে করছিলো সুরভির জন্য। হয়তো আমার অবচেতন মন আমাকে তাড়া দিচ্ছিলো। যাইহোক, এই মাত্র রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। খেতে বসে দেখি আজ সুরভি অনেক কিছু রান্না করেছে। একদম বিয়ে বাড়ির খাবার। ফারাজা এখনও ঘুমায়নি। সুরভি তার বোনের সাথে মোবাইলে কথা বলছে। এই ফাঁকে আমি লিখতে বসেছি। ইদানিং ফারাজা রাত তিনটার আগে ঘুমায় না। আমি কন্যাকে গল্প বলতে বলতে- ঘুমিয়ে যাই, সুরভি ঘুমিয়ে যায় কিন্তু কন্যা জেগে থাকে। আমি সকাল আট টায় ঘুম থেকে উঠি। ফারাজা ঘুম থেকে উঠে সকাল ১১ টায়। আজ একটা শাড়ি কেনা খুব দরকার ছিলো।
দশ বছর হয়ে গেলো বিয়ে করেছি।
আমরা বেশ ভালো আছি। আনন্দ নিয়ে আছি। আমরা ঝগড়া করি না। দুজন দুজকে বুঝি। বিয়ের দিনের কথা মনে পড়ছে। সুরভি আমার কথা তার বাবাকে জানালো। সুরভির বাবা বলল, ছেলে পত্রিকা অফিসে কাজ করে। দরকার নেই এই ছেলেকে বিয়ে করার। সুরভি আমাকে বলল, আমাকে ভুলে যাও। আমার ভীষন মন খারাপ। একদিন আব্বা বলল, কিরে মন খারাপ ক্যান? সুরভির বাবার কথা বললাম। আব্বা বলল, এটা কোনো ব্যাপার না। আমি সুরভির বাবার সাথে কথা বলব। আব্বা কথা বলল। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো। সুরভির বাবা আমার আব্বাকে বলল, আপনাকে দেখেছি, আপনার সাথে কথা বলেছি। ব্যস যথেষ্ঠ। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো। কিন্তু আমার সুপারম্যান বাবা করোনায় মারা গেলো।
আব্বা ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করে ফেলল।
বিয়ে হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে দশটা বছর পার করে ফেললাম! কত দ্রুত সময় চলে যায়! আমি কোনো দিনই সুরভির উপর স্বামীগিরি ফলাই নাই। ধর্মীয় বিধি নিষেধ আরোপ করি নাই। জোর করে বোরকা পরাই নাই। সুরভি যখন তার বাবার বাড়ি যায়, আমি নিজে গিয়ে তাকে দিয়ে আসি। আমরা দুজন শুধু স্বামী স্ত্রী নই। আমরা দুজন দুজনের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো জটিলতা নেই। স্বচ্ছ পবিত্র সম্পর্ক আমাদের। আমাদের সংসারটা সুরভি নিজের হাতে সাজিয়েছে। কি রান্না হবে, জানালার পর্দা কেমন হবে, বিছানার চাঁদর অথবা ব্যলকনিতে কত পাওয়ারের লাইট লাগবে সব সুরভির ডিপার্টমেন্ট। আমরা ভালো আছি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১:৪০